কদরুদ্দীন শিশির

কয়েকটা পত্রিকার প্রিন্ট কপি পড়লাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার খবর সেগুলোতে মোটাদাগে দুইভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

কয়েকটি পত্রিকার প্রধান শিরোনামে খবরটি স্থান পেয়েছে এবং তারা শিরোনামে হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে। যেসব ছবি ব্যবহার করেছে সেগুলেতেও হামলাকারীদের পরিচয় ছাত্রলীগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এমন পত্রিকাগুলো হলো--

সমকাল: "ঢাবিতে ছাত্রলীগের হামলা"

দেশ রূপান্তর: "আগ্রাসী ছাত্রলীগ রক্তাক্ত শিক্ষার্থী"

যুগান্তর: "সংঘর্ষে ক্যাম্পাস রণক্ষেত্র: আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া"

ইত্তেফাক: "আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, রণক্ষেত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়"

মানবজমিন: "ফের হেলমেট বাহিনীর তাণ্ডব"

Daily Star: "BCL unleashes furry on quota protesters"

New Age: "350 injured as BCL attacks quota protesters"

বাকি আরও কয়েকটি পত্রিকার শিরোনামে হামলাকারী হিসেবে ছাত্রলীগের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এবং কয়েকটির রিপোর্টের ভেরতরেও হামলার জন্য সরাসরি ছাত্রলীগকে দায়ী না করে 'সংঘর্ষ', 'ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া', 'সংঘাত', 'আন্দোলনকারী-ছাত্রলীগ মুখোমুখি', ‘পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ' ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে হামলার জন্য কে দায়ী তা অস্পষ্ট করা হয়েছে-- শিরোনামে, ক্যাপশনে এবং মূল রিপোর্টে।

এমন কয়েকটি পত্রিকার শিরোনাম--

কালের কণ্ঠ: "দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ"

দৈনিক বাংলা: "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রণক্ষেত্র"

কালবেলা: "সংঘাতে রূপ নিল কোটা আন্দোলন"

জনকণ্ঠ: "দফায় দফায় সংঘর্ষ"

প্রতিদিনের বাংলাদেশ: "হামলা সংঘর্ষ উত্তপ্ত শিক্ষাঙ্গন"

বণিক বার্তা: "কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, আহত তিন শতাধিক"

আমাদের সময়: "ঢাবি ক্যাম্পাস রণক্ষেত্র"

প্রথম আলো: "দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, গুলি"

বাংলাদেশ প্রতিদিন: "দিনরাত সংঘর্ষে রণক্ষেত্র"

ছবির উপস্থাপন এবং ক্যাপশনেও ছাত্রলীগের হামলার বিষয়টি অস্পষ্ট করে ফেলা হয়েছে অনেক পত্রিকায়।

যেমন, কালবেলা প্রথম পাতায় দুটি ছবি পাশাপাশি ছাপিয়েছে যার একটির ক্যাপশন লেখা হয়েছে এভাবে, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সোমবার এক আন্দোলনকারীকে এভাবে মাটিতে ফেলে পেটান হামলাকারীরা।"

অর্থাত, এখানে হামলাকারীরা যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী সেটা এগিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কিন্তু পরের ছবিতে ক্যাপশন দেয়া হয়েছে এভাবে, "সংঘর্ষকালে ঢাবির ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা লাঠিসোটা হাতে হামলাকারীদের ধাওয়া দেন।"

অর্থাত, এখানে লাঠিসোটা হাতে থাকার ব্যক্তিরা যে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী সেটা স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন ৪টি ছবি ছাপিয়েছে প্রথম পৃষ্ঠায়। এর মধ্যে একসাথে ৩টির ছবির (যেখানে রক্তাক্ত আন্দোলনকারী এবং তাদেরকে ছাত্রলীগের পেটানোর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে) ক্যাপশন দিয়েছে, "কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহিংসতা"। কিন্তু সেই সহিংসতায় হামলাকারী আর কে ভিকটিম তার বর্ণনা নেই।

আরেকটি ছবিতে এক যুবককে গুলি করতে দেখা যাচ্ছে (ছাত্রলীগের মিছিল থেকে)। এই ছবিটির ক্যাপশন দিয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন, "সংঘর্ষের সময় গুলি ছুঁড়ছেন একজন"।

এই গুলি ছোঁড়া ব্যক্তি ছাত্রলীগের মধ্য থেকে গুলি ছুঁড়েছেন এবং তার পরিচয় বিস্তারিত সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিতও হয়েছে। কিন্তু পত্রিকাটির ক্যাপশন দেখে বুঝার সুযোগ নেই ব্যক্তিটির কোন পক্ষের।