|
ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী
|
|
বিজেপির বিজয় : পরিবারতন্ত্রের বিদায়?
19 Jun, 2014
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে এবারে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। ৫৪৩ আসনের মধ্যে বিজেপি জোট ৩৪০ আসনে জয় পেয়েছে। অপরদিকে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস জোট পেয়েছে মাত্র ৫৮টি আসন। বিজেপি যে এই নির্বাচনে জিতবে তার আভাস আগেই পাওয়া গেছে জনমত জরিপে। কিন্তু ব্যবধান এতটা বিশাল হবে তা ছিল ধারণাতীত। ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মি. মোদি বলেছেন তিনি নিজেও ভাবেননি যে তার দল এত আসন পাবে। সংসদীয় গণতন্ত্রে ক্ষমতাসীন দলের ভূমিধস পরাজয় নতুন কিছু নয়। তবে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ভারতে কট্টর ‘হিন্দুত্ববাদী’ দলের এমন নিরঙ্কুশ বিজয় নানা দিক থেকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
বিজেপিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)’, যা লুকোছাপা নয়। যে সংস্থাটির লক্ষ্য ভারতকে একটি পরিপূর্ণ হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা। নরেন্দ্র মোদি নিজে আরএসএসের একজন বিঘোষিত নিষ্ঠাবান সদস্য। আরএসএসই তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করে এবং আরএসএসের সর্বাÍক সমর্থনের কারণেই দলের অন্য অনেক জ্যেষ্ঠ নেতার বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি দিল্লির মসনদে বসতে পেরেছেন। নির্বাচনের অব্যবহিত পরে আরএসএসের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন মোদি। সেই বৈঠকেই তার মন্ত্রিসভা ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক কথায়, এখন থেকে ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে আরএসএসের হাতেই।
নির্বাচনী অতিশয়োক্তি এবং বাস্তবতা
মি. মোদি ও তার সহকর্মীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলাদেশকে ইস্যু বানিয়ে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা বাংলাদেশের জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। তারা ঢালাও প্রচারণা চালিয়েছেন যে, এখন ভারতে ২ কোটি বাংলাদেশী অবৈধভাবে বসবাস করছে। বিজেপির অন্যতম নীতিনির্ধারক মি. সুব্রামানিয়াম আসামে এক নির্বাচনী সভায় বলেছেন, তাদের দল জয়ী হলে তারা খুলনা থেকে সিলেট সরলরেখা টেনে তার দক্ষিণের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা দখলে নেবেন এবং কথিত ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’দের সেখানে পুনর্বাসিত করবেন।
অপরদিকে মি. মোদি পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘বিহার থেকে কেউ পশ্চিমবঙ্গে গেলে বলা হয় বহিরাগত, উড়িষ্যা থেকে গেলেও বহিরাগত। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কেউ এলে তাদের জন্য লাল কার্পেট।’ তিনি এসব ‘বাংলাদেশী’কে বাক্স-পেটরা বেঁধে নিতে বলেছিলেন এবং ১৬ মে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তাদের গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
‘দুই কোটি’ বাংলাদেশী অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছে এবং সেখানে ভোটার হয়ে ভোটের হিসাব পাল্টে দিচ্ছে, এই অভিযোগের ভিত্তি কী? এ পরিসংখ্যান নিতান্তই অসার। তবে এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের প্রতি বিজেপির যে বিরূপ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, তা দুশ্চিন্তার বিষয়।
অনেক পর্যবেক্ষক বিজেপি নেতাদের এসব বক্তব্যকে নির্বাচনী বাগাড়ম্বর হিসেবে দেখেছেন। তারা মনে করছেন, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য নানা হিসাব-নিকাশ কষে বিশেষ বিশেষ জনগোষ্ঠীকে খুশি করার জন্য এমন সব কথা বলা হয়েছে; নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বিজেপিকে অনেক ভেবেচিন্তে পা ফেলতে হবে। তারা মনে করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিদ্যমান সম্পর্কে তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। আমরাও সেটাই আশা করেছি।
সরকার গঠনের পর কয়েকদিন চুপ থাকলেও এ ব্যাপারে বিজেপির নেতারা ধীরে ধীরে মুখ খুলছেন। তারা এখন স্বীকার করছেন যে, ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ চিহ্নিত করার কাজটি খুব সহজ হবে না। অনুপ্রবেশকারী বলতে কী বোঝায় সেটাই তো স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া বাঙালি হিন্দুরাও কি অনুপ্রবেশকারী? ’৪৭-এর বাংলা বিভাগের কারণে যারা সেখানে গেছেন, তাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলতে গেলে তো প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যাবে। বিজেপি সেই ঝুঁকি নিতে পারে না।
স্পষ্টতই বিজেপির টার্গেট ‘বাঙালি মুসলমান’। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে ও আসামে মুসলমান জনসংখ্যা নির্বাচনী রাজনীতিতে নিয়ামক শক্তি হওয়ায় কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা এ দুই রাজ্যে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এই মুসলমানদের বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বলা হবে কেন? ১৯৪৭-এর পর এপার থেকে কোনো মুসলমান ওপারে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে, তেমন বক্তব্যের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। উল্টো ওপার থেকে এপারে আসা মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৫০ লাখের বেশি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর হামলার মুখে যে ৯০ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়ে ওপারে যায়, তাদের অধিকাংশই ছিল হিন্দু। তাদের একটা অংশ নানা কারণে সেখানে থেকে গেছে। কিন্তু মুসলমান শরণার্থীরা প্রথম সুযোগে দেশে ফিরে এসেছে। অতএব বাঙালি মুসলমানরা দলে দলে বাংলাদেশ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে সেখানে স্থায়ীভাবে থাকছে, এ বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কর্মপ্রত্যাশী মানুষ সব সময়ই সীমান্তের এপার-ওপার করে। তাদের সংখ্যা বিশাল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তেমন লোকদের শনাক্ত করা মোটেই কঠিন কাজ হবে না। দু-চারজন ভাসমান ভবঘুরে বা অতি দরিদ্র দিনমজুর অবশ্যই পাওয়া যাবে। তাদের কোমরে দড়ি বেঁধে সীমান্তের এপারে ঠেলে দেয়া যেতে পারে। তা হবে পর্বতের মূষিক প্রসব এবং তাতে ভারতের অর্থনীতি কিছু সস্তা শ্রম থেকে বঞ্চিত হবে মাত্র। আমাদের তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
এর আগেও একটি নিবন্ধে লিখেছি, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যদি অবৈধভাবে ভারতে যায়, তাকে বের করে দেয়ার পূর্ণ অধিকার ভারতের আছে। এক্ষেত্রে আমাদের বলার কিছুই থাকে না। তবে দুনিয়ার সব দেশেই এ ধরনের অভিবাসী নিয়ে সমস্যা হয়ে থাকে। ভারতেরও বহু খেটে খাওয়া মানুষ দুনিয়ার নানা দেশে অবৈধভাবে প্রতিনিয়ত প্রবেশ করে থাকে। ধরা পড়লে বহিষ্কৃত হয়। এ বিষয়টি জাতিসংঘের নজরদারিতেও আছে। নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষ, কেবল জীবন ও জীবিকার তাড়নায় যারা দেশান্তরী হয়, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার এবং তাদের প্রতি মানবিক আচরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ কিছু নীতিমালাও স্থির করে দিয়েছে।
সব শেষে দেখা যাচ্ছে, এই অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে বিজেপির হাঁকডাক এখন আসাম রাজ্যেই সীমাবদ্ধ। আসামে মুসলমানের সংখ্যা সরকারি হিসাবেই ৩১ শতাংশের বেশি। ৩১ শতাংশ জনসংখ্যাকে ‘সংখ্যালঘু’ বলা যায় না। ভোটের বাক্সে যার প্রতিফলন বিজেপির জন্য সুখকর নয়। অনেকটা একই অবস্থায় আসামের ‘বাঙালি’দের নিয়েও। (ভাষা বিচারে অসমীয়া ও বাংলা এত কাছাকাছি যে অসমীয়াকে বাংলার অন্যান্য প্রান্তিক রূপ, যেমন- চট্টগ্রামী, সিলেটি, বরিশালী, নোয়াখাইলা ইত্যাদির সমপর্যায়ে রাখেন অনেকে। যদিও অসমীয়ারা এই বিচার মোটেই পছন্দ করেন না)।
আসামের মুসলমানদের মধ্যেও অনেকে আছেন যারা জাতিগতভাবে বাঙালি নন, অসমীয়া। এখন আবার সেখানকার পাহাড়ি-আদিবাসীরাও নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্যের দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠছেন। সব মিলিয়ে আসামে ভাষা, ধর্ম বা নৃতাত্ত্বিক পরিচয় কোনো বিচারেই কারও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।
তেমনি এক পরিস্থিতিতে সব আক্রোশ গিয়ে পড়ে বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপর। আসামে যখন ‘বাংগাল খেদাও’ আন্দোলন হয়েছে, তার ধকলও তাদেরই সইতে হয়েছে। এবারের কথিত ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ খেদানোর অভিযানেও টার্গেট সেখানকার বাংলাভাষী মুসলমান।
আসামে বাংলাভাষী মুসলমানদের বসতির ইতিহাস অতি প্রাচীন। প্রতিবেশী অঞ্চল হিসেবে বাংলা ও আসামের জনজীবনের মিথষ্ক্রিয়া ঘটেছে নানাভাবে সূদূর অতীতকাল থেকেই। দুই অঞ্চলের জনগণের মধ্যে আদান-প্রদান ও যাতায়াত চলে এসেছে বাধাহীনভাবে। স্বাভাবিকভাবেই জনবহুল ও তুলনামূলকভাবে প্রাগ্রসর বাংলা অঞ্চলের মানুষ চারদিকে ছড়িয়েছে বেশি। ব্রিটিশ শাসনে সমগ্র আসাম (সেভেন সিস্টার্স) সুদীর্ঘকাল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ছিল। ১৯০৫ সালে প্রাদেশিক পুনর্বিন্যাসে সেই বিশাল প্রদেশ দুই ভাগ হয়ে একদিকে গঠিত হয় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে ‘বংগ প্রদেশ’, রাজধানী কলকাতা; অপরদিকে ‘পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশ’, রাজধানী ঢাকা। এই বিভাজন কলকাতার এলিট শ্রেণী মেনে নেয়নি। তাদের নিরন্তর চাপ ও আন্দোলনের মুখে ১৯১২ সালে মাত্র সাত বছরের মাথায় নবগঠিত ‘পূর্ব বাংলা ও আসাম পৃথক’ বিলুপ্ত হয়। উড়িষ্যা, বিহার ও আসাম আলাদা প্রদেশ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব বাংলা নিয়ে গঠিত হয় ক্ষুদ্রাকার বংগ প্রদেশ। বাংলাভাষী সিলেট জেলা থাকে আসামের অন্তর্গত।
বলা বাহুল্য, এসব ভাঙা-গড়ার সবই ছিল ইংরেজের ঔপনিবেশিক স্বার্থের আলোকে প্রশাসনিক বিভাজন। এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে যাতায়াত বা বসতি স্থানান্তরে কোনো বাধা ছিল না। বরঞ্চ তা উৎসাহিত হয়েছে। আসামের জনবিরল ও প্রায় জনহীন অঞ্চলগুলোতে নানাদিক থেকে মানুষ এসেছে। বাংলা অঞ্চল থেকে বেশি গেছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, আসামের শাসকরা এবং জনগণ বরাবরই বাংলার কৃষকদের সেখানে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ বাংলা অঞ্চলের দক্ষ ও পরিশ্রমী কৃষকরা মনুষ্যবাসের অযোগ্য বিরান জলাভূমি ও দুর্গম বনাঞ্চল আবাদ ও বাসযোগ্য করে আসামকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। অতীতের আসামের প্রশাসক ও লেখক-বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্যে এর স্বীকৃতি পাওয়া যায়। কাজেই আজকের আসামে বাঙালি বা মুসলমান জনগোষ্ঠীকে বহিরাগত বা অনুপ্রবেশকারী বলা চরম হঠকারিতা ও জাতিবিদ্বেষের পরিচায়ক। সেখানেও দু-চারজন ভাসমান ভাগ্যান্বেষী ছাড়া অন্যদের ‘বহিরাগত’ আখ্যা দিয়ে বিতাড়ন করার কোনো যৌক্তিক বা আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই।
আশির দশকে আসামে কথিত ‘বাংগাল খেদাও’ আন্দোলনের মুখে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছিল অবৈধ অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার জন্য। দীর্ঘদিন খোঁজাখুঁজির পর খেদানোর উপযোগী ‘বাংগাল’ সমগ্র আসামে চিহ্নিত হয় মাত্র কয়েক ডজন। সেই পরিস্থিতিই এখনও বিরাজ করছে। এই মানুষগুলো সেখানকার নাগরিক হয়েছে বৈধ পন্থায়, ইতিহাসের ধারাবাহিকতায়। তাদের ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে বিদায় দেয়ার হুমকিও শেষ পর্যন্ত নিরর্থক হবে।
পরিবারতন্ত্রের বিদায়?
ভারতের এবারকার নির্বাচনের সবচেয়ে তাৎপর্যময় দিক হচ্ছে ‘পরিবারতন্ত্রে’র অপ্রতিহত প্রভাব থেকে ভারতের জাতীয় রাজনীতির আপাত মুক্তি। ইতিপূর্বে অনুরূপ একটি নিবন্ধে আমরা মন্তব্য করেছিলাম, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর পরিবারটি যেন ভারতের রাজনীতির চিরস্থায়ী নিয়ামক হয়ে আছে। বিশেষ করে ভারতের ঐতিহ্যবাহী কংগ্রেস দলটি যেভাবে এই একটি পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে, তা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশে একেবারেই বেমানান।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার প্রভাব পড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে। আমাদের দেশেও ‘পরিবারতন্ত্রবাদী’রা দেশের সাধারণ মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে কথায় কথায় গান্ধী পরিবারের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে।
মনে রাখা দরকার, পরিবারতন্ত্র এবং ‘পারিবারিক ঐতিহ্য’ এক নয়। পারিবারিক ঐতিহ্য তথা কীর্তিমান পূর্বপূরুষের সুকৃতিসমূহ পরবর্তী প্রজন্মের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে করে ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তানেরা কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়ে গেলে সেটা অন্যায্য হয় না। অপরদিকে ‘পরিবারতন্ত্র’ হচ্ছে পারিবারিক সম্পর্কের সুবাদে অযোগ্য ব্যক্তিকে সমাজের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া। গণতান্ত্রিক সমাজে যা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পরিবারতন্ত্র ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলে না।
যেভাবেই হয়ে থাকুক, ভারতের জনগণ এবার পরিবারতন্ত্রের সেই অক্টোপাসের থাবা থেকে বের হয়ে এসেছে। এটাই এই নির্বাচনের সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয়। ভারতের রাজনীতিতে এই ধারা আমাদের দেশের জন্য এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ।
বস্তুত ভারতের রাজনীতিতে নেহেরু পরিবারের বংশানুক্রমিক কর্তৃত্ব গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি দুষ্ট দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। যার প্রতিফলনে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতেও বংশানুক্রমিক নেতৃত্বের ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। উপমহাদেশের প্রায় সব দেশেই শক্তিমান নেতারা সবাই ক্ষমতায় গিয়ে নেহেরু পরিবারের মডেলে পারিবারিক শাসন কায়েম করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এবারের ভারতীয় নির্বাচনের ফলাফল দৃষ্টে সেই ধারায় ছেদ পড়লে সেটা হবে আমাদের জন্য বিরাট আশীর্বাদ।
গল্পকথার স্যামসনের চুলের গোছা কেটে দিয়ে ডি-লায়লা তাকে শক্তিহীন করে দিয়েছিল। পরিবারতন্ত্রের স্যামসনের চুলের গোছা কেটে দেয়ার অসামান্য কাজটির জন্য বিজেপি এবং মি. মোদি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী : রাজনীতিক, ভূ-রাজনীতি ও উন্নয়ন গবেষক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন