|
তৈয়বুর রহমান
|
|
কাশ্মীরে ভোটের পালে হাওয়া লাগেনি
29 Apr, 2014
সাদা রঙের কাশ্মীরী পোশাক পড়ে দাঁড়িয়ে আছেন চারজন রাজনীতিক। মাথায় টুপি। হাতে ধরে আছেন ব্যালট বাক্স। ওগুলোর ওপর লেখা ‘আমাকে ভোট দিন’। কিন্তু চারজন লোকের ছায়া মাত্র একটি, ভারতীয় সৈনিক। তাও তাদের চেয়ে অনেক বড়। হাতেও আছে বিশাল আকৃতির বন্দুক। মুখে ভিলেন মার্কা হাসি।
এটি একটি কার্টুন। এঁকেছেন রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট মির সোহেল।
এর মাধ্যমে তিনি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন-কেন ভারতের কাশ্মীরে চলমান লোকসভা নির্বাচনের প্রতি মানুষের এত অনাগ্রহ।
২১ বছর বয়স্ক সোহেলের স্মৃতিতে আছে রাইফেল, রক্ত, কাঁটাতারের বেড়া ও সেনাবাহিনীর বুট। ঝিলাম নদীর তীরে বসে চা খেতে খেতে তিনি বলেন, ‘জনগণ আসলে নরকের দারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। তারা ভালো করেই জানে নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো কিছুরই পরিবর্তন ঘটবে না।’
তার কার্টুনে স্পষ্টই ফুটে উঠেছে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরীদের তিক্ত একটা অনুভূতি। একথা স্পষ্ট করতে গিয়ে তিনি বেশ কয়েকটি কার্টুন একেছেন। এর মধ্যে একটিতে দেখা যাচ্ছে- সেনাবাহিনীর বুটের মতো ব্যালট বাক্স। আরেকটিতে বিশাল একটি মুরগি অক্লান্ত পরিশ্রম করে অতি ক্ষুদ্র একটি ডিম পেড়েছে। তাতে আবার লেখা রয়েছে ‘ভোট পড়ার হার’।
কাশ্মীরেএ পর্যন্ত ভোট পড়ার হার খুবই কম। কিছু কিছু এলাকায় যেমন, দক্ষিণ কাশ্মীরের সোইমোহ ও ভাতগুন্ডেতে তো কোনো ভোটই পড়েনি।
দেশটির অন্যান্য রাজ্যের চিত্র অবশ্য আলাদা। রীতিমতো নির্বাচনী জ্বরে ভুগছে রাজ্যগুলো। রাস্তায় রাস্তায় বিশাল সমাবেশ হচ্ছে। পোস্টার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে বিভিন্ন শহর। কিন্তু কাশ্মীরের ছবি একেবারে আলাদা। রাজনৈতিক সমাবেশ হলেও হাতে গোনা কয়েকজন লোক উপস্থিত হচ্ছে। ভোট দেওয়ার ইচ্ছেই নেই ভোটারদের মধ্যে। বরং ভোট বয়কট করার ডাক দিচ্ছে তারা। সেই সঙ্গে বারবার প্রশ্ন তুলছে, ‘কেন ভোট? এতে লাভ কি? আর যিনি জিতবেন তিনি তো আমাদের নন।’
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে ভোটাভুটি হচ্ছে পাঁচ দফায়। ৫৪৩ আসনের লোকসভায় কাশ্মীরের প্রতিনিধিত্ব করবেন ছয়জন। এক কোটি ২৫ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত রাজ্যটিতে ভোটে দাঁড়িয়েছেন তিনজন নারী ও ৭০ জন পুরুষ।
ভোট না দেওয়ার ইচ্ছার কথা বলতে গিয়ে ২৬ বছর বয়স্ক মাহুম শাবির প্রশ্ন রাখেন, ‘আমাদের ভাগ্য আমাদের নির্ধারণের সুযোগ যাদি তারা দিয়েই থাকে তাহলে প্রত্যেকটা বাড়ির সামনে সেনাবাহিনী কেন? তাও আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে।’
এখানেই থেমে যাননি তিনি, একে জেলখানার সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের হলেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা কেবল ভোট কেন্দ্রের পথ দেখিয়ে দিচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরে সৈন্যদের দেওয়া হয়েছে ব্যাপক ক্ষমতা। তাই কথা বলারও উপায় নাই।’
ভোট কম পড়ার মূল কারণ স্বাধীনতার আকাঙ্খা কিংবা পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত বিদ্রোহীদের ভোট বয়কটের হুমকি। এছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ ও সহিংস লড়াই।
এরই মধ্যে সোপিয়ান জেলায় ২৪ এপ্রিল নিহত হয়েছেন একজন নির্বাচন কর্মকর্তা। মানলু গ্রামে সংঘর্ষে নিহত হয় দুই সৈন্য ও তিন বিদ্রোহী। মাত্র ২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে অনন্তনাগে। অথচ সেখানে ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ।
মাহুম শাবির এই নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিস্মিত। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িকতা তিনি কিভাবে ঠেকাবেন? এই প্রশ্নের উত্তর তিনি খুঁজে পান না। উত্তর খুঁজে পান না কাশ্মীরে সংঘাত তিনি কিভাবে ঠেকাবেন?
দেশজুড়ে মোদি প্রোপাগান্ডার ঢেউ কাশ্মীরে লাগেনি বলে জানান এই কাশ্মীরী তরুণ। বরং তিনি মনে করেন, মোদির প্রতি ঘৃণা আগে ছাইচাপা ছিল। আর এখন তা খোলামেলা। মোদি নিজেও তা বুঝতে পারেন বলে উল্লেখ করে মাহুম শাবির বলেন, ‘তাই তিনি প্রচার চালাতে কাশ্মীরে আসেননি। আর আসলেও তিনি কোনো সমর্থক খুঁজে পাবেন না।’
নির্বাচন বয়কটের ঢেউ লেগেছে রাজধানী শ্রীনগরেও। সেখানে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ৩০ এপ্রিল। এরই মধ্যে স্বাধীনতাকামী জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ) ও হুররিয়াত কনফারেন্সের উভয় অংশের নেতারা তাদের বক্তৃতা, পোস্টার ও লিফলেটে নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছেন। এমনকি, নির্বাচন বয়কটে উদ্বুদ্ধ করতে বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন তারা।
সূত্র: আল জাজিরা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন