আজকের (মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০১৪) সংবাদপত্রগুলোতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একটি বক্তব্য পাঠ করে, খবরের কাগজের ভাষায় যাকে বলে মিশ্র অনুভূতি, আমার তাই হয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী গতকাল সোমবার মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন তার একটি হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পদ্ধতি ও অপরটি ভোটপ্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যে হলফনামা দাখিল করেন সে সংক্রান্ত। দুটো বিষয়ই যে জনগুরুত্বসম্পন্ন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পূর্বশর্ত যেমন একটি নিরপেক্ষ সরকার, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, নির্ভীক প্রশাসনযন্ত্র, তেমনি কী পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে ও প্রার্থীদের 'আমলনামা' কেমন, তা জানার বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
পৃথিবীর সব দেশের মতো আমাদের দেশেও জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দলীয় ভিত্তিতে। এটাই স্বাভাবিক। দলীয় আদর্শ, ভাবনাচিন্তা, ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ইত্যাদি ভোটারদের কাছে নির্বাচনী ইশতেহার, বক্তৃতা, বিবৃতি, মিটিং-মিছিলের মাধ্যমে তুলে ধরে জনগণের কাছে হাজির হন রাজনৈতিক দলগুলো। সেই সঙ্গে ভোটারের সামনে দাঁড় করান তাদের মনোনীত প্রার্থীকে। সেই প্রার্থী কলাগাছ না আমগাছ তা যাচাই-বাছাই করে, তার দলের মতাদর্শ ও কর্মসূচির ভালো-মন্দ বুঝে-শুনে ভোটার স্থির করেন তাকে ভোট দেবেন কি দেবেন না। দল ও দলের প্রার্থীর বর্তমান ও অতীত কার্যকলাপ অবশ্যই এই সিদ্ধান্তগ্রহণে দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করে। অবশ্য দলের যারা অন্ধ অনুসারী, তাদের কথা আলাদা। তাদের কাছে কলাগাছ-আমগাছ-গাবগাছ সব সমান।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনও সব গণতান্ত্রিক দেশে দলীয় ভিত্তিতেই হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। এখানে রাজনৈতিক পরিচয়ে কোন প্রার্থী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। যারা এই আইনটি প্রণয়ন করেছিলেন, তারা বোধ হয় কেবল দলীয় বিবেচনায় অযোগ্য, অসাধু প্রার্থীরা যাতে নির্বাচিত হতে না পারেন সেজন্য এই ব্যবস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু নির্বাচন- তা জাতীয় হোক আর আঞ্চলিকই হোক- রাজনৈতিক দল, উপদল, গোষ্ঠীর আওতামুক্ত হতে পারে না, তা বোধ হয় তারা ভুলে গিয়েছিলেন। ফলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটা মুখোশপরা তামাশার নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। নৌকা মার্কা আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী বা সমর্থক কিংবা ধানের শীষের বিএনপির লোক উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন কদু মার্কা নিয়ে, বদনা মার্কা নিয়ে, নৌকা বা ধানের শীষ নিয়ে নয়। অথচ দুনিয়াসুদ্ধ লোক জানে তিনি কোন দলের লোক, কারা তার সামনে-পেছনে, ডাইনে-বামে আছে, কারা তার জন্য রাতের ঘুম আর দিনের আরাম হারাম করে খাটাখাটি করছে, টাকা-পয়সার জোগান দিচ্ছে। এমনকি, দলের কেন্দ্রীয় কমান্ডও তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখছেন, তাদের পক্ষে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন। শুধু যেন ভাশুরের নাম মুখে আনা যাবে না, বলতে হবে বড় সাহেব। অথবা, 'আঙ্গো বাড়ির হেতেনের বড্ডা বাইছাব' (নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় : 'আমাদের বাড়ির উনার বড় ভাইসাহেব')। এই লুকোচুরি খেলা জাতিকে শুধু নির্বাচনী রঙ্গ-রস উপহার দেওয়া ছাড়া যে আর কিছুই করছে না, তা আমাদের সাবালক নির্বাসন, থুড়ি, নির্বাচন কর্তৃপক্ষ কি বোঝেন না? পত্র-পত্রিকা ও টিভি যখন 'অমুক দল এতটি, তমুক দল এতটি, স্বতন্ত্র এতটি আসন পেয়েছে' ইত্যাদি ফলাও করে প্রচার করার পর ঘোষণা দেয় : 'অমুক দলের সমর্থিত তমুক প্রার্থী এত ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন,' তখন শরম লাগে না আমাদের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের? নাকি তারা 'লাজ-লজ্জা-ভয়, তিন থাকতে নয়' এই নীতিতে অবিচল থেকে পিঠে কুলা বেঁধে ও কানে তুলা গুঁজে 'ভাবিলাম মন শ্রীবৃন্দাবন বারেক আসিব ঘুরি' বলে লোটাকম্বল নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে গেছেন? (সত্যি, এও দেখতে হল এই পোড়া দেশে। উপজেলা নির্বাচনের রোগীকে আইসিইউতে রেখে রোগীর অভিভাবক বিদেশযাত্রা করেছেন। এই ম্যাজিক দেখালেন কে? না, আমাদের বিজ্ঞ-প্রাজ্ঞ-অভিজ্ঞ মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বিনীত আরজ, যদি সম্ভব হয়, পরের ফ্লাইট ধরে ফিরে আসুন ঢাকায়। তবু একজন সাবেক সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে এরূপ একটা বদ নজির স্থাপন করবেন না আপনার অনুজপ্রতিম বর্তমান আমলাদের জন্য)।
ভবিষ্যতের স্থানীয় সরকার নির্বাচন অহেতুক কোন রাখঢাক না করে দলীয় ভিত্তিতেই হবে বলে মাননীয় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী যে 'ইঙ্গিত' দিয়েছেন, তা খুবই যৌক্তিক বলে আমি মনে করি। এক ধরনের আইনভঙ্গ করে যে কাজটা তলে তলে সবাই করছে, তা আইনের বিধানানুযায়ী প্রকাশ্যে করাই তো সমীচীন। আর আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কাজকর্ম যাই হোক, এত সুন্দর সুন্দর নির্বাচনী প্রতীক থাকতে এই লাউ-কদু-ঘটি-বাটি-বদনা আমদানির দরকার কী?
'কানাকে কানা বলিও না,' তা হলে কী বলব?
তবে সবচেয়ে ভাল লাগল, মাননীয় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী দেরিতে হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছেন, তাঁর ভাষায়, 'জবাবদিহিতামূলক স্থানীয় সরকারব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। সেজন্য সব ধাপকেই আমরা আরো গতিশীল করতে চাই।' (মঙ্গলবারের দৈনিক কালের কণ্ঠ দ্রষ্টব্য)। এই সিদ্ধান্ত যত দ্রুত সম্ভব গ্রহণ করা হোক এবং তার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইন-কানুন প্রণয়ন করা হোক। এটা হবে একটা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। প্রশাসনের জন্য এটা যে কতটুকু বলকারক হবে, তা বলে বোঝানো যাবে না। মাথাভারি কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে আরো অনেক আগেই ভারমুক্ত করা উচিত ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা তাদের নিজেদের প্রয়োজনে যে কাঠামো তৈরি করে গিয়েছিল, দুঃখের বিষয়, তারা চলে যাওয়ার পাঁচ-ছয় যুগ পরেও সেই সিন্দবাদের ভূতের হাত থেকে আমরা নিষ্কৃতি পাইনি। আমরা কেন বুঝতে চাই না, দেশ শাসনে ব্রিটিশদের 'গোল' বা অভীষ্ট লক্ষ্য ছিল 'এক্সট্রাক্টিভ' বা শোষণমূলক : এ দেশের ধনসম্পদ লুটে নিয়ে নিজের দেশে পাচার করাই ছিল সেই ঔপনিবেশিকদের প্রধান উদ্দেশ্য। মোটামুটি একই লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি শাসকদেরও। একাত্তরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই একই লক্ষ্য কি আজও বহাল থাকতে পারে? আজ দেশের সম্পদ লুটপাট করে আমরা কোথায় নিয়ে যাব? লন্ডনে? না লাহোরে? নাকি গোপালগঞ্জে, অথবা ফেনীতে? যদি তা না হয়, তবে এলাকার মানুষকে- সেই এলাকা গোপালগঞ্জ বা ফেনী, টেকনাফ বা তেঁতুলিয়া যাই হোক- তাদের নিজেদের ভাগ্য নিজেদের গড়তে দিন না কেন? পৃথিবীর সব উন্নত দেশে স্থানীয় শাসন চলে স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা- কেন্দ্র থেকে পদায়িত ও 'রিমোট কন্ট্রোলে' হাত-পা বাঁধা আমলা নামক রোবট দ্বারা নয়। স্থানীয় প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিন স্থানীয় উন্নয়ন, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, পুলিশ ইত্যাদি চালাবার। ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে সামর্থ্যও গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। দেখুন, কী হয় কয়েক বছরের মাথায়। প্রথম প্রথম তাঁরা ভুল করবেন। কেউ কেউ অসৎ পথে পা বাড়াবেন- তারপর জনগণ কর্তৃক ধিক্কৃত, পরিত্যক্ত হয়ে রাজনীতির আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। তাঁর জায়গায় যিনি আসবেন তিনি পূর্বসূরির ভুল পথে চলার আগে দশবার ভাববেন। আর এভাবেই স্থানীয় শাসনব্যবস্থা এগিয়ে যাবে উন্নতির পথে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সাফল্য, তার সৌন্দর্য-সৌকর্য তো ওইখানেই।
এই ব্যবস্থায় আর কিছু না হোক অনেক ছোটখাট বিষয়েও জেলা-উপজেলায় দৌড়াদৌড়ি-ছোটাছুটি ও সাহেব-মোসাহেব ও তাদের টাউট-বাটপাড়ের পেছনে সময় এবং অর্থ অপচয়ের হাত থেকে এলাকাবাসী বাঁচত। আর এলাকার লোকদের কাছ থেকে ঘুষ-টুষ নিয়ে বদনামের ভাগী হওয়া, কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া, সামাজিকভাবে পরিবার-পরিজনসহ হেয়প্রতিপন্ন হওয়া, নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলা- এসব ভাবনা নিশ্চয়ই একজন জনগণের নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিকে অহর্নিশ তাড়িয়ে মারবে। আর তিনি যদি সৎপথে থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তবে তাঁর অধীনস্থ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী- তা তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা পুলিশ যে বিভাগেরই হন না কেন- জনগণকে হয়রানি করতে সাহস পাবেন না; সব সময় ঘাড়ের ওপর স্থানীয় 'বস্'-এর নিঃশ্বাস অনুভব করবেন।
সব শেষে একটি কথা মনে রাখতে হবে, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হোক, স্থানীয়ভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে প্রকৃত শাসনব্যবস্থা অর্পিত হোক, তাঁরা তথাকথিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার বলয় থেকে মুক্ত হয়ে কাজ করুন- দেশবাসী এটা চাইলেও অনেক ক্ষমতালিপ্সু সংসদ সদস্য ও আমলা কিন্তু এটা চান না। আসলে ক্ষমতা হাতছাড়া করতে কে চায়? তবে উন্নয়নের চাকাকে আরো গতিশীল করতে হলে এসব স্বার্থান্বেষী মহলের শতাব্দীপ্রাচীন পঙ্গু যুক্তিগুলোকে উপেক্ষা করতেই হবে। আর তা না হলে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৯-এ 'প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় প্রশাসনের ভার' নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ওপর প্রদানের যে বিধান রয়েছে, তা যুগ যুগ ধরে লঙ্ঘিত হতেই থাকবে। রাষ্ট্রক্ষমতায় পাকাপোক্ত হয়ে অধিষ্ঠিত থাকার জন্য যে সংবিধানের দোহাই আমরা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে প্রায়শ দিয়ে থাকি, সেই সংবিধানের প্রতি এই অশ্রদ্ধা আর কত দিন?
(২)
মাননীয় স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সেদিনের বক্তব্যের যে অংশের সঙ্গে আমি ঐকমত্য পোষণ করি সে বিষয়ে এতক্ষণ সামান্য আলোকপাত করার চেষ্টা করলাম। আর অন্য একটি প্রসঙ্গ- নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের 'হলফনামা' প্রদান সম্বন্ধে তাঁর বক্তব্য পাঠ করে আমি রীতিমত বিস্মিত হয়েছি। মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন : 'হলফলামা হচ্ছে রাজনীতিবিদদের চরিত্রহনননামা'। তাই যদি হয় তা হলে, যে নামেই ডাকি না কেন, এর রচয়িতা কে? এটার প্রণেতা তো সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদ নিজেই। তিনি সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে তাঁর নিজের সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য- যা জানার অধিকার একজন ভোটারের নিশ্চয়ই আছে, বিশেষ করে এই তথ্য অধিকার আইনের জমানায় নিজেই পরিবেশন করেছেন, কোন বিরোধী দল বা গোয়েন্দা বাহিনী তা করেনি। একজন ভোটপ্রার্থী স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে জেল খেটে থাকলে সে তথ্য জানার অধিকার যেমন ভোটারের আছে, তেমনি দেশে-বিদেশে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে কত সহায়-সম্পত্তির মালিক তিনি তাও নির্দ্বিধায় জানাতে তাঁর সমস্যা কোথায়? তবে হ্যাঁ, সেটা করতে গিয়ে যদি থলির কালো বিড়াল বের হয়ে পড়ে, তবে সেটা ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রে নতিজা যে কী হয় তা সম্প্রতিকালে দেশবাসী দেখেছে। অনেক মানি লোকের 'অপমান নষ্ট' হচ্ছে দুদকের অফিসে লেফট্-রাইট করতে করতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের অনেককে তাঁর বর্তমান ক্যাবিনেটে স্থান না দিয়ে, 'গুডবাই' জানিয়ে জাতির কাছে নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক সিগন্যাল দিয়েছেন। আমরা আশা করব, প্রকৃত দুর্নীতিবাজ তাবড়-তাবড় কিছু তথাকথিত জননেতার আইনি প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। বিশ্বের সব দেশে, এমনকি প্রতিবেশী দেশেও, এসব দুর্নীতিবাজরা শাস্তি পায়, পায় না কেবল বাংলাদেশে।
এই প্রেক্ষাপটে মাননীয় স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর বক্তব্য রীতিমত হতাশাব্যঞ্জক। অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন, সাম্প্রতিক কালের এইসব কালো বিড়ালের মালিকদের 'প্রটেকশন' দিতে চাইছেন বিগত পাঁচ বছরে যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সম্পদের পাহাড় না গড়া এই সিনিয়র মন্ত্রী মহোদয়। অথবা তিনি বোধ হয় সেই পুরানো আপ্তবাক্যটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন আমাদের : কানাকে কানা বলিও না। ঠিক আছে। তারা কষ্ট পেলে ভদ্রতার খাতিরে বলব না। কিন্তু কী বলে ডাকব এই চোখ থাকতেও অন্ধদের? পদ্মলোচন?
তাঁর বক্তব্যে মাননীয় মন্ত্রী প্রশ্ন রেখেছেন : 'আমি রাজনীতি করি বিধায় আমার ঘর-বাড়ি-সংসার থাকতে পারবে না? আমি কি গাছতলায় বাস করব?' না, মাননীয় মন্ত্রী, এ দেশের মানুষ এতটা অকৃতজ্ঞ পাষণ্ড নয় যে তারা রাজনীতিবিদদের গাছতলায় পাঠাবে, যে রাজনীতিবিদরা তাদের মঙ্গলের জন্য, উন্নয়নের জন্য এত করেন, এ-ত- করেন।
তবে তাদের মধ্যে যাদের 'এই সামান্য পিঁয়াজের দোষ' আছে তাদের সম্বন্ধে কী বলবেন? বস্তার দু'মণ আলুর ভেতর দু'চারটা পচা বের হলে সেগুলো ছুড়ে ফেলে দেওয়াই কি উচিত নয়? যেমনটি বোধ করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি করে দেখিয়েছেন।
(৩)
বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্যে, স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর সেই ডাকে সাড়া দিয়েছিল সমস্ত জাতি।
'এবারের সংগ্রাম দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের জন্য সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম হিংসা-দ্বেষ-সন্ত্রাসমুক্ত শান্তি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশের জন্য সংগ্রাম', আমরা এই ডাক কবে শুনব? কার কাছ থেকে শুনব? নাকি অনেক হিসাব-নিকাশের টানাপড়েনে এই ডাক দিতে কোনদিন ইচ্ছা হবে না কারো?
এই লেখাটি যেদিন ছাপা হবে, সেদিন সাতই মার্চ। 'মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রামের' ফসল বাংলাদেশ এ দেশের মানুষ 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে' ঘরে তুলেছে সেই কবে, কিন্তু সে ফসল রাখার ঘরটির যে বড় বেহাল দশা, সেদিকে একটু দৃষ্টি দেবেন কি এখনো যাঁরা চোখ থাকতেও অন্ধ নন তাঁরা?
লেখক : সাবেক সচিব, কবি ও কলাম লেখক
(কালের কণ্ঠ, ০৭/০৩/২০১৪)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন