সাদিক খান
আমাদের ইভেন শিক্ষিত পোলাপাইনও পলিটিক্যালি কতোটা স্টুপিড, সেইটা ধ্রুব রাঠিরে উপচে পড়া থ্যাংকিউ থেকেই বুঝতে পারবেন। এদের আইকিউ এতোটাই লো যে, এরা এখন ইউটিউব আর ফেসবুককে পলিটিক্যাল গ্রাউন্ড ভাবতে শুরু করেছে। ইউটিউবারকে ভাবতে শুরু করেছে সেভিওর। অথচ ইউটিউব দিয়ে রাজনীতি হলে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ৫ বার সরকার চেঞ্জ করার কথা ছিলো। হয়েছে? না হয়নি। কারণ ইউটিউব বা ফেসবুক দেখে কেউ ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় না। সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করেও না। আপনি আপনার জীবনের কোনো ভাইটাল ডিসিশন বা পলিটিক্যাল আইডিওলজি ইউটিউবের একটা ভিভিও দেখে চেঞ্জ করবেন কোনোদিন? করবেন না। ধ্রুব রাঠির ভিডিওটা অবশ্যই ভালো। এখনও পর্যন্ত তার ভিডিও দেখেছেন ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। আর ভারতের ভোটার সংখ্যা কতো জানেন? ৯৬ কোটি। অর্থাৎ কমবেশি ১ শতাংশ ভোটারও ধ্রুব রাঠির ভিডিও দেখেইনি। কারণ এই ১৬ মিলিয়ন ভিউ-এর অনেক ভিউ আছে বাংলাদেশের, পাকিস্তানের, অভোটারের। ১ শতাংশ ভোটারকে যে রিচই করতে পারেনি, সে কীভাবে ভোটের হিরো হয়? দেখেন, ফেসবুক ইউটিউবে আমরা চেঞ্জ করতে আসি না। আমরা আমাদের দল ভারী করতে আসি। দেখবেন এখানে আওয়ামী লীগের কন্টেন্টে যেমন প্রচুর লাভ, লাইক, বিএনপির কন্টেন্টেও তাই। অর্থাৎ এখানে মানুষ যার যার আদর্শের পক্ষের কন্টেন্ট নিয়ে মাতামাতি করে। ভিন্ন আদর্শেরটা নিয়ে ক্রিটিক করে। ধ্রুব রাঠির ভিডিও তারাই দেখেছে, যারা কখনো মোদিকে ভোট দিতোই না। যারা মোদিকে ভোট দেয়, তারা ওর ভিডিও দেখেই না। আগেই বলেছি, ওর ভিডিও ভোটারদের ১ শতাংশ মানুষের কাছেও রিচ করতে পারেইনি। তাহলে ভোটের মাঠের খেলা চেঞ্জ করলো কে? রাহুল গান্ধী। লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার।
এই লোকটা গত চারটা বছর যে পরিশ্রম করেছে, জাস্ট আনবিলিভেবল। আমি কংগ্রেসের ভক্ত নই, ওদের রাজনৈতিক আদর্শ সমন্ধেও খুব জানি টানি না। বাট রাহুল গান্ধীকে আমি ফলো করার চেষ্টা করেছি সবসময়ই। ওর বিরুদ্ধে মোদির সবচে বড় অভিযোগ ছিলো, রাহুল রাজপুত্র। সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে পারে না। সেই রাহুল কৃষক আন্দোলন থেকে শুরু করে শ্রমিক আন্দোলন, সবখানে এতো বেশি ইনভলভ হইছে গত তিন বছরের, রাস্তায় রাস্তায় হেঁটেছে মাইলের পর মাইল, কোনো সন্দেহ ছাড়াই সে নিজেকে সাধারণ মানুষের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। রাহুলের আরো একটা উইকনেস ছিলো, উনি মোদির মতো এতো বাক্যবাগীশ না। জোরে কথা বলতে পারেন না। তার উপর বিজেপি যত বেশি আজেবাজে কথা বলেছে, উস্কানি দিয়েছে, চেষ্টা করেছে রাহুলকে দিয়ে বাজে কথা বলানোর, রাহুল বলেন নাই। ঠাণ্ডা মাথায় সাম্প্রদায়িক মন্তব্য এড়িয়ে নিজের ইমেজটা ক্লিন রেখেছেন।
এবং এই মানুষটার উদ্যোগে গড়া ইন্ডিয়া জোটই শেষ পর্যন্ত খেলাটা ঘুরাইছে। এই খেলাতে রাহুল, মমতা, কেজরিওয়ালের মতো অসংখ্য পলিটিশিয়ানদের শ্রম ঘাম রক্ত মিশে আছে। একজন ইউটিউবারের ভিডিও দিয়ে ওসব মুছে ফেলার চেষ্টা কেন? বাংলাদেশের আমাদের বয়সের পোলাপাইনের সমস্যা হলো, আমরা মাঠের রাজনীতিটা দেখিনি। তাই ইউটিউব ফেসবুকের মধ্যে এখন রাজনীতি শুরু করছি। অথচ সারাদিন ইউটিউবে ঘ্যান ঘ্যান করলেও যে মানুষ একটা ভোট বদলাবে না, এই সত্যটা আমরা বুঝি না। ইউটিউবারদের কাজ মোটিভেট করা। এন্টারটেইন করা। ওইটা ধ্রুব রাঠি ভালোভাবে করেছেন। বিজেপি বিরোধী ব্লককে একটা বুস্টআপ দিয়েছেন। বাট একেবারে তৃণমূলে যাইয়া মাঠের রাজনীতি চেঞ্জ করে মোদির ভোট নিজের পক্ষে নিয়ে আসা, এই অসাধ্য সাধনের কৃতিত্ব রাহুল গান্ধীর। এই দুর্দান্ত রাজনীতির কৃতিত্ব তারই পাওনা। একজন স্মার্ট পলিটিশিয়ানের রক্তে ঘামে তিলতিল করে গড়ে তোলা এই পরিবর্তনের কৃতিত্ব যদি একটা ইউটিউবের ভিডিওকে দিয়ে দেন, তাহলে সেইটা রিয়েল হিরোর প্রতি অসম্মান করা হয়। রাজনীতির রিয়েল হিরোকে রেখে আপনি যখন ইউটিউবের ফেইক হিরোকে নিয়ে মাতামাতি করেন, তখন এইটাও প্রমাণ হয়, আপনার রাজনীতির আইকিউ কতোটা লো, রাজনীতি বোঝার জন্য যে বেসিক নলেজ লেভেল দরকার, ইউটিউব দেখতে দেখতে ওই মিনিমাম আইকিউটাও আপনি হারিয়ে ফেলেছেন। ফেসবুক থেকে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন