আলফাজ আনাম (Alfaz Anam)
গনঅভ্যুন্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যওয়ার পর দেশের রাজনীতিতে এক ধরনের শুন্যতা তৈরি হয়েছে। এই শুন্যতার মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির মিডিয়ায় বেশ ভালো কাভারেজ পাচ্ছে। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচী কম থাকায় জামাতের কাভারেজ আরো বেশি চোখে পড়ছে। এতে জামাতের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অনেকের মধ্যে তৈরি হয়েছে অতি আত্নবিশ্বাস। তাদের অনেকে মনে করছেন, হয়তো ক্ষমতার কাছাকাছি চলে আসছেন। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই নির্মম। মিডিয়ার প্রচারনার ওপর ভিত্তি করে আত্নবিশ্বাস দলটির জন্য বড় ধরনের বিপদের কারন হতে পারে।
বাংলাদেশের যে কোনো রাজনৈতিক দলের চেয়ে বিগত সময়ে জামাত-শিবির ছিলো মিডিয়ার সবচেয়ে বৈরি পরিস্থিতির শিকার। এমনকি জামাতের সাথে মিত্রতার কারনে বিএনপিকেও মিডিয়ায় আক্রমনের মুখে পড়তে হয়েছে। সেই মিডিয়া হঠাৎ করে যেনো জামাত-বান্ধব হয়ে উঠছে। এর কারন কী?
গনঅভ্যুন্থানের পর দেশের মিডিয়া হাউজগুলোতে নানা সংকট দেখা দিয়েছে। এসব মিডিয়া ছিলো হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের ঘোরতর সমর্থক। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এসব মিডিয়া জামাত- বিএনপির খবর প্রচারের দিকে বেশি মনোযোগি হয়েছে। এর কারন মিডিয়াগুলো যাতে জনআক্রোশের শিকার না হয়। ফ্যাসিবাদের পক্ষে প্রচরানায় এসব মিডিয়ার ওপর মানুষ ছিলো ক্ষুদ্ধ। এছাড়া রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় পাঠক ধরে রাখার মতো খবরের অভাব রয়েছে।
জামাত- শিবিরের খবরের জন্য এসব মিডিয়া খবর নানা ভাবে টুইস্ট করছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির কমিটি ঘোষণা করেছে। কয়েকজন ভালো রেজাল্টের অধিকারী ছাত্র কমিটিতে স্থান পেয়েছে। এটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। যে কোনো ছাত্র সংগঠনে এমন হতে পারে। শিবির নেতা একজন ছাত্র সর্ম্পকে একজন নারী শিক্ষক একটি ফেসবুক কমেন্টে প্রশংসাসুচক মন্তব্য করেছেন। তার এই মন্তব্য পর্যন্ত নিউজ হয়েছে। অথচ শিক্ষক হিসাবে ভালো ছাত্রের প্রশংসা করা সাধারন বিষয়। এসব নিউজ করার ক্ষেত্রে শিবিরের বা ওই নেতার কোনো ভুমিকা নেই। কিন্তু ওই শিক্ষিকা হয়তো বিব্রত হয়েছেন। তেমনটি তিনি আরেক পোস্টে আভাষ দিয়েছেন। এই হচ্ছে বাংলাদেশের ভিউখোর মিডিয়ার অবস্থা।
হাসিনা শাসনের পতনের পর অধিকাংশ মিডিয়া হাউজে চলছে আর্থিক টানাপড়েন। আওয়ামী সমর্থক মালিকরা মিডিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। অনেকে এই খাতে ব্যয় করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। সাংবাদিকরাও জানেন ভবিষ্যত কোন দিকে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে মিডিয়াগুলোর আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে সোশাল মিডিয়া- বিশেষ করে ইউটিউব ও ফেসবুক।
জামাত শিবিরের সংঘশক্তির কারনে তাদের পক্ষে খবর পেলে তা দেখা ও শেয়ার করার জন্য নেতাকর্মীরা ঝাপিয়ে পড়ছেন। ফলে মিডিয়াগুলোর ভিউ থেকে আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে পড়ছে জামাত- শিবিরের খবর। অপরদিকে বিএনপির কোনো খবর থাকলেও তা এতো মানুষ দেখছে না। তার মানে এই নয় যে, বিএনপির সমর্থন কমে গেছে। আসলে দলের নেতাকর্মীরা এতে অভ্যস্ত নয়। এছাড়া বিএনপির কর্মসূচী ও বক্তব্য চলছে গতানুগতিক প্রক্রিয়ায়।
মজার ব্যাপার হলে মিডিয়া হাউসগুলোতে আগে যে সাংবাদিকরা ছিলেন এখনও তারাই আছেন। তারা জামাত- শিবিরের রাজনীতি আগে যে চোখে দেখছেন এখনও সেভাবে দেখেন। জামাত- শিবির নিয়ে তাদের দৃষ্ঠিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হয়নি। হওয়ার কোনো কারনও নেই। এখন এই সাংবাদিক ও মিডিয়া মালিকরা টিকে থাকার কৌশল নিয়েছেন। তারা ভর করেছেন জামাত শিবিরের ওপর। জামাতের পক্ষে নিউজ দিয়ে তারা দেখাতে চাইছেন তারা কেউ ফ্যাসিস্টদের সহযোগী নন। একই সাথে সোশাল মিডিয়া থেকে তাদের আয়ও হচ্ছে।
এই মিডিয়া হাউজগুলোতে যখন স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে, রাজনৈতিক শুন্যতা পুরন হবে তখন জামাত- শিবিরকে এই মিডিয়াগুলোর বৈরি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। রগকাটা আর জঙ্গিবাদি তৎপরতার নানা নেতিবাচক খবর মোকাবেলা করতে হবে।
অতি প্রচারনার আড়ালে অন্য কৌশল কাজ করতে পারে, মিডিয়াগুলো এই ধারনা দিতে চাইছে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের উন্থান ঘটেছে। ফলে ইনডিয়া যে বাংলাদেশি বিরোধী প্রচারনা চলছে তাতে জ্বালানী যোগাচ্ছে। এসব কিছুর ফল শেষ পর্যন্ত জামাত- শিবিরের বিপক্ষে যাবে। হয়তো এসব প্রচারনা আগামি দিনে জামাত-শিবিরের জন্য ফাঁদ হয়ে উঠতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন