মোদির চ্যালেঞ্জ এবং বাংলাদেশ
20 May, 2014
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট রয়েছে, এ নিয়ে দ্বিমত নেই। অস্থিতিশীলতা কমবেশি বরাবরই ছিল। তবে নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের ধারা সূচিত হওয়ার পর এমন পরিস্থিতি সম্ভবত আর আসেনি। যদিও গত বছরের তুলনায় রাজপথ এখন অনেকটাই শান্ত, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে এবং সংসদে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলও রয়েছে; কিন্তু কেউই মনে করছে না যে বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধিত্ব্বশীল সরকার দায়িত্বে রয়েছে। সর্বমহলেই অভিমত যে, একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃত বিএনপি এখন সংসদের বাইরে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে জোটসঙ্গীদের নিয়ে রাজপথে সক্রিয় ছিল। হরতাল-অবরোধে দেশ ছিল অশান্ত। কিন্তু তারা সরকারকে নত করাতে পারেনি। নির্বাচন বর্জনের কারণে তারা এখন এমনকি সংসদে বিরোধী দল হিসেবেও নেই।
কিন্তু তারা যে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি তার প্রমাণ মেলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। কয়েক ধাপে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং শেষ দিকে বিপুলসংখ্যক আসনে সহিংসতার মাত্রা ছিল ব্যাপক। তারপরও বিএনপি এবং তার মিত্ররা অর্ধেকের বেশি আসনে জয়ী হতে পেরেছে। গত বছর কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানেও বিএনপি নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে। এমন একটি শক্তি সংসদের বাইরে থাকলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। এর সমাধানের কথাও ভাবতে হবে।
ভারতের ষোড়শ লোকসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং হিন্দুত্ববাদের দল হিসেবে পরিচিত বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করেছে। আমাদের দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এ নির্বাচনের প্রতি বিশেষভাবে নজর রেখেছিল। অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি যে, ভারতে কংগ্রেস সরকার থাকলে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক থাকে। অন্যদিকে, বিএনপি এবং তার মিত্ররা ভারতবিরোধী রাজনীতি করে বলে অনেকের ধারণা থাকলেও তাদের অপেক্ষাকৃত স্বস্তি দিলি্লতে অকংগ্রেসী সরকার ক্ষমতায় থাকলে। তবে এটাও ঠিক যে, ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারে যারাই থাকুক না কেন, পররাষ্ট্রনীতিতে তেমন লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটে না। বাংলাদেশে ভারতের এ নির্বাচনী ফল কী প্রভাব ফেলবে, সেটা নিয়ে এখন বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। ১৬ মে সকালে ভোটগণনা শুরু হলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে নরেন্দ্র মোদির জয় নিশ্চিত। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই তাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন এবং বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এটা ঠিক, কোনো দেশ পাশের বা দূরের অন্য কোনো দেশের সরকার পরিবর্তন করতে পারে না, যদি না সে দেশের ভেতরে এ পরিবর্তনের তাগিদ সৃষ্টি হয় এবং জনগণ সেটা করতে সংকল্পবদ্ধ হয়। অন্য কথায়, বাইরের কোনো সরকারের ভূমিকা তখনই কার্যকর হয়, যখন ভেতর থেকে সেটা গ্রহণের পরিবেশ তৈরি হয়। তবে এটাও মনে রাখা চাই যে, রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধারণত রাতারাতি ঘটে না।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সম্পর্ক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠেছিল। জাতীয় কংগ্রেস উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয় এবং এ দলের অগণিত নেতা-কর্মী-সমর্থক অশেষ ত্যাগ স্বীকার করে। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করে এবং ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হয়। আওয়ামী লীগ প্রথম থেকেই এ দেশে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে এবং তার প্রতি ভারতের গণতান্ত্রিক শক্তিরও সমর্থন ছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা যখন বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে, তখন ভারতে ক্ষমতায় ছিল ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার। তিনি এবং তার দল বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের সশস্ত্র সংগ্রামের পাশে দাঁড়ান এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র্র সজ্জিত করেন। পাশাপাশি তারা প্রায় এক কোটি শরণার্থীকেও আশ্রয় প্রদান করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের কর্মকাণ্ডও ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে পরিচালিত হয়েছে। ওই সময়ে দুই দেশের সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যেও বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা পরবর্তী সময়েও চলতে থাকে। সামরিক শাসনামলে গড়ে ওঠা বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে ভারতের কংগ্রেসের এ ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠার সুযোগ স্বাভাবিকভাবে কম ছিল। আওয়ামী লীগ ও কংগ্রেসের বন্ধুত্বের পেছনে কয়েকটি কারণ ছিল : এক. ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তারা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে; দুই. দুটি দল অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতি অনুগত; তিন. দুটি দলের নেতৃত্ব বিশেষ করে নেহরু-গান্ধী পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পারিবারিক পর্যায়ে সম্পর্ক তৈরি হয়।
ভারতের জনগণ ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে নরেন্দ্র মোদির হাতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পণ করেছে। তিনি কংগ্রেসকে পরাভূত করেছেন, যে দলটিতে পরিবারতন্ত্র রয়েছে। যেহেতু নির্বাচিত পরাজিত দলটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভালো সম্পর্ক রয়েছে, এ কারণে কেউ কেউ মনে করছেন যে, নরেন্দ্র মোদির সরকারের সঙ্গে তাদের কিছুটা মনস্তাত্তি্বক দূরত্ব থাকবে। একই সঙ্গে কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, বিএনপির সঙ্গেও বিজেপি কিংবা এ দলের কোনো নেতার বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়নি। পশ্চিমা দেশগুলোর প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক অনেকটা আনুষ্ঠানিক বা অফিসিয়াল ধরনের। বিজেপির সঙ্গেও সম্পর্ক সে ধরনের। ব্যক্তি পর্যায়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো দলের সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। ভবিষ্যতে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে এ ধরনের সম্পর্ক কেউ গড়ে তুলতে পারবেন কি-না, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
নরেন্দ্র মোদির সামনে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ ভারতের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। একই সঙ্গে বিভেদের রাজনীতিও বন্ধ করা চাই। ধর্ম-বর্ণের বিভেদ অবশ্যই কাটিয়ে উঠতে হবে। বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের প্রতিও তাকে মনোযোগী হতে হবে। এ জন্য একটি শর্ত হচ্ছে স্থিতিশীলতা। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতের কাম্য হবে না। আমাদের রাজনীতিকদেরও এ বাস্তবতা বুঝতে হবে এবং এ জন্য ভারতের মুখাপেক্ষী হয়ে নয়, কী করণীয় সেটা বের করতে হবে ভেতর থেকে। সন্দেহ নেই যে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভারতের নতুন সরকার বাংলাদেশের সরকারি দল যেভাবে যে বিষয়টি চাইবে, সেটা মেনে নেবে বলে মনে হয় না। ভারতের জনগণও চাইবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্বশীল প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা গ্রহণ করবেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নেও সেটাই দেখতে চাইবে। এখানে কীভাবে নতুন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে এবং কী ধরনের প্রতিষ্ঠানের অধীনে সেটা হবে, তা আমাদেরই আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। রাজনৈতিক দলের হাতেই দেশের শাসনভার থাকুক এবং অন্য কোনো শক্তির কর্তৃত্ব-আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি না হোক, সেটা আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। এখানে মৌলবাদের ভয় রয়েছে এবং তা মোকাবেলাও করা চাই। তবে এ জন্য রাজনৈতিক পথেই চলতে হবে। আওয়ামী লীগ গত প্রায় ছয় বছর একটি ছকবাঁধা পথে চলেছে। এখন তাকে অবশ্যই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে। নরেন্দ্র মোদি যে উন্নয়নের কথা বলছেন, তা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অবশ্যই থাকা চাই। একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে, ভারত অর্থনৈতিকভাবে যত অগ্রসর হবে, বাংলাদেশ তার সুফল পাবে এবং এটা সবচেয়ে ভালোভাবে মিলবে যদি এখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকে। এটা অর্জনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে চাই উপযুক্ত রাজনৈতিক ফর্মুলা।
এটা ঠিক যে, নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। গুজরাটে দাঙ্গার সময় তিনি ক্ষমতায় ছিলেন এবং কেন্দ্রে ছিল অটল বিহারি বাজপেয়ির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। বাজপেয়ি গুজরাট সফরে গিয়ে বলেছিলেন, সেখানে রাজধর্ম রক্ষিত হয়নি। নির্বাচনের আগেও আসাম এবং উত্তর প্রদেশে বিজেপি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি করেছিল এবং তাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সাধারণ নির্বাচনে ধর্মীয় মেরুকরণ সৃষ্টিতে এর ভূমিকাও থাকতে পারে। নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জিত হওয়ায় আপাতত তিনি হয়তো সেই সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলতে যাবেন না। তবে বিজেপির ক্যাডারদের তিনি কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এ বিপদ দেখা দিলে নরেন্দ্র মোদির উন্নয়নের স্লোগান নিছক ফাঁকা বুলিতে পরিণত হবে। সাম্প্রদায়িক বিভাজন থাকলে কোনো দেশ উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে পারে না, এটাই অভিজ্ঞতা।
নরেন্দ্র মোদির সামনে আরেকটি বিপদ হচ্ছে দুর্নীতি। তার দলের লোকেরা নির্বাচনে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। এটা তুলে আনার জন্য তারা যদি সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের দিকে হাত বাড়ায়, তাহলে উন্নয়ন শিকেয় উঠবে। সরকারও দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাবে। এ অবস্থায় নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য নরেন্দ্র মোদি ফের উগ্র ধর্মান্ধতার আশ্রয় নিতে পারেন, এমন শঙ্কা রয়েছে। এক যুগ আগে গুজরাটের দাঙ্গা তাকে এখনও তাড়িয়ে বেড়ায়। বিশ্বের অনেক স্থানে এ জন্য তার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। নতুন করে ওই ভ্রান্ত পথে চললে বিশ্বসমাজ তাকে গ্রহণ করবে না, এটা তাকে উপলব্ধি করতে হবে। তিনি হিটলারের একজন সমর্থক। এটাও পশ্চিমা বিশ্বে তার সমালোচনার কারণ। নির্বাচনে বিজয়ের পর বারাক ওবামা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সরকারও তার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি নিশ্চয়ই এ সুযোগকে তার নতুন ভাবমূর্তি গড়ে তোলার জন্য কাজে লাগাবেন।
তার সামনে আরও একটি সুযোগ রয়েছে_ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন। দুই দেশের বাণিজ্য এখন বছরে ৬০ বিলিয়ন ডলারের। পশ্চিমা বিশ্ব কোনো দেশে বিনিয়োগের জন্য মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন দেখে থাকে। চীন তার ধার ধারে না। তারা যে যখন সরকারে থাকে তার সঙ্গেই কাজ করায় আগ্রহ দেখায়। এসব বিবেচনায় নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে চীনের সম্পর্ক সহজ থাকার কথা। তবে এ ক্ষেত্রে একটি কিন্তু রয়েছে। চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। পাঁচ দশক অতিক্রান্ত হলেও দুই দেশের সীমান্ত সংঘাতের ক্ষত শুকায়নি। তিব্বতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক ভারতে স্থায়ী হয়েছে এবং একাধিক নতুন প্রজন্ম এসেছে। তারা চীন-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নকে কীভাবে নেবে, সেটাও প্রশ্ন। আবার চীন-ভারত মৈত্রীকে পশ্চিমা বিশ্ব কীভাবে দেখবে, সেটাও দুই দেশের নেতৃত্বকে মনে রাখতে হবে।
এসব প্রশ্ন প্রথম দিন থেকেই নরেন্দ্র মোদিকে বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি কি পারবেন সমৃদ্ধ ও আধুনিক ভারত গড়ে তুলতে? এখানে বলা দরকার যে, কংগ্রেসের অভাবনীয় পরাজয়ের পেছনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কাজ করেছে। এক. পরিবারতন্ত্র। উপমহাদেশে পরিবারতন্ত্র রয়েছে, এটা বাস্তবতা। কিন্তু এটাও বাস্তবতা যে, কোনো ট্র্যাজেডির প্রেক্ষাপটেই পরিবারতন্ত্র ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর সহজেই রাজীব গান্ধী নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। রাজীব গান্ধীর পর সোনিয়াও দলের হাল ধরতে পেরেছেন এবং দুই টার্ম দলকে জয়ী করাতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু রাহুল গান্ধীকে সামনে আনার চেষ্টা সফল হয়নি। তিনি জনগণের সহানুভূতি লাভ করতে সক্ষম হননি। নরেন্দ্র মোদির এ সমস্যা নেই। তার দলের কাঠামোতেও গণতন্ত্রের চর্চা কংগ্রেসের তুলনায় বেশি।
নির্বাচনে আম আদমি পার্টি প্রত্যাশিত ফল লাভ করতে পারেনি। তবে এ ধরনের দলের ভবিষ্যৎ রয়েছে। পাঞ্জাবে দলটি বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। দিলি্লতে প্রতিটি আসনে দ্বিতীয় হয়েছে। কংগ্রেসের মতো বিজেপিও ব্যর্থ হলে তারা সে সুযোগ হয়তো নিতে পারে। তারা জনগণের আসল সমস্যা নিয়ে কথা বলছে এবং বিকল্প হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করছে। নরেন্দ্র মোদি উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। তিনি ব্যর্থ হলে কংগ্রেস কি ফের বিকল্প হবে? নাকি আম আদমি পার্টি বা তার মতো কেউ সে স্থান পূরণ করবে?
অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন