মিনার রশিদ
আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতা জনাব সালাহউদ্দিন ইউসুফ শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন! তিনি শেখ মুজিবের সমসাময়িক নেতা ছিলেন । আত্মীয়তা ও আঞ্চলিকতার সূত্রেও শেখ পরিবারের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল। ফলে নিজেকে এই ইয়াতিম মেয়ে দুটির একজন সুহৃদ এবং মুরব্বি হিসাবেই গণ্য করতেন। সেই আত্মবিশ্বাস এবং সাহস থেকেই একটু দরদ-মাখা কণ্ঠেই একদিন তাঁর ভাতিজিকে বললেন, মাগো, তোমার মুখটা একটু বন্ধ রাখলেই তোমার জন্যে এবং পার্টির জন্যে খুবই উপকার হয়! এই ধৃষ্টতার পরিণাম বা জবাব আসতে সময় লাগল না। ঐদিন সন্ধ্যায় টিভি নিউজে ঐ মুরব্বি দেখেন যে তিনি দফতর বিহীন মন্ত্রী বনে গেছেন। সেই দুঃখে- শোকে বেচারা আর বেশি দিন বাঁচেন নাই। কালো বিড়াল খ্যাত আরেক উজিরে খামাখা দফতরবিহীন হয়ে মন্তব্য করেছিলেন, বাঘে ধরলে ছাড়ে, হাসিনা ধরলে ছাড়ে না।
এর পরে পার্টির ভেতরে কেউ আর সালাহউদ্দিন ইউসুফ হন নাই, সবাই জিল্লুর রহমান বা তৈলুর রহমান হয়েছেন! তৈলুর রহমান বলেছিলেন, আমার নেত্রী এরিস্টটল, প্লেটো, সক্রেটিসের মত বড় দার্শনিক হয়ে পড়েছেন! কাজেই তিনি ভুল করতে পারেন না। এই তেলের মাধ্যমেই তার প্রেসিডেন্ট পদটি নিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। কয়েকবছর আগে মোজা বাবু বলেছিলেন, মাননীয় নেত্রী! আপনাকে নিয়ে এখন বিশ্ব মিডিয়ায় যেভাবে টানাটানি শুরু হয়েছে তাতে আশংকা হচ্ছে যে আমরা আর কখনোই আপনাকে কাছে পাব না। অর্থাৎ আগেকার দিনের নবরত্ন সভার মতই তিনি গণভবনে আয়োজন করেন নবরত্ন (সংবাদ) সম্মেলন। এদের তেল দেখে তৈলুর রহমানও লজ্জা পেয়ে যেতেন! সেখানে মোজাম্মেল বাবু, শ্যামল দত্ত, নাইমুল ইসলাম, নঈম নিজাম, ফারজানা রূপারা একেকজন গোপাল ভাঁড়ের ভূমিকায় নামেন। কে কত চটকদার তেল মেরে মালকিনকে খুশি করবেন, তারই প্রতিযোগিতা চলে!
এগুলো আসলে যে একজন ব্যক্তির মানসিক ব্যাধির কারণে ঘটছে তা প্রথমে জানান দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান! শেখ হাসিনা যে হিউব্রিস সিন্ড্রোমে ভুগছেন, সেই ব্যাপারটি তিনিই প্রথমে ধরতে পেরেছিলেন। এই ডায়াগনোসিসটি তিনি করেছিলেন এখন থেকে ৫/৬ বছর আগে। তাঁর সেই ডায়াগনোসিসটি কতটুকু সঠিক ছিল তা সর্বশেষ লন্ডনে অবস্থান কালীন সময়ে শেখ হাসিনা তা সম্যক বুঝিয়ে দিয়েছেন। তার অন্যান্য মানসিক অসুস্থতার সাথে সাথে হিউব্রিস সিন্ড্রোমের সিম্পটমগুলি এবার আরও স্পষ্ট হয়েছে।
শেখ হাসিনার এই রোগটি নাম সহ বলে দেওয়ার জন্যে সেদিন যেখানে তারেক রহমানকে প্রশংসা করার দরকার ছিল, সেখানে সর্বমহল থেকে তাঁকে তিরস্কার করা হয়। এরপর হাইকোর্ট থেকেও তাঁর বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
আজ হাইকোর্ট স্বীকার করছে যে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এবং তাদের দল দেশটিকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছে। অথচ এই হাইকোর্ট সেদিন তারেক রহমানের এই সব ডায়াগনোসিস বা বক্তব্য প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যাতে মানুষ এই সব খবরগুলো সম্পর্কে অবগত হতে না পারে। কাজেই বলা যায়, এই সাইকোপ্যাথকে জাতির ঘাড়ে সওয়ার করাতে বা এই দেশটিকে জাহান্নাম বানাতে এই আদালতের ভূমিকা কোনোভাবেই কম নহে!
এবার চলুন দেখি, এই হিউব্রিস সিন্ড্রোমটা আসলে কী, এর উপসর্গগুলো কী এবং আমাদের এই রোগীর (হাসিনা বিনতে মুজিব) মাঝে কতটুকু এবং কীভাবে কাজ করছে। তাকে দেখে এটা বংশগত রোগ বলেও মনে হয়। এব্যাপারে গবেষণা অব্যাহত থাকবে।
হিউব্রিস সিন্ড্রোম : একটি আচরণগত অস্বাভাবিকতা যা ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের মাঝে দেখা যায়, বিশেষ করে ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের অবস্থানে, যখন তারা অত্যধিক অহংকারী, আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং তাদের নিজস্ব ক্ষমতার অতিরঞ্জিত অনুভূতি প্রদর্শন করে। আক্রান্ত সেই ক্ষমতাবান ব্যক্তি তার নিজের জন্যে এবং দেশের জন্যে অত্যন্ত মারাত্মক হয়ে পড়েন!
নিচের ১৪টি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কারও মাঝে তিনটি বা চারটি সিম্পটম দেখা গেলেই তাকে এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত বল ধরা হয়। এব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শেখ হাসিনার মাঝে এই ১৪টিই রয়েছে, নিদেনপক্ষে ১২টি। প্রিয় পাঠক, বুলেট পয়েন্টগুলি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন এবং হাসিনার সাম্প্রতিক এবং আগের সকল আচরণ এবং মন্তব্যের সাথে মিলিয়ে দেখুন।
হিউব্রিস সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি -
-এই দুনিয়াটাকে শুধু নিজের ক্ষমতা চর্চা ও গৌরব প্রকাশের স্থান হিসাবে জ্ঞান করে।
-নিজেকে সকল ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে মনে করে এবং সকল সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং পরিণামকে সব সময় খাটো করে দেখে।
-কাঙ্ক্ষিত ইমেজ এবং উপস্থাপনায় একটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ উদ্বেগ তুলে ধরে।
-ভাবসাবে পয়গম্বর/মেসিয়া সুলভ আচরণ করে ।
-নিজের সংস্থা বা দলকেই জাতি হিসাবে গণ্য করে
-উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্বার্থকে অভিন্ন বিবেচনা করে।ফলে নিজের দল বা আদর্শের বাইরে কারও মাঝে দেশপ্রেম থাকতে পারে এটা বিশ্বাস করে না।
-কথা বলার সময় নিজেকে থার্ড পার্সন হিসাবে তুলে ধরে অথবা রাজকীয় স্টাইলে আমি এর স্থলে 'আমরা' ব্যবহার করে।
-নিজের বিবেচনাবোধের প্রতি অত্যধিক আস্থা রাখে এবং অন্যের পরামর্শ বা সমালোচনার প্রতি অবজ্ঞা করে বা তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে।
-অতিরঞ্জিত আত্মবিশ্বাসে নিজেকে সর্বশক্তিমানের কাছাকাছি ভাবা শুরু করে।এমন একটা বিশ্বাস ধারণ করে যে সহকর্মী বা আশেপাশের ধুলোমাটি মিশ্রিত জনমতের প্রতি দায়বদ্ধ নয়, বরং ইতিহাস বা ঈশ্বরের আদালতের মুখাপেক্ষী কাছে যা জনতার আদালত থেকে হাজারগুণ বেশি শ্রেয়। সাথে সাথে একটা দৃঢ় বিশ্বাস যে সেই মহান আদালতে তারা কামিয়াব/ সফল হবে।(উদাহরণ : শেখ হাসিনা বেহেশত কনফার্ম করে ফেলেছেন!)
-বাস্তবতার সাথে যোগাযোগ হারিয়ে প্রায়শই প্রগতিশীল ফ্যান্টাসিতে নিজেকে আবৃত করে ফেলে!
-অস্থিরতা, বেপরোয়া মনোভাব এবং আবেগ প্রবণতা এদের সকল সত্ত্বাকে গ্রাস করে ফেলে। নিজেদের চেতনা বা আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অপরাপর বিষয়ের ব্যবহার উপযোগিতা বা গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সুযোগ দিতে চায় না। নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের খরচ কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণাম নিয়ে উদাসীন থাকে। কোনো পলিসি কার্যকর করার ক্ষেত্রে যেহেতু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ছোটখাটো বিষয়গুলো উপেক্ষা করে যায় - ফলে নিজেদের অক্ষমতার কারণে সহজেই মারাত্মক মারাত্মক ভুল করে বসে। সেই ভুল কখনোই স্বীকার করে না।
হিউব্রিস সিন্ড্রোমের প্রধান সিম্পটম অত্যধিক আত্মবিশ্বাস (Excessive self-confidence): হিউব্রিস সিন্ড্রোমে ভোগা পলিটিশিয়ানরা নিজেকে সকল ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে মনে করে এবং সকল সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং পরিণামকে থোরাই কেয়ার করে। গত ২৪ মাসে রিজার্ভ ২৮ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে তারপরেও বলে, নেভার মাইন্ড! যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের স্যাংশনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি, তারপরেও গলা বা চাপার আওয়াজ / কনফিডেন্স কমে না। দেশের ক্রমবর্ধমান এই রিজার্ভ বাড়াতে (অর্থনীতির এই নারিকেল গাছ হিসাবে তৈরি পোশাক ও শ্রমিক রফতানির চারাগাছগুলো রোপণ করে গেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া) আঠার কোটি মানুষের কোনো অবদান নেই - একাই তিনি এই রিজার্ভ বাড়িয়েছেন! সমালোচকরা বেশি ফালাফালি করলে তিনিই আবার সেটা ৯/১০ বিলিয়নে নামিয়ে বসে থাকার হুমকি দিলেন! নিজের সমালোচকদের এসির বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া, শরীরের জমানো তেল কমানো সহ অনেক হুমকি দিয়েছেন! খুন, গুম, হত্যা তো রয়েছেই। কিছুদিন আগে ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং বেগম জিয়াকে টুপ করে পদ্মা নদীতে ফেলার খায়েশ প্রকাশ করেছিলেন! ফলে হিউব্রিস সিন্ড্রোমে আক্রান্তের তীব্রতাটা বা মাত্রাটা সহজেই অনুমেয়।
নিজের ইমেজকে স্ফীত বা ইনফ্লেইট করার জন্যে অনেক ফেইক কলামিস্ট তৈরি করে সেসব কলাম দেশে বিদেশের অনেক পত্র পত্রিকায় মিলিয়ন ডলার খরচ করে ছাপানো হয়েছে। এএফপি অনুসন্ধান করে সেই সব ফেইক কলামিস্টের খবর সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেয়। রাজকোষের কোটি কোটি টাকা খরচ করে নিজের জন্যে ও পরিবারের সদস্যদের জন্যে নানা পুরস্কার সংগ্রহ করেছেন। বিদেশের নাম না জানা অখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথিবীর তৃতীয় সৎ প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি এনে তা রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে সকল গণমাধ্যমকে প্রচারে বাধ্য করা হয়েছে। নিজের ছেলের জন্যে যে পুরস্কারটি সংগ্রহ করা হয়েছে খোদ সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং তার স্ত্রীকে প্রতারণার অভিযোগে সাজা দিয়েছে আমেরিকার আদালত। কৃত্রিমভাবে স্ফীত সেই ইমেজ চুপসে গেলেও এই সাইকোপ্যাথদের কোনো বিকার নেই। এটা হলো Obsession with personal image.
আক্রান্তদের আরেকটা বড় সিম্পটম আত্মকেন্দ্রিকতা (Self-centeredness ), ব্যক্তিগত স্বার্থের উপর ফোকাস/ বেশি জোর দেওয়া এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতির অভাব। নিজের মেয়ে জামাই মধ্য প্রাচ্যের একটি দেশে আইনি জটিলতায় আটকা পড়লে কালবিলম্ব না করে সেই জামাইকে কুল্লে খালাস বা তালাক দিয়ে দেওয়া। এটা শুধু শেখ পরিবারেই সম্ভব।
নিজের প্রায় সমবয়সী প্রতিপক্ষকে আশি বছরের বুড়ী ডেকে অত্যন্ত অবজ্ঞা ভরে তাঁর আসন্ন মৃত্যু নিয়ে কটাক্ষ করলেন, ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে কীভাবে নিজে বের করেছেন - দম্ভ ভরে সেই কাহিনীও শোনালেন। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা আটকে দিয়ে এবং তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে পৈশাচিক উল্লাস প্রকাশ করলেন। তার সেই সব দম্ভপূর্ণ উক্তি এবং পৈশাচিক উল্লাস ও উদগীরণ শুনে সভ্য দুনিয়া স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে।
এই সিন্ড্রোমের আরেকটি প্রকাশ হলো বেপরোয়া মনোভাব (Recklessness ), ইংরেজিতে যাকে বলে A disregard for rules, norms, or ethical considerations. সামাজিক নিয়ম, জনগণের বোধ-বিশ্বাস বা নৈতিক বিবেচনার প্রতি অবহেলা বা উপহাস। মতিউর রহমান রেন্টুর বইয়ে এরকম অনেক কাহিনী বিধৃত রয়েছে। নামাজি মানুষকে যারপরনাই তিনি ঘৃণা করেন। উত্তরবঙ্গের স্থানীয় এক নেত্রীর অভিযোগের সূত্র ধরে তিনি এই দেশের মানুষকে বেশ্যা দ্বারাই শাসন করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন। সেই প্রতিজ্ঞাও তিনি যথাযথ পালন করেছেন বলেই মালুম হয়! চারদিকে পাপিয়াদের জয় জয়াকার, হুংকার শোনা যায়। 'টিইপ্পা দে আমারে টিইপ্পা দে' গানের শিল্পী এখন পবিত্র সংসদের এমপি। সেই এমপি আবার নাকি বোখারী- মুসলিম- আবু দাউদের সব হাদিস পড়ে ফেলেছেন। সকল জায়গায় বাটপার সাহেবরা বসে নীতি - নৈতিকতার সবক দেয়। একদিকে মদিনার সনদ অনুযায়ী দেশ পরিচালনার ঘোষণা অন্যদিকে ম্যাঁখোর সাথে ঢলাঢলি ও গলাগলি হলো Restlessness (মানসিক অস্থিরতা), recklessness (বেপরোয়া) and impulsiveness এর চূড়ান্ত নমুনা।
হিউব্রিস সিন্ড্রোমের Obsession with personal image টিও শেখ হাসিনার মাঝে শতভাগ বিদ্যমান রয়েছে। রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচ করে নিজের জন্যে ও পরিবারের সদস্যদের জন্যে ডজন ডজন পিএইচডি ডিগ্রী, পদক বা পুরস্কার সংগ্রহ করেছেন।অতি সত্ত্বর পুতুলও একটি খয়রাতি বা তেজারতি পিএইচডি ডিগ্রী পেতে যাচ্ছেন! আশা করা যায়, কিছুদিনের মধ্যে শেখ পরিবারের ডগগুলোও পিএইচডি ডিগ্রী ধারী হয়ে পড়বে। বিদেশের নাম না জানা অখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথিবীর তৃতীয় সৎ প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি এনে তা রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে সকল গণমাধ্যমকে প্রচারে বাধ্য করেছেন। মজার ব্যাপার হলো, সেই প্রতিষ্ঠান এখন আর সেরকম র্যাঙ্কিং করে না। কথিত আইটি বিশেষজ্ঞ নিজের ছেলের জন্যে যে পুরস্কারটি সংগ্রহ করেছেন, পুরস্কারদাতা খোদ সেই প্রতিষ্ঠানের চাইনিজ মালিক এবং তার স্ত্রীকে প্রতারণার অভিযোগে কিছুদিন আগে সাজা দিয়েছে আমেরিকার আদালত।
বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতাও (Detachment from reality) স্পষ্ট হয়ে পড়ে। ইনি মনে করেন দেশটিকে তিনি সিঙ্গাপুর বা সুইজারল্যান্ড বানিয়ে ফেলেছেন। দেশের সমস্ত রাস্তাঘাট ইউরোপ আমেরিকার চেয়েও উন্নত হয়ে পড়েছে! দেশের জনগণের সুখের পেয়ালা উপচে পড়ছে। এই মিথ্যাগুলি বলতে বলতে হিউব্রিস সিন্ড্রোমের কারণে নিজেও তা বিশ্বাস করা শুরু করেছেন!
নিজেদের দলের মূল নেতাকে রীতিমত পয়গম্বর বানিয়ে ফেলেছেন। নবীর সমালোচনা করলে আইনে যতটুকু সাজা রয়েছে নিজেদের আদর্শিক নেতার সমালোচনা করলে দ্বিগুণ সাজার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিজেও অনেকটা পয়গম্বর-কন্যার আসনে বসে গেছেন! সেই কনফিডেন্স থেকেই এযুগের বিবি ফাতেমা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর মেয়ে চুরি করতে পারে না। এই বিবি ফাতেমার নিজের একখান বাড়িও নাই। সেজন্যেই তিনি গণভবন ছাড়তে চান না।
ডিজিটাল সাহাবিরা কেউ বলেন আলা-হজরত, কেউ ডাকেন পীর, কেউ ডাকেন কওমী জননী। ফেরাউনের মতই তিনি বিশ্বাস করেন যে দেশের সব মানুষকে তিনিই খাওয়ান, তিনিই পরান। একটি আধুনিক রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী কি এমন ধৃষ্টতা আসলেই দেখাতে পারেন?
রোহিঙ্গা বিষয়ে এক আওয়ামী হাদিসে শেখ রেহানাকে উদ্ধৃত করে এই কথা তিনি জানিয়েছেন। শেখ রেহানা নাকি তাকে বলেছেন, “ বুবু, তুমি ষোল কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে দশ লাখ রোহিঙ্গাকে খাওয়াতে পারবে না ?’’ এদেশের মানুষের আয়ুও তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করছেন। কক্সবাজারের মেয়র মুজিবুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য আল্লাহ শেখ হাসিনার জন্য ফেরেশতা পাঠাবে। এটা বিশ্বাস না করলে ঈমান চলে যাবে! কাজেই হিউব্রিস সিন্ড্রোমের আধ্যাত্মিক বা messianic এই নর্মটিও শতভাগ পূরণ হয়েছে।
দুদিন আগে দেখলাম প্রথম আলোর আনিসুল হক প্রশ্ন করেছেন, পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে আমরা কী রেখে যাচ্ছি? প্রশ্নটি অনেককেই ভাবাচ্ছে! সমস্যা হলো, এই আনিসুল হকগণ সমস্যা তুলে ধরেন, তা নিয়ে আফসোস করেন, মাঝে মাঝে ভ্যামরাইয়া কান্দেনও। কিন্তু কানটি ধরে এমনভাবে টান দেন যাতে মাথাটি বেরিয়ে না পড়ে। দরকার শুধু একটা হিচকা টান।
লেখক: মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, লেখক ও গবেষক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন