১৯৫৮ সালে আমার আব্বা সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর একটানা সাত বছর আমাদের পরিবারকে গ্রামে বসবাস করতে হয়। এর আগে সারা জীবন কালেভদ্রে হঠাৎ কখনো ছুটিছাটায় গ্রামে যাওয়া হতো, গ্রামের সঙ্গে পরিচয়টা নিবিড় হওয়ার সুযোগ তাই ঘটেনি কোনো দিন। আটান্নতে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানা সদর থেকে মাইল দশেক দূরের বরমচাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে পড়ো পড়ো স্কুলের হাল ধরতে আব্বা গেলেন বরমচাল নামক সেই বর্ধিষ্ণু জনপদে, যা গ্রামই বটে, তবে হাতের কাছেই রেলস্টেশন, বাজার, প্রশস্ত খেলার মাঠ, ১২ মাস চলাচলের উপযোগী রাস্তা ইত্যাদি থাকায়, সর্বোপরি স্কুলসংলগ্ন জনবিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপের মতো হেডমাস্টার কোয়ার্টারে আমাদের নিবাস হওয়ায়, আমরা গ্রামে থেকেও ঠিক গ্রামবাসী ছিলাম না। আর আমি ও আমার অগ্রজ লেখাপড়ার কারণে যথাক্রমে ঢাকা ও সিলেটে হলে-হোস্টেলে থাকায় গ্রামীণজীবনের সুখ-দুঃখ ঠিক বুঝতে পারতাম না। তবু দু-তিন মাস পরপর ছুটিতে বরমচাল বা মাইল তিনেক দূরের 'সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ' সেই বেড়কুড়ি গ্রামে গেলে শুধু যে শহুরে জীবনের অক্টোপাসের অষ্টবাহুর বন্ধন থেকে রাহুমুক্তি লাভ করতাম, মুখ বদলানোর মতো গ্রামীণজীবনের এটা-ওটা চেখে দেখে এক অপার্থিব আনন্দ লাভ করতাম তা নয়, শহরের মানুষ ও গ্রামের মানুষ, শহরের জীবন ও গ্রামের জীবন, শিক্ষার আলো ও অশিক্ষা, সচ্ছলতা-আনন্দ-হাসি-গান ও তার বিপরীতে অভাব-অনটন-দুঃখ-কষ্ট-জরা-দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত জীবন- এই সব কিছুর একটা তুলনামূলক চিত্র ফুটে উঠত চোখের সামনে। কখনো দু সপ্তাহ, কখনো এক মাস-দেড় মাস গ্রামীণ পরিবেশে, গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের সঙ্গে মেশার পর এক বুক ভালোবাসা ও আম্মা-আব্বা-ভাইবোন-বন্ধুবান্ধবকে ছেড়ে আসার বেদনা নিয়ে ফিরতাম ভিন্ন এক জগতে, যার নাম শহর। 'ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি' থেকে 'ইটের' পরে ইট, মাঝে মানুষ-কীট' শহরে। আম্মা চোখের জলে বিদায় দিতেন, রাতের মেইল ট্রেনে তুলে দিতে এসে আব্বার সারা অবয়বে থাকত বিষাদের ছায়া। তবে থাকত না ছেলে লাশ হয়ে ফেরার অজানা আশঙ্কা।
'অনেক কথা যাও যে ব'লে কোন কথা না বলি'
২
সিলেটের যে হোস্টেলে সেদিন সতীর্থদের হাতে শহীদ হলো তাওহিদুল ইসলাম, পঞ্চাশের দশকে সেই একই হোস্টেলে থাকতেন আমার বড় ভাই। সিলেটে তখনো মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি- ওটা হয়েছে ১৯৬২ সালে। তখন ছিল মেডিক্যাল স্কুল। সেই স্কুলের ছাত্রদের মধ্যেও রাগ-অনুরাগ-বিরাগ, বাদ-বিসম্বাদ ছিল, ছিল নানা বিষয়ে প্রতিযোগিতা। দলাদলিও ছিল, তবে খুব একটা প্রকাশ্যে না। আর রাজনীতি? মেডিক্যাল ছাত্রদের জন্য ওটা তো ছিল নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের রাজনীতি তো দূরের কথা, এমন কি ছাত্ররাজনীতিতেও হবু ডাক্তারদের উৎসাহ ছিল না। আর কারো উৎসাহ থাকলেও লেখাপড়ার চাপে সেই উৎসাহে ভাটা পড়তে সময় লাগত না। ১৯৬৩ সালে আমি সিলেট সরকারি মুরারীচাঁদ কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। তখন কিংবদন্তিতুল্য শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ সলমান চৌধুরীর লৌহশাসনে থেকেও আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে ওই কলেজের ছাত্ররা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সে আমলে ছাত্রলীগ-ছাত্র ইউনিয়নের অত্যুৎসাহী নেতা-কর্মীরা হঠাৎ কখনো-সখনো নিজেদের মধ্যে ঢিল-পাটকেল ছোড়াছুড়িও করত। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ষাটের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এমন কি ঢাকা শহরেও ছাত্ররাজনীতিতে অস্ত্রের ঝনঝনানি, লাশ পড়াপড়ি দেখা যায়নি। আর ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রে সিলেট তো তখন 'কিতা ভাগর চাউতলি, তার তলেদি গোয়াসনগর'। (সিলেটি প্রবাদ, অর্থ : কী এমন দাপটের চাউতলি, তারও নিচে গোয়াসনগর।)
সেই সিলেট আর নেই। সেই সিলেটকে এখন দুরবিন দিয়ে খুঁজেও পাওয়া যাবে না। পঞ্চাশের দশকে, এমন কি ষাটের দশকের মাঝামাঝিও সিলেট ছিল একটি নাতিবসতিপূর্ণ শান্ত জনপদ। এর ছবির মতো ঘরবাড়ি, কোলাহলমুক্ত পরিবেশ, শহরের ভেতরে ও উপকণ্ঠে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পটে আঁকা ছবির মতো কয়েকটি চা-বাগান ও তাদের সবুজের সমারোহ, পুবদিকে দিগন্তপ্রসারী মাঠ, মাঠের ফসল। আর ছিল টিলা-টক্কর পরিবেষ্টিত ঐতিহ্যবাহী এম সি কলেজ ও নিরিবিলি পরিবেশে অবস্থিত তার দর্শনীয় ছাত্রাবাস, শহরের ভেতর দিয়ে মন্দাক্রান্তা গতিতে বয়ে চলা স্বচ্ছতোয়া সুরমা- এ সবই সুষমামণ্ডিত করেছিল এই শহরকে। আর সর্বোপরি এ শহরে আছে তাপসকুলশিরোমণি পুণ্যাত্মা হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর পবিত্র সমাধি, যেখানে প্রতিদিন সমাগম হয় জাতিধর্মনির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তের।
এমন সুন্দর শহরটি আজ হারিয়ে গেছে। টিনের টুপি পরা বাংলো প্যাটার্নের ঘরবাড়ি উধাও হয়ে এই শহরে এখন অসংখ্য আকাশছোঁয়া দালানের ভিড়, অগণিত বিপণিকেন্দ্রে মহার্ঘ পণ্যসামগ্রীর ঠাসবুনোনি, আর জনপথে জান বের হয়ে যাওয়া ট্রাফিক-জ্যাম। ভিড়ে ভিড়াক্রান্ত এই শহরের যে দিকে তাকাই, শুধু মানুষ আর মানুষ। তারা সবাই ব্যস্ত। তারা ছুটছে, ছুটছে। 'নো টাইম টু স্ট্যান্ড অ্যান্ড স্ট্যায়ার'। এই শহরে এখন শুধু বিত্তের ছড়াছড়ি, টাকার ওড়াউড়ি। চিত্ত এখন বিত্তকে স্থান ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে গেছে। কোথায়? জানা নেই। তবে এটা ঠিক, 'হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোথা, অন্য কোন্খানে'।
চিত্ত যদি এখানে থাকত তা হলে কি দুই দিন পরপর তাওহিদুল ইসলামদের লাশ পড়ে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর এই পুণ্যভূমিতে? সরকারি মুরারীচাঁদ কলেজের স্বপ্নালস পরিবেশে ছবির মতো সুন্দর ছাত্রাবাস পুড়িয়ে ছাই করে দেয় ছাত্র নামধারী কিছু দুরাত্মা? এবং পুড়িয়ে দিয়ে সিনা ফুলিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়?
তাওহিদ হত্যাকাণ্ডের এজাহারভুক্ত শীর্ষ আসামিরা সবাই ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। তাদের পাণ্ডাটিকে পুলিশ দ্রুত গ্রেপ্তার করে জনগণের ধন্যবাদার্হ হয়েছে। এসব খুনির কেউ কেউ হয়তো তার সহপাঠী, একই বেঞ্চে পাশাপাশি বসে চার বছর লেখাপড়া করেছে, একই শবদেহের কাটাছেঁড়া করেছে, রাত জেগে নাইট-ডিউটি করেছে একই ওয়ার্ডে, ভাগাভাগি করে খেয়েছে টিফিনটা। এক সময় কত হাসি-ঠাট্টা-তামাশা হয়তো করেছে তারা। কত মধুস্মৃতি হয়তো সঞ্চয়ে আছে তাদের এই ক্যাম্পাসকে ঘিরে। ভবিষ্যতের কত সুখস্বপ্ন হয়তো তারা দেখেছে একসঙ্গে। আজ হঠাৎই একজন হারিয়ে গেল বিস্মৃতির অতল তলে। এক মুহূর্ত আগে যে ছিল চতুর্থ বর্ষ মেডিক্যালের ছাত্র, কদিন পরেই যার ডাক্তার হয়ে বের হওয়ার কথা, সে আজ অতীত। সে আজ কেবলি স্মৃতি। কেন? না, তারই চার বছরের কজন সঙ্গী, সুখ-দুঃখের সাথি, শুধু ভিন্নমতের কারণে ও চাঁদা চেয়ে না পেয়ে তাকে মারতে-মারতে-মারতে-একেবারে মেরেই ফেলল। খুন। ঠাণ্ডা মস্তিষ্কের শীতল খুন। একবারও ভেবে দেখল না তারা তাওহিদের প্যারালাইসিস মায়ের কী হবে, একমাত্র ছেলেকে অকালে হারিয়ে বাবার কী হবে, তিনটি বোনের কী হবে? এর পরও বলতে হবে ছাত্ররাজনীতি জিন্দাবাদ?
এত দুঃখের মধ্যে চমকপ্রদ একটা তথ্যও পাওয়া গেল। তাওহিদের বাবা (যিনি এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান অথবা প্রাক্তন চেয়ারম্যান) ও চাচারা নাকি সবাই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী। একমাত্র তাওহিদই স্বেচ্ছায়-সজ্ঞানে ছাত্রদল তথা বিএনপির সমর্থক ছিল (তার মানে, আওয়ামী লীগের হাতে আওয়ামী নেতার ছেলে খুন? কাক আবার ভক্ষণ করল কাকের মাংস? হায়, সৌমেন বাবু, শেষ পর্যন্ত এই বিশ্বকাপের সময়ে বোকার মতো এ রকম একটা সেমসাইড গোল করে বসলে!)।
৩
শুরু করেছিলাম ১৯৫০ ও ষাটের দশকে আমার দেখা বৃহত্তর সিলেট জেলার একটি গ্রাম ও সিলেট শহর দিয়ে। তখন সত্যি পরিবেশ-প্রতিবেশ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সারা বিশ্বেই তাই। আর আমাদের জীবনে তো আধুনিকতার ছোঁয়া বলতে তখন ছিল এক রেডিও ও ষাটের দশকে ট্রানজিস্টর। তা-ও সাত গেরাম ঘুরে একটা রেডিওর দেখা পাওয়া যেত কি না। ষাটের দশকের মাঝামাঝি টেলিভিশন এলো বাংলাদেশে। ওটিও বহুদিন কেবল শহরের মুষ্টিমেয় উচ্চবিত্তের ঘরে শোভাবর্ধন করত।
গ্রাম ছিল তখন শব্দার্থে আঁধারে ঢাকা। বিজলি বাতির কথা গ্রামের লোকে স্বপ্নেও ভাবতে পারত না। তাদের চাহিদা ছিল কত কম : কেরোসিনের কুপি, বড় জোর একটা হারিকেন, দুবেলা দুমুঠো ভাত, আর একটা লুঙ্গি, একটা গামছা। বৌয়ের জন্য দুটি শাড়ি। এই ছিল তার চাহিদা। তারপর অনেক দিন-মাস-বছর পার হয়ে, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বপ্নের স্বাধীন দেশ এখন নতুন এক শতাব্দী পাড়ি দিচ্ছে। এখন গ্রাম আর অবশ্যই সেই পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের অন্ধকারে ডুবে থাকা গ্রাম নেই। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে যারা গ্রাম থেকে আমাদের বরমচালের বাসায় আসত, সেসব গ্রামবাসীর প্রায় সবার ছিল ধূলিধূসরিত খালি পা, পরনে একটা যেমন-তেমন লুঙ্গি আর গায়ে আধা ময়লা একটা শার্ট। মাথায় চিতি পড়া তেল চিটচিটে কিস্তি টুপি এবং অবশ্যম্ভাবীরূপে ধার করা হলেও হাতে একটি রং ওঠা ছাতা, যা রোদবৃষ্টিতে যেমন কাজে লাগত তেমনি ওটা ছিল এক ধরনের 'স্ট্যাটাস সিম্বল'। আর আজ? আজও গ্রামের মানুষ ভিন গাঁয়ে বা শহরে যায়, বরং অনেক বেশিই যায়, তবে তার চেহারা-ছবিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। খালি পায়ে কেউ আর গ্রামের বাইরে যায় না, লুঙ্গি ছেড়ে তরুণরা ট্রাউজারই বেশি পছন্দ করে। আর ছাতার বদলে এখন 'স্ট্যাটাস সিম্বল' হয়েছে মুঠোফোন। চেহারাতে কেমন একটা খোলতাই খোলতাই ভাব। চেকনাইও লক্ষ করা যায় কারো কারো চেহারায়। এখন গ্রামে অনেকের ঘরেই টিভি, ফ্রিজ, স্যানিটারি টয়লেট, টয়লেট রোল ঢুকে পড়েছে। আর বিদ্যুৎ তো গেছে অনেক আগেই। নিঃসন্দেহে এসবই উন্নয়নের লক্ষণ। আর এর জন্য সবটুকু কৃতিত্বের দাবিদার আর কেউ নয়- গ্রাম বাংলার কৃষক, মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ-আমেরিকা-মালয়েশিয়ায় কর্মরত অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি ও মায়ের আঁচল ছেড়ে শহরে গিয়ে পোশাকশিল্পে জীবন-যৌবন উৎসর্গ করা অগণিত গ্রাম্যবালা। গ্রামের কৃষক, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী প্রবাসী বাংলাদেশি ও পোশাকশিল্পে নিয়োজিত নারী শ্রমিক- এই তিনজনের কাঁধে ভর করে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। তারা থেমে গেল তো বাংলাদেশ অচল। বাদবাকি বাক্যবাগিশরা শুধু কথার মহারাজ; তাদের উদ্দেশে একটি পুরনো টিভি সিরিয়ালের জনপ্রিয় ডায়লগ নিবেদন করে অন্য প্রসঙ্গে যেতে চাই : 'থামলে ভালো লাগে'। তাদের বকবকানি না থামলে অদ্যাবধি যেটুকু অর্জন হয়েছে, তাও হয়তো একদিন বিসর্জন দিতে হতে পারে।
৪
টিভি খুললেই দেখি পণ্ডিত, গবেষক, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে হাটুরে জনতা পর্যন্ত সবাই এবারের বাজেট সম্পর্কে তাদের সুচিন্তিত মতামত দিচ্ছেন। ভালো। দেশের সবাই তো আর আমাদের মতো উম্মি না। কিন্তু মাননীয় অর্থমন্ত্রী যে তাঁর বাজেট বক্তৃতায় কিছু কিছু বিষয়, যা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য সমূহ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সম্পর্কে কোনো উল্লেখই করলেন না, তার কী হবে? আমার মতে, মাননীয় অর্থমন্ত্রীর অত্যন্ত 'মেরিলি কনসিভড্, স্মুথলি ক্যারিড ও নাইসলি ডেলিভার্ড' বাজেট বক্তৃতায় এটা একটা বড় রকমের বিসংগতি। স্থানাভাবজনিত কারণে আলোচনায় না গিয়ে এখানে বিষয়গুলো আমি শুধু ফ্ল্যাগিং করছি।
১. দেশটা ব্যাংক ডাকাত, শেয়ারমার্কেট ডাকাত, গডফাদার-গডমাদারদের পুরোপুরি অভয়ারণ্য হতে আর কতদিন লাগবে? পদ্মা সেতু প্রকল্প আগে হবে, না 'অভয়ারণ্য প্রজেক্ট' আগে বাস্তবায়িত হবে, জাতি জানতে চায়। কারণ তাদের জীবনে দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
২. আগামী অর্থবছরে ক্রসফায়ার (থুক্কু, বন্দুকযুদ্ধ), গুম, অপহরণ ও খুনের প্রবৃদ্ধির হার কত হবে?
৩. কত তাওহিদুল ইসলাম আগামী বছর ছাত্ররাজনীতির বলি হবে? এ ব্যাপারে দেশের যাঁরা মুরব্বি, সব দলের সেই রাজনীতিবিদদের কি কিছুই করণীয় নেই? সম্পূরক প্রশ্ন : যারা বলি হবে, তাদের তালিকায়, উইথ অ্যাপলজি, কোনো মন্ত্রী, নেতা বা পদস্থ আমলার সন্তান থাকবে কি?
৪. নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, সাতক্ষীরার মতো আগামী বছর আর কোনো জনপদ কি সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করতে পারবে?
৫. জন্ম নিয়ন্ত্রণে সড়ক দুর্ঘটনা ও লঞ্চডুবির মতো পরীক্ষিত পদ্ধতির ব্যবহার কি আরো বৃদ্ধি করা হবে?
৬. প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো বহুল প্রচলিত ও ছাত্রসমাজে ব্যাপক জনপ্রিয় পদ্ধতিকে উৎসাহিত না করে এর বিরুদ্ধে অধ্যাপক জাফর ইকবালের মতো যেসব 'ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন' ব্যক্তি আন্দোলনে নেমেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কি উচিত নয়?
৭. সবশেষে বাংলাদেশের মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি কবে পাবে?
(তবে হ্যাঁ, অস্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারী নাকি পরকালে অনেক গুনাহ মাফ পাবেন- এই দৃষ্টিকোণ থেকেই কি এ ধরনের মৃত্যুকে উৎসাহিত করা হচ্ছে? কি জানি, হলেও হতে পারে। ইংরেজিতে সেই যে একটা কথা আছে না, অলওয়েজ লুক অ্যাট দ্য ব্রাইট সাইড অব এভরিথিং। আপাতত এটা ছাড়া তো সান্ত্বনা পাওয়ার মতো কিছুু দেখছি না।)
মাননীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় সবই বলেছেন, বলেছেন সুন্দর করে। তবু যেন রবীন্দ্রনাথের সেই 'অনেক কথা যাও যে ব'লে কোন কথা না বলি' গানটির মতোই মনে হচ্ছিল তাঁর বক্তৃতা।
লেখক : সাবেক সচিব, কবি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন