|
ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী
|
|
ভারতে সাম্প্রদায়িকতার উত্থান : দুশ্চিন্তা ও প্রত্যাশা
15 May, 2014
অনেক মানুষ একত্রে বাস করলে মাঝে মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ লেগে যাওয়া বিচিত্র কিছুই নয়। সেই মানুষগুলো আবার যদি একাধিক সম্প্রদায়ে বিভক্ত থাকে, তাহলে তাদের সম্প্রদায়গত স্বার্থ নানা ধরনের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের উদ্ভব ঘটায়। অনুরূপভাবে দুটি দেশ পাশাপাশি থাকলে তাদের সম্পর্কও নিত্যদিন টানাপড়েনের মধ্যে থাকে। চাণক্য বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের প্রকৃত বন্ধুত্ব হবে তার নিকটতম প্রতিবেশীর পরবর্তী প্রতিবেশীর সঙ্গে।’ মহাপণ্ডিত চাণক্যের এ বাণী সর্বক্ষেত্রে সর্বতোভাবে প্রযোজ্য না হলেও চারদিকে তাকিয়ে তার যথার্থতা অনুধাবন করা যায়। উপমহাদেশের আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের বিদ্যমান ধরন হতে পারে তার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। সেই নিরিখে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপড়েনে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
২. সাতচল্লিশে ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল ধর্মীয় বিভাজনের ভিত্তিতে। উপমহাদেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের নানা অভিযোগ ছিল সংখ্যাগুরু হিন্দুর বিরুদ্ধে। তাদের সেই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েছে মুসলিম লীগ। মুসলমানরা বিপুলভাবে মুসলিম লীগের পতাকাতলে সমবেত হয়ে মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক আবাসভূমি দাবি করেছিল। কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা এ দাবি লুফে নিতে দেরি করেনি। পৃথক ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের মুসলমানরা স্বেচ্ছা-নির্বাসিত হয় দুই প্রান্তিকে। ফলে গোটা উপমহাদেশ কার্যত হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির অবাধ চারণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। সাংবিধানিকভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে ঘোষিত হলেও ভারতের জনমনেও এ ধারণা বরাবরই স্পষ্ট ছিল যে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি মুসলমানের জন্য, আর ভারত হিন্দুদের জন্য। অর্থাৎ, কাগজে-কলমে ধর্মনিরপেক্ষ বলা হলেও বাস্তবে পাকিস্তানের বিপরীতে ভারত একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবেই প্রতিভাত হয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে, সেই বাস্তবতা ততই প্রকট হয়ে উঠছে। স্বাধীন হওয়ার ৬৬ বছর পর আজকের ভারতে কংগ্রেস এবং বামপন্থী দলগুলোকে পেছনে ফেলে সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে বিজেপির জয়জয়কার সেটাই প্রমাণ করে।
৩. এই উপমহাদেশ বরাবরই ছিল বহু নৃ-গোষ্ঠী, বহু ভাষা ও বহু ধর্মের মিলনমেলা। এ বৈচিত্র্য নিয়েই এখানে নানা রাজশক্তির উত্থান-পতন ঘটেছে। ছয়-সাতশ’ বছরের মুসলমান শাসন এবং দুশ’ বছরের খ্রিস্টান শাসনে সেই বৈচিত্র্য অটুট থেকেছে। বস্তুত, এ উপমহাদেশের ব্রিটিশ উপনিবেশটি কখনোই একক সত্তা হিসেবে বিবেচিত হয়নি। প্রদেশগুলো নিজ নিজ আঞ্চলিক পরিমণ্ডলে নিজস্ব রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক আবহে আবর্তিত হয়েছে।
কিন্তু ১৯৪৭ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন জন্ম দেয় সম্পূর্ণ নতুন সমীকরণের। বহু সহস্র বছরের নৃতাত্ত্বিক, আঞ্চলিক ও ভাষা-সংস্কৃতিগত বৈচিত্র্য ও মেলবন্ধন সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে কেবল হিন্দু ও মুসলমান এ দুই ধর্মীয় পরিচয়কে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে গোটা উপমহাদেশকে দুটি শত্র“ শিবিরে বিভক্ত করার শল্য-চিকিৎসা সম্পন্ন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দুই দিকের দুই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী বিজয়ানন্দ অনুভব করলেও এতে জয় হয়েছে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের। যে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ রণকৌশলে এ উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পত্তন ও বিকাশ ঘটেছে, সাতচল্লিশে সেই রণকৌশলই চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে। পৃথিবীর এক-পঞ্চমাংশ মানুষের এ উপমহাদেশ আজও বহুধা বিভাজিত এবং সে কারণে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই পশ্চিমা রাজনীতি-কূটনীতির অনুগমনই তার কপালের লিখন।
৪. ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র নির্মাণের প্রক্রিয়ায় এ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু সহস্র বছরের সমাজ ও জন-বিবর্তনে নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি-অর্থনীতির পরিমণ্ডলে বিকশিত হয়ে ওঠা ঐতিহাসিক জাতিসত্তাসমূহ নেহরু-প্যাটেল-জিন্নাহর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং সমকালীন উগ্র ধর্মান্ধতার নিচে চাপা পড়ে যায়। ফলে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর এ উপমহাদেশ তার প্রকৃতিগত বহুজাতিক অবয়ব, যা ঔপনিবেশিক শাসনেও অটুট ছিল, সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলে এবং দুটি ধর্মীয় পরিচয়ের কৃত্রিম রাষ্ট্রযন্ত্র তার স্থলাভিষিক্ত হয়।
উপমহাদেশের আঞ্চলিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক বিভাজনগুলো মোটা দাগে ভাষাভিত্তিক। সেই নিরিখে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর এ উপমহাদেশ অনেকগুলো ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রে বিভক্ত হওয়াই ছিল বিজ্ঞানসম্মত ও যথাযথ সমাধান। আজকের ভারত তার প্রদেশ গঠনেও ভাষাকেই মূল ভিত্তি হিসেবে নিয়েছে। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে ভারতের ‘স্টেট রি-অর্গানাইজেশন কমিটি’ ভাষার ভিত্তিতে প্রদেশ গঠনের নীতি সুপারিশ করে। অতঃপর সেখানে একের পর এক নতুন ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠিত হচ্ছে। সর্বশেষ দৃষ্টান্ত অন্ধ্র প্রদেশ ভেঙে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন।
৫. ব্রিটিশ শাসনের অবসানকালে এককেন্দ্রিক একক রাষ্ট্র গঠনের প্রবণতা পরিহার করে বহুকেন্দ্রিক কনফেডারেশন বা শিথিল ফেডারেশন গঠনের প্রস্তাবনাও টেবিলে ছিল। বিশেষ করে ব্রিটিশ মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাবটি সেভাবেই রচিত হয়েছিল। কিন্তু সেদিনের কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতারা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক ধনিক-বণিক শ্রেণী চেয়েছেন অবাধ লুণ্ঠনের ‘গেইম রিজার্ভ’।
শেষ পর্যন্ত তারা জয়ী হয়েছেন এবং তার পরিণতি আমরা আজ চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। পাকিস্তান আগেই তার রাষ্ট্রীয় সংহতি হারিয়েছে। একটি আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের বদলে পরিণত হয়েছে পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত অনেকগুলো জনগোষ্ঠীর যুদ্ধক্ষেত্রে। ধর্মের বন্ধন তাকে কোনো সুসংহত ভিত্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অপরদিকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ পতাকাবাহী ভারতও পাকিস্তানের বিপ্রতীপে হিন্দুত্বের গেরুয়া পোশাকে ধর্মীয় উন্মাদনার কাছেই ক্রমশ আÍসমর্পণ করে চলেছে। এবারের ভারতীয় লোকসভা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ধর্মই মুখ্য বিষয় হয়ে উঠে এসেছে। সব প্রার্থীকেই ঘটা করে গঙ্গাøানে নামতে হচ্ছে। বিজেপির প্রধানকেও মুসলমান ধর্মনেতার দোয়া নিতে হচ্ছে। ভোটের নিয়ামক হিসেবে ‘বর্ণবাদ’ আগের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
৬. আমাদের অনেক ‘আধুনিক মনা’ মানুষের বক্তৃতা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রতিটি বক্তৃতাতেই তারা সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বাংলাদেশকে ‘সাম্প্রদায়িকতামুক্ত’ করতে হবে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কায়েম করতে হবে- ইত্যাকার কিছু বাক্য তাদের বক্তব্যের অনেকটা অংশজুড়ে থাকে। যেন এটাই এদেশের মূল সমস্যা।
এদেশে সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা আছে। কিন্তু সেটা মূল সমস্যা নয়।
বাংলাদেশের প্রধান ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। আমি আমার হিন্দু বন্ধুদের বলে থাকি, বাংলাদেশে যদি শতকরা ১০ জন হিন্দু থাকে তাহলে তো তোমাদের ১০ শতাংশ খুন-ডাকাতি-রক্তারক্তি-নারী নির্যাতনেরও ভাগ নিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি বন্ধুদের বলি, সেখানে যদি ৫০ শতাংশ পাহাড়ি থাকে, তাহলে তাদের সেখানে সংঘটিত সব অনাচারের ৫০ শতাংশের ভাগীদার হতে হবে (সংখ্যায় কম হওয়ার কারণে এই ‘জোর যার মুল্লুক তার’-এর জমানায় আনুপাতিক ভাগটা একটু বেশি হওয়াও বিচিত্র নয়)। কিন্তু কোথাও জমিজমা নিয়ে বিরোধ, নারীঘটিত হাঙ্গামা, রাজনৈতিক সন্ত্রাস ঘটলে- এক পক্ষে যদি হিন্দু ও অপর পক্ষে মুসলমান থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ‘সাম্প্রদায়িক সংঘাতে’র জিগির তোলা যুক্তিসিদ্ধ নয়। কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে বা ঘটছে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। একজন হিন্দুর গায়ে আঘাত লাগলে, কিংবা একজন পাহাড়ি নিগ্রহের শিকার হলেই তার স্বরে দুনিয়াজুড়ে ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা’র আর্তনাদ ছড়ানোর কোনো অর্থ হয় না। এতে কেবল নিজেদের মুখেই নিজেরা চুনকালি মাখানো হয়। বিশেষ করে ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে যেসব সংঘাত ঘটে, প্রতিপক্ষ দলের লোকের জেতার জন্য মরিয়া হয়ে যখন পরস্পরকে শত্র“ জ্ঞান করে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন তাদের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়। এটা নিছক ক্ষমতা ও স্বার্থের লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়। এর মধ্যে আবার যদি এক পক্ষ বিশেষ কোনো ধর্মাবলম্বী হয় এবং তাদের ‘ব্লক ভোট’ প্রতিপক্ষের পরাজয়ের কারণ হয়, সেক্ষেত্রে এ রাজনৈতিক বিভাজন ধর্মীয় বিভাজন হিসেবে চিত্রিত হয়। যা মোটেই বাস্তবতার যথার্থ প্রতিফলন নয়। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই সংখ্যালঘুরা এ বিড়ম্বনার শিকার হয়ে থাকেন।
৭. আমরা শুরুতেই বলেছি, সম্প্রদায় থাকলে সাম্প্রদায়িক বিভাজনও থাকবে। মানবসমাজকে সব ধরনের বিভাজন থেকে মুক্ত করে একটি ‘একক মানবসমাজ’ গড়ে তোলা সব কল্যাণকামী মানুষের স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্ন ও বাস্তবতার মাঝখানে ফারাক থেকে যায়। ফারাক রয়েই গেছে। সেটা মনে রেখেই আমাদের সমাজ-প্রগতির জন্য নিরন্তর লড়ে যেতে হবে।
এই দেখুন, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ভারত গত ৬০-৭০ বছর ধরে পাকিস্তানকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বলেছে, মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক বলেছে। অথচ আজ সেই ভারতে কট্টর ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, ধর্মনিরপেক্ষতাবিরোধী এবং আপাদমস্তক সাম্প্রদায়িক শক্তি সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারতের শক্তিমান ধনকুবের গোষ্ঠী, উচ্চশিক্ষিত-উচ্চবিত্ত-উচ্চপদস্থ ভারতীয়রা সেই দলের অন্ধ সমর্থক।
ভারতে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানে এদেশের মানুষ বিচলিত, তাতে সন্দেহ নেই। কারণ, ভারতের সাম্প্রদায়িক সংঘাতের জের বারবার এই দেশেও এসে পড়েছে। ১৯৪৬ সালে কলকাতার দাঙ্গার ঢেউ এদেশে লেগেছে। ’৫০ ও ’৬৪-তে বিহারের দাঙ্গার প্রতিক্রিয়া আমরা দেখেছি। এ দেশেও দাঙ্গাবাজ লোকের অভাব থাকার কথা নয়। তবে সৌভাগ্যবশত বাংলার মানুষের সহজাত ধর্মীয় সহনশীলতার কারণে এখানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেশিদূর গড়াতে পারে না। তবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও বিদ্বেষের কারণে যে গণআতংকের সৃষ্টি হয়, তার ধকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কেই পোহাতে হয়। গোটা জাতিকেও।
৮. লক্ষ্য করার বিষয়, সাতচল্লিশে উপমহাদেশের আঞ্চলিক জাতিসত্তাগুলোকে ধর্মীয় আবহের নিচে চাপা দেয়ার প্রয়াস সফল হলেও জনমিতিগত বাস্তবতায় এখন ভারতজুড়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটে চলেছে। প্রান্তিক রাজ্যগুলোতে তো বটেই, কেন্দ্রীয় অঞ্চলের রাজ্যগুলোতেও আঞ্চলিক দলগুলো মুখ্য ভূমিকায় চলে এসেছে। বৃহৎ পুঁজির বিশাল দলগুলো সামগ্রিকভাবে ক্ষমতাবান হলেও রাজ্য স্তরের আঞ্চলিক দলগুলো ক্রমেই রাজনীতির দাবার ছকে নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে শেষ হাসিটি কে হাসবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এরই মধ্যে আঞ্চলিক দলগুলোর সমন্বয়ে তৃতীয় শক্তির সরকার গঠনের সম্ভাবনার কথাও আলোচনায় আসছে।
ভারতকে যারা এককেন্দ্রিক ফ্যাসিস্ট চরিত্রের দিকে নিয়ে যেতে চাইছেন, তারা আঞ্চলিক শক্তির এ উত্থানকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আদতে এর মধ্য দিয়েই সম্ভবত ভারতের গণতন্ত্র অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে। লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব আঞ্চলিক দল দৃঢ় ভিত্তি পেয়েছে এবং নিজ নিজ অঞ্চলে এখন রাজনীতির নিয়ামক হয়ে উঠেছে তার কোনোটাই ধর্মাশ্রয়ী নয়। পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জি থেকে শুরু করে বিহারের লালু ও নীতিশ, উত্তর প্রদেশের মায়াবতী বা মুলায়েম, তামিলনাড়ুর জয়ললিতা- তাদের সবাই সাতচল্লিশের হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতি করছেন। তারা জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় সর্বভারতীয় ইস্যু নিয়ে কথা বলেন, কাজ করেন, তবে নিজ নিজ রাজ্যে তাদের সাফল্যের পেছনে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক চেতনাই যে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এটা নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ের ভারতীয় রাজনীতির অতিশয় তাৎপর্যপূর্ণ ইতিবাচক দিক।
ভারতজুড়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অশ্বমেধ যজ্ঞের যে আয়োজন চলছে তার মোকাবেলায় এ আঞ্চলিক শক্তিগুলো অগ্রণী ভূমিকায় থাকবে- আমরা সেই প্রত্যাশাই করব। সৌভাগ্যবশত ভারতে নরেন্দ্র মোদিরা যেমন আছে, তেমনি তাদের বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানানোর মানুষও আছে। সেখানেই ভরসা।
ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী : রাজনীতিক, ভূরাজনীতি ও উন্নয়ন গবেষক
- See more at: http://www.jugantor.com/sub-editorial/2014/05/15/99347#sthash.KrsF8ag5.dpuf
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন