|
ড. সা'দত হুসাইন
|
|
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ফরমালিন ঢুকে গেছে
08 May, 2014
সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা'দত হুসাইন বলেছেন, দেশের আইনের শাসন ভয়ঙ্করভাবে ঝুঁকির মুখে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মনের স্বস্তি সম্পূর্ণ বিলুপ্তির পথে চলে এসেছে। এখন পরিস্থিতি উত্তরণে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সম্পৃক্তদের দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের প্রশাসনের প্রতি জনগণের মোটামুটি আস্থা ফিরিয়ে আনতে এর বিকল্প নেই। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে এসব কথা বলেন। এ ছাড়া এখন শাকসবজি ফলমূলের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ফরমালিন বিষ ঢুকে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এলিট ফোর্স র্যাব গঠনের নীতিগত প্রক্রিয়ার সঙ্গে চাকরিজীবনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকা ড. সা'দত হুসাইন বলেন, নারায়ণগঞ্জের র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার ঘটনাটি খুবই অপ্রত্যাশিত। অবশ্য যখন কোনো জিনিসে সামগ্রিকভাবে পচন ধরে তখন এ ধরনের বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যায়। অর্থাৎ আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামগ্রিক যন্ত্রে পচন ধরেছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন কাউকে দিয়ে খারাপ কাজ করানো হয়, তখন সে আস্তে আস্তে সুযোগ নিতে চাইবেই। আবার সঠিক প্রক্রিয়াগুলো বা প্রয়োজনীয় ব্যাকরণ মেনে না চললেও এ ধরনের পরিস্থিতি হয়। যেমন- র্যাব গঠনের পরই নিয়ম করা হয়েছিল বিভিন্ন বাহিনী থেকে কর্মকর্তারা এসে সর্বোচ্চ এক বছর ও সৈনিক পদমর্যাদার সদস্যরা ছয় মাস থাকবেন। এ জন্য তারা বিশেষ ভাতাও পান। কিন্তু এখন এ নিয়মগুলো কতটা মানা হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। দেখা যাচ্ছে, একেকজন অনেক দিন ধরে থাকছে, তাদের শেকড় গজিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। র্যাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের অভিযুক্ত নূর হোসেনের পরিচয় থাকার বিষয়টিই আশ্চর্যজনক। তাদের তো দেখা-সাক্ষাৎই হওয়ার কথা নয়। পরিচয় বা স্বার্থ হাসিল করা তো পরের কথা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মূল্যবোধে পচন ধরা, কমান্ড স্ট্রাকচার নষ্ট হওয়ার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেক সময় কমান্ডে থাকা ব্যক্তিই অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন।
ড. সা'দত বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রাজনৈতিক ব্যবহার এর পচনকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সর্বশেষ নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিন এদের যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তখন কিছুটা সুযোগ এরা নেবে এটাই তো স্বাভাবিক। সে সুযোগ নিতে গিয়ে অনেকে যেন মূল দায়িত্বের বাইরে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। সাহসী ও কার্যকর একটি বাহিনীর এ পরিণতি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। এগুলো থেকে মুক্তি পেতে কেচে-গণ্ডুষ (ঢেলে সাজানো) ছাড়া কোনো উপায় আছে বলে আমার মনে হয় না।
ড. সা'দত বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে জনগণ যে অত্যন্ত আতঙ্কিত তা বলার অবকাশ রাখে না। এ আতঙ্ক দূর করতে সরকারকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা এগুলোর সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের যেমন গ্রেফতার করে কারাগারে নেওয়া হয়েছে, তেমনি এখানেও ব্যবস্থা নিতে হবে। জড়িতরা যত বড় রাঘোব-বোয়ালই হোক, ব্যবস্থা নিতে হবে তাদের বিরুদ্ধে। র্যাবের কেউ সম্পৃক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি জড়িত না পাওয়া যায় তাও জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, সরকার এ বিষয়ে সিরিয়াস। তিনি বলেন, র্যাবের কেউ জড়িত থাকলে তাকে শাস্তি দিলেই যে পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে তা ভাবাটা হবে অত্যন্ত বোকামি। বরং জনমনে সন্দেহ রেখে জড়িতদের আড়াল করলেই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। কারণ বাংলাদেশে র্যাবের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে অনেক মানুষই আছে। এখন বাহিনীর কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা আনা ও নিয়মনীতিগুলো মেনে চলা আশু প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
(বাংলাদেশ প্রতিদিন)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন