প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তাঁর দেহে বঙ্গবন্ধুর রক্তধারা প্রবাহিত। বঙ্গবন্ধু তাঁকে প্রতিপালন করে বড় করেছেন এবং তিনি বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারী হয়েছেন। বিনিময়ে কন্যা হিসেবে তিনিও পিতার প্রতি তাঁর কর্তব্য যথাযথ পালন করার চেষ্টা করছেন।
কিন্তু স্বাধীনতার আগে তিনি যখন 'বঙ্গবন্ধু' হয়ে ওঠেননি, তখন যারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে রাজপথে নেমেছে, সেটা কোনো আত্মীয়তা, কোনো রক্তের সম্পর্ক কিংবা কোনো বৈষয়িক উত্তরাধিকারের কারণে ছিল না। পাকিস্তানি শাসকচক্র যখন তাঁকে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ক্যান্টনমেন্টের বন্দিশালায় আটক রেখে 'গোপন বিচারে' ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানোর ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে এনেছিল, সেদিন যারা জীবন বাজি রেখে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, তাঁকে সেই ফাঁসির মঞ্চ থেকে ছিনিয়ে এনেছিল, তারা তাঁর উত্তরাধিকারের বেনিফিশিয়ারি নয়।
আমার নিজের কথাই বলি। ষাটের দশকে ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার পরের দিনগুলো কিভাবে কেটেছে, কোথায় কেটেছে, তার হিসাব নেওয়ার কোনো প্রয়োজন এখন আর কারো নেই। ছাত্রজীবনে পাঁচ দফায় প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাগারে কাটিয়েছি। বাকি সময়টাতেও বেশির ভাগ সময় কেটেছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে। ষাটের দশকের সেই দিনগুলোতে এমন হাজার হাজার তরুণ তাদের যৌবনের শ্রেষ্ঠতম দিনগুলো রাজপথে বিসর্জন দিয়েছে। পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে। লেখাপড়ার ইতি ঘটেছে অনেকের। ভারতের দিকে তাকালে দেখা যায়, স্বাধীনতার জন্য যাঁরা শতবর্ষ আগে উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান রেখেছেন, তাঁদেরও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্মরণ করা হয়। তাঁরা জাতীয় বীর হিসেবে পূজিত হচ্ছেন। আমাদের স্বাধীনতা এসেছে কেবলই একাত্তরের '৯ মাসে'। আরো নির্দিষ্ট করা হলে কেবল একাত্তরের ডিসেম্বরে প্রতিবেশী দেশের '১৩ দিনে'র যুদ্ধে। তার নিচে চাপা পড়ে গেছে ষাটের দশক। আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের মূল অধ্যায়টি।
স্বাধীনতাসংগ্রাম : মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের আত্তীকরণ
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে যদি আমরা আমাদের স্বাধিকার চেতনার উন্মেষের প্রতীক হিসেবে দেখি, তাহলে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনকে দেখতে হবে আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের প্রত্যক্ষ সূচনা হিসেবে। যা ধাপে ধাপে পত্র-পল্লবে-প্রতিজ্ঞায় বিকশিত হয়ে রূপান্তরিত হয়েছে অপ্রতিরোধ্য গণ-আন্দোলনে ও জনযুদ্ধে। ষাটের দশকের প্রতিটি বছরই যেন আমাদের স্বাধীনতা অভিমুখী অগ্রযাত্রায় সিঁড়ির একেকটি রক্তরঞ্জিত ধাপ।
১৯৬৬ সালে লাহোরে আইয়ুব খানের ডাকা 'গোলটেবিল' বৈঠকে শেখ মুজিবের 'ছয় দফা' দাবি তুলে ধরার ঘটনাটিকে বলা যায় আমাদের সেই স্বাধীনতামুখী অভিযাত্রায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। শুরুতে এ নিয়ে কিছু সমস্যারও সৃষ্টি হয়েছিল। ছয় দফা দাবি পেশ করার আগে শেখ সাহেব দলের কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেননি। এতে দলের সিনিয়র নেতারা ক্ষুব্ধ হন। এমনকি আওয়ামী লীগের 'তাত্ত্বিক নেতা' ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়াও। ছয় দফার ব্যাপারে ইত্তেফাকের 'মুসাফির' কলামে তাঁর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ পড়ে আমরা খুবই দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম।
তা সত্ত্বেও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমরা ছয় দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে কাগজে বিবৃতি দিয়েছি। এক বিকেলে আমরা কয়েকজন আউটার স্টেডিয়ামে ঘাসের ওপর গোল হয়ে বসেছিলাম এ বিষয়ে আমদের সিদ্ধান্ত স্থির করার জন্য। ছাত্রলীগের তখনকার সভাপতি মাযহারুল হক বাকী, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকসহ আরো কয়েকজন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে শেখ ফজলুল হক মণি, ওবায়দুর রহমান ও সিরাজুল আলম খান ছিলেন। আমি তখন ডাকসুর সহসভাপতি। আমার মত ছিল, সারা দেশ থেকে দলের সিনিয়র নেতাদের ডেকে একটা বড়সড় সভা করে এই সমর্থন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হোক। কিন্তু শেখ মণি চাইলেন বিলম্ব না করে তখনই সমর্থন জানিয়ে দিতে। শেষ পর্যন্ত ওই রাতেই একটা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আমরা কয়েকজন সেখান থেকে আগা মসিহ্ লেনে আমাদের তখনকার ছোট্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাই। আমি একটি বিবৃতি মুসাবিদা করি এবং ওই রাতেই তা বিভিন্ন কাগজে পৌঁছে দেওয়া হয়। পরদিন তা প্রকাশিত হয়।
এতে মানিক মিয়া বেশ রাগ করেন। কিন্তু আইয়ুব খানের একটি বক্তব্য পরিস্থিতি পাল্টে দেয়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ছয় দফাকে রাষ্ট্ররিরোধী আখ্যা দিয়ে 'রক্তের ভাষায়' তার জবাব দেওয়ার হুমকি দিলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আইয়ুব খানের এই হুমকির পর মানিক ভাই ভীষণ খেপে গেলেন। তিনি আমাদের সামনে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিলেন এবং পরদিন থেকেই তাঁর কলম ঘুরিয়ে ছয় দফার পক্ষে লিখতে শুরু করেন। কিছুদিন পরই শেখ সাহেব গ্রেপ্তার হয়ে গেলেন। তারপর এক এক করে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সবাইকে জেলে পোরা হয়। কেবল আমেনা বেগম বাইরে থাকলেন (এই ভদ্রমহিলা সেদিন অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে সেই চরম দুর্যোগে আওয়ামী লীগের ঝাণ্ডা উঁচিয়ে রেখেছিলেন)।
এই পরিস্থিতিতে ১৯৬৬ সালের সেই ঐতিহাসিক '৭ জুনের হরতাল'। এই হরতালই ছয় দফাকে গণভিত্তি দিয়ে সেদিনের পাকিস্তানের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ডাকসুর সহসভাপতি হিসেবে সেই হরতালের সমন্বয়ের দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হয়েছে (কেউ তা স্মরণ করে না!)। অতঃপর এক এক করে ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয়দের গ্রেপ্তার শুরু হয়। কিন্তু তাদের নির্যাতন যত বেড়েছে, আমাদের আন্দোলন ততই তীব্রতর হয়েছে। ইতিমধ্যে আমি ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। ১৯৬৬ সালের হরতালের বর্ষপূর্তিতে ১৯৬৭ সালের ৭ জুন বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগের রাতে ফজলুল হক হল ঘেরাও করে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অতঃপর সব কিছু ভণ্ডুল হয়ে যায়।
স্মরণীয় কারাস্মৃতি
জেলখানায় নিয়ে আমাকে রাখা হলো 'ওল্ড টোয়েন্টি সেল'-এ। এটা জেলের ভেতরে জেল। ডাবল লকআপ। এখানে সাধারণত দাগি আসামি খুনি-ডাকাতদের রাখা হয়। আমাকে এখানে কেন? খুব মন খারাপ করলাম। কিন্তু পরদিন ভোরেই মনটা ভীষণ ভালো হয়ে গেল।
সকালে ঘুম ভাঙল অতি পরিচিত কণ্ঠের ডাকাডাকিতে, 'তুমি এতক্ষণ ঘুমাচ্ছ, এতক্ষণ ঘুমালে শরীর খারাপ হয়।' চোখে-মুখে কিছু পানি ছিটিয়ে বাইরে ছুটে গেলাম। সেখানে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন 'মুজিব ভাই'! (তিনি সেই নামটাই পছন্দ করতেন)। হাতে একটা বিস্কুটের প্যাকেট। পাশে একজন 'ফালতু' (গণ্যমান্য বন্দিদের কাজের জন্য নিয়োজিত কয়েদি)। তার হাতে একটা চায়ের কেটলি। কনডেমড সেলের কষ্টটা মুহূর্তেই দূর হয়ে গেল। মুজিব ভাই বললেন, 'এখানে তোমার একটু কষ্ট হবে। আমিই ওদের বলেছি তোমাকে এখানে রাখতে।' (ভাবলাম, কষ্ট, না সৌভাগ্য।)
কয়েক দিন পর রাজ্জাককেও পাশে একটা সেলে আনা হলো। রাজ্জাক তখন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। মাসখানেক ওখানে ছিলাম। প্রতিদিনই মুজিব ভাই একইভাবে এসে দুজনকে ডেকে তুলেছেন। তারপর ঘণ্টাখানেক বাগানে পায়চারি। এই সময়টা আমার কারাজীবনের সবচেয়ে মধুর ও স্মরণীয় সময়। কারাগারের সেই একান্ত নির্জনতায় মুজিব ভাইও কি তাঁর দুই অনুগত শিষ্যকে কাছে পেয়ে সময়টা উপভোগ করেছেন? প্রতিদিনই তিনি তাঁর জীবনের নানা কাহিনী আমাদের শুনিয়েছেন। তাঁর ছোটবেলার গল্প করেছেন। গোপালগঞ্জে মধুমতী নদীতে লাফিয়ে পড়া, কলকাতার জীবনের নানা স্মৃতি, মুসলিম লীগের রাজনীতির নানা ঘটনা, আওয়ামী লীগের জন্ম, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন, আরো অনেক অনেক বিষয়। সুযোগ পেয়ে আমরা অনেক বেয়াড়া প্রশ্নও করেছি। তিনি উচ্চৈঃস্বরে হেসে উঠতেন। তত দিনে ছাত্রলীগের ভেতরে স্বাধীনতার চিন্তাভাবনার শিকড় বহু দূর বিস্তৃত হয়ে গেছে। আমরা 'আলাদা হয়ে গেলে' কিভাবে দেশ চলবে, সেটা নিয়েই হতো নিজেদের মধ্যে আলোচনায় মূল এজেন্ডা। কারাগারের সেই সুযোগে আমরা দুজন সেই বিষয়টা বারবার সামনে নিয়ে এসেছি। মুজিব ভাই সংযত উত্তর দিতেন। বলতেন, 'এ নিয়ে এভাবে সব সময় কথা বলবে না। দেয়ালেরও কান আছে।' জেলের বাগানে অনেক শিউলি ফুলের গাছ ছিল। ভোরে পুরো বাগান ফুলে ভরে থাকত। রাজ্জাক একদিন সেই ফুল সাজিয়ে বিরাট করে 'পূর্ব বাংলা' লিখেছে। সেটা দেখে মুজিব ভাই বকা দিলেন, 'এটা জেলখানা। কোথায় কী করতে হবে ভেবে কাজ করবে।' আমি একদিন হঠাৎ করে বলে বসলাম, 'আমরা স্বাধীন হয়ে গেলে আমাদের অর্থমন্ত্রী কে হবেন?' মুজিব ভাই জোরে হাসলেন। কোনো জবাব দিলেন না। আজকাল অনেকে বলতে চেষ্টা করেন, শেখ মুজিব তো স্বাধীনতা চাননি। তিনি স্বায়ত্তশাসন চেয়েছেন। এসব কথার জবাব দিতে যাওয়াই সময়ের অপচয়।
আমাদের স্বাধীনতা হঠাৎ করে নাজিল হওয়া কোনো আসমানি ঘোষণার তেলেসমাতি উপহার নয়। যাঁরা সব কৃতিত্ব এককভাবে নিজেদের ঝোলায় ভরতে চান, দেশটাকে পারিবারিক সম্পত্তি বিবেচনা করে যদৃচ্ছ ভোগ করতে চান, তাঁরা যেমন অমার্জনীয় অপরাধ করে চলেছেন, তেমনি যাঁরা আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের পর্যায়ক্রমিক অগ্রযাত্রার ধাপগুলোকে পাশ কাটিয়ে, বঙ্গবন্ধুসহ স্বাধীনতাসংগ্রামের অপরাপর নায়কদের (এবং 'নির্মাণ শ্রমিকদের') অবদানকে খাটো করার জন্য ইতিহাসের খণ্ডিত উপস্থাপনার আশ্রয় নিয়ে আমাদের জাতীয় ইতিহাসকে নতুন নতুন বিভ্রান্তির জালে জড়ানোর চেষ্টা করছেন, তাঁরা তার চেয়েও বড় অপরাধ করছেন। উভয় পক্ষই নিশ্চিতরূপেই জ্ঞানপাপীর ভূমিকায় রয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন জননেতা। রাজনৈতিক দলের নেতা। রাজনীতির মধ্য দিয়েই তিনি তাঁর অভীষ্ট সিদ্ধির চেষ্টা করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তিনি কখনো দাবি করেননি যে তিনি বিপ্লবী। আমাদের স্বাধীনতাও কোনো বিপ্লবের ফসল ছিল না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ 'বিপ্লব' ছিল না, ছিল রাজনৈতিক সংগ্রামের চূড়ান্ত রূপ।
রাজনৈতিক সংগ্রাম ও 'যুদ্ধ'
প্রথম মহাযুদ্ধকালীন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী Georges Clemenceau- এর একটি বিখ্যাত উক্তি : 'War is too important to be left to the generals.' অর্থাৎ 'যুদ্ধ ব্যাপারটা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে তা জেনারেলদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না।'
জেনারেলদের ছোট করা বা তাঁদের কাজকে খাটো করার জন্য নয়, এটাই যুদ্ধবিজ্ঞানের সাধারণ নিয়ম, Rule of the game। যুদ্ধের শুরু ও যুদ্ধের সমাপ্তি- দুটোই একান্তভাবেই রাজনীতির এখতিয়ার। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও একান্তভাবেই আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের অনিবার্য পরিণতি। 'Politics precipitates war, Not the other way.' 'রাজনীতিই যুদ্ধ অনিবার্য করে, তার বিপরীত নয়।' যাঁরা রাজনৈতিক ধারাবাহিকতাকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নতুন ইতিহাস 'রন্ধন' করতে চান, তাঁদের সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
প্রুশিয়ার কিংবদন্তি জেনারেল, যিনি পরবর্তী সময়ে দার্শনিক হিসেবে খ্যাতিমান হয়েছেন, Carl Von Clausewitz, তাঁর সেই বহুল উদ্ধৃত বক্তব্যটি এখানে স্মরণ করা যেতে পারে। যুদ্ধ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'It is clear that war is not a mere act of policy, but a true political instrument, a continuation of political activity by other means.' অর্থাৎ 'যুদ্ধ কেবলই কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপার নয়, যুদ্ধ হচ্ছে যথার্থই একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেরই ধারাবাহিকতায় লক্ষ্য অর্জনের ভিন্নতর পন্থা।'
শেষ কথা
কাজেই কে কখন কিভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ, সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটা সূচনা নয়, সমাপ্তিও নয়। নিয়ামকও নয়।
সূচনাটা অনেক আগের ও অনেক পর্বের। আর সেখানে রয়েছে-
একদিকে শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি আমাদের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপান্তর করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। precipitate করতে সফল হয়ে নতুন একটি জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের নায়ক হয়েছেন।
অন্যদিকে জিয়াউর রহমান ও আমাদের সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা, যাঁরা সেই যুদ্ধকে বরণ করে নেওয়ার 'হঠকারিতা' (audacity) দেখিয়েছেন। পুনরায় Clausewitz : ‘…timidity will do a thousand times more damage than audacity.' 'ভীরুতা হঠকারিতার চেয়ে হাজার গুণ বেশি ক্ষতিকর।' (Audacity-কে ইচ্ছা করেই 'দুঃসাহস' না বলে 'হঠকারিতা' বললাম)।
অতঃপর সবার ওপরে, এ দেশের জনগণ, স্বাধীনতাসংগ্রামী ছাত্র-জনতা, যে জনতা স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে অকুতোভয়ে লড়েছে এবং পৃথিবীর সব স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দুঃখ বরণের ইতিহাস রচনা করেছে।
লেখক : রাজনীতিক, ভূ-রাজনীতি ও উন্নয়ন গবেষক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন