কাউসার আলম
১. খালেদা জিয়া নি:সন্দেহে দেশের শ্রেষ্ঠ পরিচ্ছন্ন পলিটিশিয়ানদের একজন। গত ২৫ বছর ধরে উনার প্রতিটা কথা, কাজ ডিপলি পর্যবেক্ষণ করছি। সরকারে দেখেছি, বিরোধীদলে দেখেছি, কারাবন্দী দেখেছি। কোনো ছল চাতুরি নেই, চালাকি নেই, মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য নেই। উনি উনার রাজনীতি করে গেছেন।
........অপরদিকে প্র আলোর প্রোপাগাণ্ডার বাইরে তারেক রহমানের কথা জানি না। কারণ উনি সরকারে ওইভাবে ছিলেনও না। তবে দেশের অনেক মানুষ প্র আলো আর ডি স্টারের ফাঁদে পড়েছে। কিন্তু একটু মাথা খাটালেই বুঝা যায়, মুলত ওদের প্রজেক্টই ছিল যেকোনো মূল্যে তাকে বিতর্কিত করা। ভবিষ্যত-ই হয়ত বলে দিবে, উনি রাজনীতিতে কী করবেন।
.
২. অপরদিকে বিএনপির অনলাইন এক্টিভিস্টদের মধ্যে ন্যূনতম ডিসেন্সি নাই, সততা নাই। এরা আগাগোড়া ইতর, বদমাইশ আর মিথ্যাবাদী। তাদের এক্টিভিজমের স্টাইল দেখলে, পালিয়ে যাওয়া ইঁদুরের দলটির নেতাকর্মীদের কথাই মনে পড়ে। আরাফাতের প্রোপাগান্ডা সেলের কথা মনে পড়ে। এবং আমি শিউর বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ওদের অনলাইন এক্টিভিজম সিআরআই বা আরাফাতের সেলের মতোই হবে। তারেক রহমানের উচিত চালাকিযুক্ত অসততাপূর্ণ এধরনের এক্টিভিজমকে প্রশ্রয় না দেওয়া। লং রানে এটা মারাত্নক ক্ষতিকর হবে।
.
৩. ইঁদুরের এতিম সন্তানরা এখনও প্রাশাসনিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছে। বিএনপি এটা নিয়ে বলতে পারতো দাবি জানাতে পারতো। যদি ইঁদুর ফিরে আসে ওদের মাধ্যমেই ফিরে আসবে। কিন্তু বিএনপি ভাবতেছে, আমরা অলরেডি ক্ষমতায়। এদিকে আবার বাম ইউনিয়নের সাথে অনলাইন অফলাইনে দহরম মহরম চলছে। আরে ভাই, তোমার কি লোকজনের অভাব? ওরা ওদের রাজনীতি করুক, তুমি তোমার রাজনীতি করো। ওদের সাথে দহরম মহরম বিএনপিকে ইঁদুরের দশায় নিয়ে যাবে, এটা তারা বুঝতে পারছে না।
.
৪. সারাদেশে গত ১৫ বছরে বিএনপির যেসব প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজন নির্যাতনের শিকার হইছেন, তাদের ডকুমেন্ট উপস্থাপন, তাদের বক্তব্য প্রচার, তাদের করুণ অবস্থা তুলে ধরা যেত মিডিয়ায়। ফ্যাসিবাদের ফিরে আসা রোধ করতে কী কী করা প্রয়োজন, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে পারতো। এ নিয়ে ওদের ন্যূনতম মাথাব্যাথা নাই। আই রিপিট ন্যূনতম মাথাব্যাথা নাই। তারা ভাবতেছে, দুদিন আগে আর পরে, আমরা এসেই পড়ছি ক্ষমতায়!
.
৫. ছয় তারিখেই দেশের বিভিন্ন এলাকার অঘোষিত অভিভাবকত্ব নিয়ে গেছে বিএনপি নেতারা। তা নিক। লীগের শূন্যস্থান পূরণ কেউ না কেউ তো করবেই। কিন্তু দেশের অসংখ্য স্থানে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়া ভালো ব্যাপার নয়। ঠিক জড়িয়ে পড়ে নি, জাস্ট মালিকানা হস্তান্তর হয়ে তাদের হাতে আসছে। মানে যে যে সব স্থানে পলাতকরা ছিল সেসকল স্থানে তারা বসে গেছে। ঠিক আগের মতোই বিভিন্ন ব্যাবসার সিন্ডিকেট তারা দখল করে নিছে। এটা খুব খারাপ ব্যাপার। তৃণমূলের অসংখ্য মানুষ চরম বিরক্ত হয়ে গেছে অলরেডি।বিএনপির জন্য এটা মোটেই শুভ নয়।
.
৬. জামায়াত নেতা ডা. শফিকুর রহমান বিএনপিকে খোঁচা দিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিএনপিরও পালটা খোঁচা দেওয়া উচিত ছিল। দিছে। কিন্তু ফখরলের বক্তব্য ছিল শফিকের চেয়ে আরও অদূরদর্শী আর হাস্যকর। অনেকেই বিএনপিকে পরামর্শ দেয়, ৭১ ফিরিয়ে আনুন!!...ভাই, এটা ফিরয়ে আনার কী আছে, এটা তো আছেই।
যারা বিএনপিকে এই পরামর্শ দেন, তাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে এই ইস্যু ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে (যদিও আমি মনে করি না, বিএনপির মুল প্রতিপক্ষ জামায়াত) ঘায়েল করা।
........ কিন্তু এটা যে রাজনীতির অস্ত্র হিশেবে আর ব্যবহার করা যাবে না, এটা কি বিএনপি বুঝতে পারছে? এটাকে গুলিয়ে তিন তিরিকা নয়বেলা ১৫ বছর ধরে খাওয়াইছে, ওই ইঁদুরটা। ঠিক যাদেরকে খাওয়াইছে, এরাই ওদেরকে আব্বা ডাকাইয়া ছাড়ছে।
আপনি নিশ্চয়ই এর চেয়ে বেশি খাওয়াতে পারবেন না। ইনসাফের রাজনীতি বাদ দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের রাজনীতি করলে কী হবে, জানেন? ওদের তো তাও ওইপাড় আছে, বিএনপির কিন্তু ওইপাড় নাই, বঙ্গোপসাগর দিয়া মাছধরা নৌকা নিয়া পালাইতে হবে!
.
৭. এতকিছুর পরও গণতন্ত্র চলমান রাখতে, স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিএনপি দরকার। খালেদা জিয়াকে প্রয়োজন। সুস্থ খালেদাকে প্রয়োজন। জানি না, উনি রাজনীতিতে আর ফিরতে পারবেন কি না। কিন্তু এরকম পরীক্ষিত মানুষ অবশ্যই দেশের প্রয়োজন। উনি সুস্থ হোন। অন্তত কিছু দিন দেশের অভিভাবকত্ব তাঁর হাতে আসুক। সেই কামনা করছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন