সেই ছোটকাল থেকে ফেনী নামের সঙ্গে আমি পরিচিত। শহর থেকে মাইল চারেক দূরের এক গ্রামে জন্ম হলেও নোয়াখালী জেলার সদর দপ্তর অর্থাৎ মাইজদী শহরে আমি বড় হয়েছি। এখানকার স্কুলে আমি পড়াশোনা করেছি। নোয়াখালী জেলার দুটি মহকুমা- একটি নোয়াখালী সদর এবং অন্যটি ফেনী। লক্ষ্মীপুর তখন কোনো মহকুমা ছিল না, এটি ছিল নোয়াখালী সদর মহকুমার একটি থানা মাত্র। জেলা শহরের বাসিন্দা হিসেবে আত্মপ্রত্যয় ও প্রচ্ছন্ন গর্ববোধ থাকলেও আমরা ছিলাম নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য। একাধিকবার মেঘনার ভাঙনে আমাদের অভিভাবকরা ছিলেন বিপর্যস্ত, সর্বস্বান্ত। সর্বশেষ ভাঙনের কবলে তাঁরা পড়েন চল্লিশের দশকের শেষভাগে। তাঁদের প্রায় সবারই অফিস-বাড়িঘর ছিল পুরনো নোয়াখালী শহরে, যার স্থানীয় নাম ছিল 'মন্তিয়ার খোনা'। ১৯৪৮-৪৯ সালে মেঘনার করাল গ্রাসে শহরটি সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। বেসরকারি বাড়িঘর-স্থাপনার সঙ্গে সরকারি কোর্ট-কাচারি, অফিস স্থাপনাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সরকার বাধ্য হয়ে পুরনো শহর থেকে মাইল পাঁচেক উত্তরে মাইজদী কোর্ট নামক স্থানে অস্থায়ীভাবে নতুন জেলা সদরের পত্তন করে। আমাদের বিপর্যস্ত অভিভাবকদের বাসাবাড়ি বানানোর জন্য প্রায় বিনা মূল্যে সরকারি জমি (প্লট) বরাদ্দ দেওয়া হয়।
নোয়াখালী জেলার একমাত্র সরকারি স্কুল, অর্থাৎ নোয়াখালী জিলা স্কুল স্বাভাবিক নিয়মে নোয়াখালী জেলা সদর মাইজদী কোর্টে অবস্থিত ছিল। আমরা তিন ভাই পর্যায়ক্রমে এ স্কুলের ছাত্র ছিলাম; স্কুলে আমার ছাত্রত্বের সময়কাল ১৯৫৬ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত। আমাদের হেডমাস্টার মমতাজ উদ্দিন আহমেদের বাড়ি ছিল ফেনী। ফেনী হাই স্কুলের প্রখ্যাত হেডমাস্টার জালাল উদ্দিন ছিলেন তাঁর ভগ্নিপতি। এ সুবাদে ফেনী হাই স্কুলের সঙ্গে আমাদের স্কুলের একটা সুসম্পর্ক ছিল। খেলাধুলা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে ফেনী স্কুলের শিক্ষক-ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হতো। জেলাভিত্তিক প্রতিযোগিতায় ফেনী হাই স্কুলের ছাত্রদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। পড়াশোনা ও পাবলিক পরীক্ষায় ফেনী হাই স্কুল ছিল আমাদের জিলা স্কুলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।
মহকুমা সদর হলেও ফেনী শহরের অধিবাসীরা ছিল আমাদের অভিভাবকদের তুলনায় অনেক বেশি সচ্ছল। চাকরিবাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যে এ শহরের অভিজাত ব্যক্তিরা ছিলেন সুপ্রতিষ্ঠিত। সরকারি মহলে তাঁদের প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। ফেনী শহর ছিল একটি বনেদি জনপদ, নদীর ভাঙনে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। পরিবারের ধনসম্পদ, সহায়-সম্পত্তি নদীগর্ভে বিলীন হয়নি। ফলে এখানকার অভিভাবকদের আর্থিক ও বৈষয়িক সক্ষমতা ছিল তুলনামূলক বেশি। মহকুমা সদর হিসেবে ফেনীর অবস্থান সুদৃঢ় ও স্থায়ী হওয়ার কারণে মোটামুটি সচ্ছল ব্যক্তিরা শহরে পাকা বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস করেছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথের ওপর অবস্থিত বলে ফেনী শহরের সাধারণ মানুষ উন্নত জীবনযাত্রার সঙ্গে বেশি পরিচিত। তাদের জীবনযাত্রায়ও এ ছাপ ছিল পরিলক্ষিত। এক কথায় নোয়াখালীর তুলনায় ফেনী শহর তথা সামগ্রিকভাবে ফেনী মহকুমা ছিল উন্নত। অনেক বেশি আধুনিক। শিক্ষাদীক্ষায় ফেনী ছিল সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগামী মহকুমাগুলোর অন্যতম।
ফেনীর দুঃখে কাঁদছে মানুষ কাঁদছে স্বদেশ
ফেনী মহকুমার সমবয়সী ছাত্র-কিশোরদের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে আমাদের একটা প্রতিযোগিতার ভাব কাজ করত। ফেনীর ছাত্ররা বেশভূষায়, চলনে-বলনে আমাদের চেয়ে চৌকস ছিল, তবে ছাত্র হিসেবে আমরা তাদের চেয়ে কম মেধাবী ছিলাম না। আমাদের একটা আত্মবিশ্বাস ছিল যে পাবলিক পরীক্ষা, অর্থাৎ ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় আমরা তাদের চেয়ে ভালো ফল করব। তা ছাড়া আমরা হচ্ছি জেলা শহরের অধিবাসী, জেলার একমাত্র সরকারি স্কুল 'নোয়াখালী জিলা স্কুল'-এর ছাত্র। সুতরাং জেলার শিক্ষাসংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে আমরা হচ্ছি নেতৃত্বদানের মূল দাবিদার। ছাত্রসংক্রান্ত বিষয়ে জেলার মুখপাত্র। ফেনীর ছাত্ররা কোনো দিন তা মানতে চাইত না। তারা আগ বাড়িয়ে অনেক বিষয়ে নেতৃত্ব দিতে চাইত। আমরা নিজেদের মতো করে তাতে বাধা দিতাম। আইনগত কারণে বেশির ভাগ সময় আমরা জয়ী হতাম। ১৯৬০ সালে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অনুষ্ঠিত 'অল পাকিস্তান স্কাউট জাম্বুরি'তে এ ব্যাপারে একটি মজার ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় কোনো কোনো প্রশাসনিক জেলাকে বিশেষ বিশেষ বিষয়ে (ঝঁনলবপঃ) একাধিক জেলা হিসেবে বিভক্ত করে দেখানো হতো। স্কাউটের ব্যাপারে বোধ হয় ফেনীকেও আলাদা জেলা হিসেবে গণ্য করা হতো। জাম্বুরির মাঠে ফেনীর স্কাউটরা প্রকাশ্যে তাদের 'ফেনী জেলা স্কাউট' দলের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিত। আমরা এটি মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই আমরা জোরেশোরে স্লোগান দিতে থাকি, 'ফেনী ডিসট্রিক্ট ভূগোলে নাই, ফেনী জেলা ভূগোলে নাই।' জাম্বুরিতে এটি আমাদের 'ওয়ার ক্রাই' হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জাম্বুরি থেকে ফিরে এসেও বেশ কিছুদিন মজা করে আমরা এ স্লোগান দিতাম।
কেমন ছিল তখনকার ফেনী শহর? এ প্রশ্নের জবাবে বলতে হয়, ছাত্রজীবনে আমি ফেনী শহর দেখিনি। ট্রেনে ফেনী হয়ে চট্টগ্রামে গেছি। ট্রেনে বসে ফেনী রেলস্টেশন দেখেছি। এর বেশি কিছু নয়। নোয়াখালী শহরের মূল স্টেশন মাইজদী কোর্ট থেকে ফেনী জংশন স্টেশন অনেক বেশি জমকালো। এর ভৌত অবকাঠামো মজবুত ও আধুনিক। স্টেশনে লোকজন, হাঁকডাক বেশি। সব কিছু মিলে ফেনী স্টেশনের তুলনায় মাইজদী কোর্ট স্টেশন সেকেলে ও কিছুটা নিষ্প্রভ, বৈদ্যুতিক বাতিবিহীন। স্টেশনের অবয়ব থেকে আন্দাজ করা যেত যে নোয়াখালী শহরের তুলনায় ফেনী শহর কিছুটা উন্নত ও সুন্দর হবে। শহরটি দেখার জন্য আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল। ভালোভাবে শহর দেখার সুযোগ হলো ১৯৬৯ সালে, আমার বড় ভাইয়ের বিয়ের সময়। ফেনীর একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে আমার বড় ভাই মরহুম অধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ বিয়ে করেন। ফেনী শহরে তাঁর দাদা শ্বশুর মরহুম সনু মিঞা মোক্তারের বাসায় তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এ অনুষ্ঠানে বরযাত্রী হিসেবে যোগ দিতে গিয়ে আমি ফেনী শহরকে সরেজমিন দেখতে পেলাম। ছোট্ট শহর। ছিমছাম গোছানো, আমাদের নোয়াখালী শহরের তুলনায় দালানকোঠার সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেশি। রাস্তাঘাটও নোয়াখালী শহরের তুলনায় উন্নত। মানুষের ঘরবাড়ির একটা বড় অংশই পাকা ও সুন্দর।
মজার কথা হলো, ফেনী শহর উন্নত ও বর্ধিষ্ণু বলে এবং এখানকার বাসিন্দারা জাতীয় পর্যায়ে অত্যন্ত প্রভাবশালী বিধায় ১৯৬১ বা ১৯৬২ সালে নোয়াখালী জেলার সদর দপ্তর ফেনীতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর প্রতিবাদে নোয়াখালী শহরে স্বতঃস্ফূর্ত গণ-আন্দোলন শুরু হয়। সেই মার্শাল লর মধ্যে নোয়াখালীতে প্রথম হরতাল পালিত হয়। রেললাইন তুলে ফেলা হয়। আরো কিছু সহিংস ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লে. জে. আজম খান মাইজদী শহরে জনসভা করে এ সিদ্ধান্ত বাতিল বলে ঘোষণা করেন। মাইজদী কোর্ট স্থায়ীভাবে নোয়খালী জেলার সদর দপ্তর হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তখনো এ শহরে বিদ্যুৎ ছিল না। বাড়িঘর সবই টিন অথবা তরজা (বাঁশের বেড়া) দিয়ে তৈরি। পানীয় জল, স্যানিটেশন ব্যবস্থা অতিসীমিত, নাই বললেই চলে। রাস্তার বাতি কেরোসিনে জ্বলে। ফেনীর তুলনায় মাইজদী কোর্ট বড়জোর একটি গ্রাম্য শহর। তবু শুধু আন্দোলনের জোরে নোয়াখালী সদরের বাসিন্দারা সামরিক সরকারের সিদ্ধান্ত বদলে জেলার সদর দপ্তর মাইজদী কোর্টে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন।
ফেনী বিশেষভাবে উন্নত ছিল শিক্ষাদীক্ষা ও মানবসম্পদে। নোয়খালী শহরে উচ্চশিক্ষিত ও জাতীয় পর্যায়ে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল অতিসীমিত। আমাদের মুরব্বি শ্রেণির সিনিয়ররা বেশির ভাগই ছিলেন ম্যাট্রিক পাস ও ইন্টারমিডিয়েট ফেল। অবস্থা এমন যে আমাদের ধারণা হয়ে গিয়েছিল, ইন্টারমিডিয়েট বোধ হয় একাধিকবার ফেল করতে হয়। এ ছাড়া উপায় নেই। এ ধারণা বদলাতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। ফেনী ছিল এদিক থেকে রত্নগর্ভা। প্রথিতযশা মেধাবী ব্যক্তিরা ফেনীর জন্য বয়ে এনেছেন দুর্লভ সম্মান আর দৃশ্যমান প্রভাব। সর্বজনাব কফিল উদ্দিন মাহমুদ, মফিজুর রহমান, কাজী ফজলুর রহমান, হাসান আহমেদ, জালালুদ্দিন আহমেদ, খালেদ শামস প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) ক্যাডারের সদস্য হয়েছিলেন। মরহুম আব্দুস সালাম, জহুর হোসেন চৌধুরী, ওবায়েদ-উল হক, মাহবুবুল হক, এ বি এম মূসা, গিয়াস কামাল চৌধুরী, সিরাজুর রহমান ছিলেন সাংবাদিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। সর্বজনাব অধ্যাপক শামসুল হক, প্রিন্সিপাল সফিকুর রহমান, ড. আমেনা রহমান, জালালুদ্দিন সাহেব, মমতাজ উদ্দিন, ড. শরীফা খাতুন, সুরাইয়া বেগম শিক্ষাজগতের অতি সুপরিচিত নাম। বিশিষ্ট নাগরিক বা রাজনীতিবিদ হিসেবে সারা দেশে সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন সর্বজনাব হামিদুল হক চৌধুরী, হাবীবুল্লাহ বাহার, প্রকৌশলী সফিকুর রহমান, আব্দুল জব্বার খদ্দর, জনাব খাজা আহমেদ, সাইফুদ্দিন মানিক, মাহবুবুল আলম। ব্যবসা-বাণিজ্যে ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যাঁরা প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে অবদান রেখেছেন তাঁরা হচ্ছেন সর্বজনাব মুজিবুল হায়দার চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন (সাবেক এমপি), আবদুল আউয়াল মিন্টু, এম এ কাশেম, আনোয়ারুল আলম পারভেজ, মরহুম শাহজাহান কবির। সত্তরের কাছাকাছি (কমবেশি) বয়সের যেসব সুপরিচিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি এখনো নিজ নিজ ক্ষেত্রে কর্মব্যস্ত থেকে সাধ্যমতো অবদান রাখছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সর্বজনাব প্রফেসর আজাদ চৌধুরী, প্রফেসর আনোয়ারউল্যাহ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, কবি বেলাল চৌধুরী, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন, এরশাদ মজুমদার, আলমগীর কবির, আজিম উদ্দিন আহমেদ, কাজী গোলাম রহমান, বদিউর রহমান, রিয়াজ রহমান, সিরাজুল ইসলাম সবুজ, ড. ফেরদৌস কোরেশী, মহিউদ্দিন আহমেদ, ডা. গোলাম কিবরিয়া, গোলাম মোস্তফা, প্রকৌশলী এস এম মুনির আহমদ, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
এত জ্ঞানী-গুণী, এত দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও ফেনী আজ বসবাসের প্রায় অযোগ্য এক আতঙ্কের শহর। ফেনীর জৌলুস বেড়েছে, বড় বড় দালানকোঠা, দোকানপাট নির্মিত হয়েছে। কিন্তু এর অন্তরাত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি একাধিকবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে (প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগসহ) চাকরি করেছি। প্রথম দিকে দেখেছি সাক্ষরতা ও সাধারণ শিক্ষার সার্বিক মূল্যায়নে ফেনী মহকুমা (পরবর্তী সময়ে জেলা) সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থিত। একুশ শতকের ঊষালগ্নে অর্থাৎ ২০০১ সালে এসে দেখলাম ফেনী জেলা প্রায় সব হিসাবে মারাত্মকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। এ জেলার শিশু-কিশোররা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ছাত্রজীবনের পরিশৃঙ্খল অনুশীলনে তাদের চরম অনীহা। এক অশুভ শক্তি তাদের সাময়িকভাবে চিত্তাকর্ষক সন্ত্রাসী দুরন্তপনার দিকে টেনে নিচ্ছে। জ্ঞানী-গুণী প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরা ফেনীর সঙ্গে বস্তুত সম্পর্ক চুকিয়ে বড় শহরে স্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন। দীর্ঘ সময় অবস্থানের জন্য তাঁরা এখন ফেনী যেতে উৎসাহী নন। মানসম্মত মানবসম্পদের দিক থেকে ফেনী যেন আজ এক পরিত্যক্ত জনপদ। সব থেকেও এর কিছুই নেই। আছে শুধু সন্ত্রাস আর আতঙ্ক।
ফেনীর নির্বিঘ্ন নিয়ন্ত্রণ পেতে সব শাসক দল ভয়ানকভাবে উদ্গ্রীব। স্বার্থবাদী চক্র তাদের এমন ধারণা দেয় যে ঢাকা-চট্টগ্রামের পথে ফেনী হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ 'চিকেন নেক'। এর ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে চট্টগ্রাম বন্দর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, অতএব সন্ত্রাসী দলের মাধ্যমে এর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই কুপরামর্শে বিভ্রান্ত হয়ে শাসকগোষ্ঠী এ এলাকায় সন্ত্রাসকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। বস্তুতপক্ষে লালন করে। এর ফলে ধ্বংস হয় একটি সম্ভাবনাময় সুন্দর জনপদ। ভেসে আসে নির্যাতিত মানুষের কান্না। কাঁদছে ফেনীর মানুষ, কাঁদছে স্বদেশ।
লেখক : সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন