আওয়ামী লীগের সাথে কংগ্রেস ও বিজেপির সম্পর্ক
29 May, 2014
ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনাধীন থাকাবস্থায় ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষে রাজনৈতিক দল হিসেবে কংগ্রেসের জন্ম। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের কিছু শীর্ষনেতা বিশেষত জওয়াহেরলাল নেহরুর অনড় অবস্থানের কারণে ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে ভারতবর্ষ বিভাজিত হয়ে হিন্দু জনসংখ্যা অধ্যুষিত ইন্ডিয়া (ভারত) এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান নামে দু’টি পৃথক রাষ্ট্র জন্ম লাভ করে। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা-পরবর্তী একটানা ৩০ বছর রাষ্ট্্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল কংগ্রেস। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরুর পিতা মতিলাল নেহরু ১৯১৯ ও ১৯২৮ সালে দুই দফা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। জওয়াহেরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর লাল বাহাদুর শাস্ত্রী বছর দুয়েক ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর নেহরুকন্যা ইন্দিরা গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র রাজীব গান্ধী, রাজীব গান্ধীর স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী ও পুত্র রাহুল গান্ধীর বংশানুক্রমিক নেতৃত্বে কংগ্রেসের রাজনীতি অব্যাহত আছে।
ভারতের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, কংগ্রেস স্বাধীনতা-পরবর্তী সর্বনি¤œ ৪৪টি আসন লাভ করেছে। কংগ্রেসের এ আসন সংখ্যা লোকসভার সাকল্য আসন সংখ্যার ১০ ভাগের নিচে হওয়ায় সংসদীয় রীতি অনুযায়ী কংগ্রেস বিরোধী দলের মর্যাদা না পাওয়ারই কথা, তবে সংসদীয় রীতি উপেক্ষা করে কংগ্রেস জোটের প্রাপ্ত আসন ৫৯ বিবেচনায় এনে কংগ্রেসকে যদি বিরোধী দলের মর্যাদা দেয়া হয়, সেটি হবে বিজেপির রাজনৈতিক উদারতা এবং বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদির মহানুভবতা।
ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে হিন্দি ভাষাভাষী রাজ্যসহ অপরাপর রাজ্যে কংগ্রেস যেভাবে আসন হারিয়েছে, তাতে ধারণা করা যায় বংশানুক্রমিক রাজনীতির বিপরীতে ভারতের জনগণ শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে। এ উপমহাদেশের দ্বীপরাষ্ট্্র শ্রীলঙ্কায়ও একদা বংশানুক্রমিক রাজনীতির প্রাধান্য ছিল। তবে আজ সেটির অস্তিত্ব বলতে গেলে বিলীন। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিগত বছরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বংশানুক্রমিক রাজনীতির প্রতি পাকিস্তানের জনগণের অনীহার ভাব ব্যক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের বড় দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বংশানুক্রমিক রাজনীতির প্রভাব তীব্র হলেও আগামী দিনের রাজনীতিতে সে প্রভাব কতটুকু সুদূরপ্রসারী হবে, সে বিষয়ে এখনো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট স্পষ্ট নয়।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে রাজনৈতিক দলটির জন্ম। পরবর্তীকালে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলটিকে অসাম্প্রদায়িক রূপ দেয়া হয়। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আওয়ামী লীগকে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে বাঙালিদের স্বাধিকার আন্দোলন মুক্তি সংগ্রামে রূপ নেয়। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম চলাকালে কংগ্রেস ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। তখন ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মুক্তি সংগ্রাম চলাকালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী সরকার ভারতের ভূখণ্ড থেকে সরকার পরিচালনা করে। কংগ্রেস বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়। এ সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শরণার্থী যার বেশির ভাগই ছিল হিন্দু, ভারতে আশ্রয়গ্রহণ করে। তা ছাড়া বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেন ছাড়া আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংঠনগুলোর সকল পর্যায়ের নেতারা ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সবাই পরিবারসমেত সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ভারত মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে এবং এ কথাটি অনস্বীকার্য যে, ভারতের সাহায্য ছাড়া ৯ মাসের স্বল্পতম সময়ে স্বাধীনতা লাভ সম্ভব ছিল না।
স্বাধীনতা-পরবর্তী পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দুঃখজনকভাবে বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসানের পর বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমান উভয়েই স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতেন। ভারতে আপত্তি সত্ত্বেও ওআইসি সম্মেলনে যোগদান বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করায় ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার আশাহত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর মতো জিয়াউর রহমানও তার শাসনামলে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির আলোকে মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক গভীরতম করেন। বস্তুত জিয়াউর রহমানের শাসনামলেই বিদেশে কর্মসংস্থান এবং দেশের অভ্যন্তরে পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা স্থাপনের শুভসূচনা হয়, যা এ দেশের অর্থনীতির ভিত সুদৃঢ় করার মাইলফলক।
এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। অতঃপর দুই দফা বিএনপির শাসনামলে তাতে কিছুটা ছেদ পড়লেও আওয়ামী লীগের তিন দফা শাসনামলে এর ক্রমবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।
ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু দাবি করা হলেও ভারতের সাথে আমাদের দীর্ঘ দিন ধরে যেসব অমীমাংসিত সমস্যা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলোÑ (ক) অভিন্ন নদীর পানির সুষম হিস্যা; (খ) সমুদ্রসীমা বিরোধ নিরসন; (গ) অচিহ্নিত স্থলসীমা নির্ধারণসহ ছিটমহল সমস্যার সমাধান; (ঘ) বাণিজ্য বৈষম্য দূরীকরণ; (ঙ) ভুটান ও নেপালের সাথে সম্পাদিত ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়ন; (চ) কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বৈরী মনোভাব প্রত্যাহার; (ছ) সীমান্তের চার পাশে নির্মিত ১৩২টি মাদক পর্যায়ভুক্ত ফেনসিডিল কারখানা বন্ধ করে মাদক পাচার রোধ প্রভৃতি।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের স্থলসীমানা বিরোধ নিরসন ও ছিটমহল বিনিময়ে ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর বাংলাদেশ সে বছরই সংবিধানে তৃতীয় সংশোধনী আনয়নের মধ্য দিয়ে চুক্তিটি অনুমোদন করে। এ চুক্তিটি অনুমোদনের ব্যাপারে ভারতের কংগ্রেস আগ্রহ দেখালেও কখনো এককভাবে তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই; আবার কখনো জোটগতভাবে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও জোটের শরিকেরা চুক্তিটি বাস্তবায়নে অনাগ্রহীÑ এসব অজুহাত দেখিয়ে চুক্তিটি বাস্তবায়ন করেনি। ভারতের এসব অজুহাত যে খোঁড়া, তা ১৯৮৪-এর অষ্টম লোকসভার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে স্পষ্ট প্রতিভাত হয়। ওই লোকসভায় এককভাবে কংগ্রেসের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল এবং কংগ্রেস চুক্তিটি বাস্তবায়নে আন্তরিক হলে সে লোকসভা দ্বারা চুক্তিটি অনুমোদন করিয়ে নিতে পারত। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, সে সময়ে বহুরূপী এরশাদ ছিল রাষ্ট্রক্ষমতায়, তাই ভারতকে দিয়ে চুক্তিটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব তার ওপর ছিল।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের তিস্তা চুক্তি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর হতে চলছিল তখন ভারতে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন কংগ্রেস দলীয় মনমোহন সিং এবং বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় লোকসভায় কংগ্রেসের শরিক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস দল তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে চুক্তিটি স্বাক্ষর সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশে ওষুধনীতি প্রণয়ন-পরবর্তী ১৯৮২ সাল থেকে ফেনসিডিলের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ, কিন্তু এ সুযোগটি গ্রহণ করে ভারত। রাতারাতি ভারত বাংলাদেশের সীমানার চার পাশে ১৩২টি মাদক পর্যায়ভুক্ত ফেনসিডিল কারখানা গড়ে তোলে। এ ফেনসিডিল কারখানাগুলো স্থাপনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশে ফেনসিডিলের চোরাচালান এবং এ দেশে মাদকের বিস্তারসহ যুবসমাজের ধ্বংস সাধন। ফেনসিডিল চোরাচালান ও এ দেশে যুবসমাজ ধ্বংসে ভারতের উদ্দেশ্য অনেকটা সফলতা পেয়েছে। ভারতের বিএসএফ কর্তৃক সীমান্ত হত্যা এখন প্রাত্যহিক বিষয়। সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক গরুসহ চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত থেকে পণ্য আনতে গিয়ে বহু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, কিন্তু প্রতিদিন লক্ষাধিক বোতল ফেনসিডিলের প্রবেশ ঘটলেও ফেনসিডিল চোরাচালানে নিয়োজিতদের একজনেরও বিএসএফ কর্তৃক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এমন নজির নেই।
আওয়ামী লীগকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নবম ও ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী করার ব্যাপারে কংগ্রেসের ইতিবাচক ভূমিকা ছিল। যদিও ২০০৯ সালে কংগ্রেসের সমর্থন ব্যতিরেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন হয়তো সম্ভব ছিল, কিন্তু ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে শেষোক্তটি কোনোভাবে সম্ভব ছিল না। ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন একতরফা সংসদ নির্বাচন বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের অবস্থান ভিন্নমুখী হলেও একমাত্র ভারতের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের সমর্থনে সে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। এখানে পরিহাসের বিষয়, কংগ্রেস ভোটারবিহীন নির্বাচনে সমর্থন জুগিয়ে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে পেরেছে, কিন্তু নিজ দেশে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতির নির্বাচনে তার শোচনীয় পরাজয় কি এড়াতে পেরেছে?
নির্বাচনে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপির বিজয়ের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে যে চিঠি লিখেছেন, তা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু চিঠিতে যেভাবে মোদি ও তার নেতৃত্বের প্রশংসা করা হয়েছে তাতে কংগ্রেসের অনুরূপ আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক দল বিবেচনা করা হলে তা অসাম্প্রদায়িকতাকে কালিমায় আচ্ছাদিত করে দেয়।
ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় চিঠিটির যেসব বক্তব্য প্রকাশ হয়েছে তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী লিখেছেনÑ ‘আপনি ভারতের জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করেছে। আমরা উভয়ে জনগণের ম্যান্ডেট প্রাপ্ত। তাই একসাথে কাজ করতে চাই।’ চিঠির এ বক্তব্যটি যদি কংগ্রেসের কোনো শীর্ষ নেতার সম্মুখে উপস্থাপন করা হয়, তবে তিনি আওয়ামী লীগ নেত্রী ও এ দলটি সম্পর্কে কী মন্তব্য করবেন, সেটি আওয়ামী লীগের জন্য লজ্জাকর হলেও সে লজ্জায় আওয়ামী লীগের কিছুই আসে যায় না। কারণ, অন্তত আগামী পাঁচ বছর তাদের কংগ্রেসের সমর্থনের প্রয়োজন নেই।
শেখ হাসিনা তার চিঠিতে আরো উল্লেখ করেনÑ ‘আপনার মহান দেশের জনগণ যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছে তাতে আপনার গতিশীল, অনুপ্রেরণাদায়ক ও দর্শনমূলক নেতৃত্বের প্রকাশ ঘটেছে এবং এর মাধ্যমে আপনার প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়েছে।’ চিঠিতে বলা হয়Ñ ‘বাংলাদেশের একজন বন্ধুকে একটি বন্ধুপ্রতিম দেশের নেতৃত্বে দেখতে পেয়ে আমি (হাসিনা) আনন্দিত।’ চিঠিতে মোদিকে বিদেশে প্রথম গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং তাকে বলা হয় তিনি যেন বাংলাদেশকে তার দ্বিতীয় আবাস হিসেবে দেখেন।
নির্বাচন প্রচারণাকালীন মোদি একাধিক বক্তৃতায় ভারত থেকে বাংলাদেশীদের বিতাড়নের কথা বলেছেন। এখন প্রশ্নÑ এ বাংলাদেশী কারা? ১৯৪৭-এর আগ থেকে ভারতের পশ্চিম বাংলা ও আসাম রাজ্যে যেসব মুসলিম অব্যাহতভাবে কয়েক যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন তাদেরকে কোন যুক্তিতে বাংলাদেশী আখ্যা দেয়া হলো, এর জবাব মোদির কাছ থেকে ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি চেয়েছেন।
আসাম রাজ্যে ১৪টি লোকসভা আসনের মধ্যে আটটিতে বিজেপি বিজয়ী হয়েছে। আসাম রাজ্য বিজেপি সভাপতি নির্বাচন-পরবর্তী দৃঢ়কণ্ঠে ব্যক্ত করেছেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী ভারতের এক ইঞ্চি জমিও বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়া হবে না। তা ছাড়া তিস্তা চুক্তি ও বাংলাদেশী বিতাড়নের ব্যাপারে বিজেপির অবস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না।
নির্বাচন-পরবর্তী বিজেপির বিভিন্ন নেতার বক্তব্য থেকে যে ধারণা পাওয়া যায়, তাতে ভারতের সাথে দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশের যেসব অমীমাংসিত সমস্যা রয়েছে, কংগ্রেসের মতো বিজেপির শাসনামলেও এগুলোর সমাধান দুরূহ। কংগ্রেসকে যেমন আওয়ামী লীগ নিজের স্বার্থের হানি ঘটিয়ে বহমান নদীতে বাঁধ দিয়ে পর্যন্ত তার স্বার্থ সংরক্ষণে সচেষ্ট থেকে তার নিকট থেকে আশাব্যঞ্জক তেমন কিছু পায়নি, বিজেপির ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগ সরকারের শত আন্তরিকতা থাকলেও ফল যে একই রূপ হবে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।
মোদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী যে চিঠি লিখেছেন তার মর্মানুযায়ী দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সাথে কংগ্রেসের চেয়ে বিজেপির সম্পর্কই নিবিড়। কিন্তু সেটি প্রকৃতই নিবিড় কি না, তা বোধকরি এ দেশের জনগণ আগামী কিছু দিনের মধ্যেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। আর তখন মোহভঙ্গ হলেও সার্বিক ক্ষতি থেকে উত্তরণ কি সম্ভব?
সাবেক জজ, সংবিধান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
(নয়া দিগন্ত)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন