Image description

এখন প্রায়ই শোনা যাচ্ছে, অভিভাবকরা বলছেন—তাঁদের সন্তানরা স্মার্টফোনে নানা কনটেন্ট দেখতে, স্ক্রল করতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। অনেকে অনেক চেষ্টা করেও এ থেকে শিশুদের  দূরে রাখতে পারছেন না।

নানা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শিশু-কিশোরদের সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তির একটি বড় কারণ হচ্ছে তারা এই বয়সে পরিচয়, স্বীকৃতি ও ভালো লাগা খুঁজতে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া লাইক, কমেন্ট ও ফলোয়ার তাদের মনে সাময়িক আনন্দ দেয়, যা মস্তিষ্কে ডোপামিন নামের ‘ফিল গুড’ হরমোন নিঃসরণ ঘটায়।

এটা আনন্দের অনুভূতি দেয়, যা তাদের বারবার সেই প্ল্যাটফর্মে ফিরতে বাধ্য করে।

সোশ্যাল মিডিয়া শিশু-কিশোরদের কাছে একটি আয়নার মতো কাজ করে, যেখানে অন্যদের লাইক, কমেন্ট প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে তারা নিজেদের মূল্যায়ন করতে থাকে। এই নির্ভরতা দিন দিন বাড়তে থাকে, ফলে বাস্তব জীবনের আত্মবিশ্বাস কমে গিয়ে তাদের কাছে ভার্চুয়াল পরিচয় মুখ্য হয়ে ওঠে। এতে তারা বন্ধুদের মতো থাকতে চায়, ট্রেন্ড মিস করতে চায় না, ভার্চুয়াল জগতে ‘কানেক্টেড’ থাকতে চায়।

এ ধরনের ভাবনা থেকে অনেকে অজান্তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রল করে। বাস্তব জীবনের মানসিক চাপ, একাকিত্ব বা পরিবারের সঙ্গে কম সংযোগ থাকাও এই আসক্তিকে বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় অভিভাবকরা সন্তানের অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমকে গুরুত্ব দেন না, বরং এটি ‘শান্ত রাখার উপায়’ হিসেবে কাজে লাগান। এই নীরব প্রশ্রয়ও তাদের এই আসক্তি গড়ে তোলার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে।

এ ছাড়া অনেক সময় ফেসবুক ফিড ভুয়া খবর, আজেবাজে ছবি, ভিডিও, পোস্ট—এসব নানা জঞ্জালে ভরা থাকে। এগুলো শিশুদের মনে অনেক সময় নেতিবাচক  প্রভাব ফেলে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি থেকে উত্তরণের জন্য দরকার সচেতন অভিভাবকত্ব এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৈনন্দিন জীবন। পড়াশোনা, খেলা, ঘুম ও বিশ্রামের মধ্যে একটি রুটিন তৈরি করতে হবে, যাতে স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রিত থাকে। শিশু-কিশোরদের অফলাইনে আনন্দ খুঁজে পেতে সাহায্য করতে হবে।

যেমন—বই পড়া, ছবি আঁকা, গান শেখা বা খেলাধুলা।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়াতে হবে। পরিবারে একসঙ্গে গুণগত সময় কাটানো বাড়াতে হবে। অভিভাবকরা যদি নিজেরাও প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতন থাকেন, তাহলে সন্তানদের জন্য তা ইতিবাচক উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। যদি সমস্যার মাত্রা বেশি হয়, তবে পেশাদার কাউন্সেলরের সহায়তা নেওয়া জরুরি।

 

লেখক : সাইকোথেরাপিস্ট, অ্যাথেনা মানসিক ও মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্র