আমিনুল ইসলাম
সরাসরি টেলিভিশনে দেখছিলাম। আমার লেখা যারা নিয়মিত পড়েন; তাদের নিশ্চয় ধারণা আছে- স্পেস, এলিয়েন, ইউএফও এইসব বিষয়ে আমার আগ্রহ আছে। সেই আগ্রহের জায়গা থেকেই সরাসরি দেখছিলাম টেলিভিশনে। চন্দ্রযান-৩ চাঁদে সফল অবতরণ করেছে। এর মধ্য দিয়ে ভারত একটা ইতিহাস গড়ে ফেলেছে। এর আগে অবশ্য আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চায়না চাঁদে তাদের নভোযান অবতরণ করিয়েছে। কিন্তু এদের কেউই চাঁদের সাউথ-পোল (চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে) নামতে পারেনি। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে ভারতই প্রথম দেশ; যারা সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে পেরেছে। কয়েকদিন আগে রাশিয়ানরাও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের অভিজান ভেস্তে গিয়েছে। ভারতীয়রা ঠিকই সফল হয়েছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরু বেশ অন্ধকার এবং জায়গাটা মসৃণ নয়। সেখানে উঁচু-নিচু পাহাড় থাকাতে কোনো নভোযান অবতরণ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এমনকি আমেরিকানরা পর্যন্ত পারেনি দক্ষিণ-মেরুতে অবতরণ করতে। তার আগেই ভারতীয়রা চলে গিয়েছে।
এই নভোযানে একটা রোবট আছে। এখন এই রোবটটি ভালো করে খুঁজে দেখবে সেখানে জমাটবাঁধা বরফ রয়েছে কিনা। যদি সত্যিই থেকে থাকে। তাহলে সেখান থেকে পানি, অক্সিজেন এবং অন্যান্য জ্বালানির উৎস সংগ্রহ করা সম্ভব হবে হয়তো। এমনকি চাঁদে মানুষ থাকতে পারবে কিনা। সেখানে বসতি গড়া যাবে কিনা। এই নিয়েও একটা সিদ্ধান্তে হয়তো আসা যাবে। আজকের পর থেকে পৃথিবী একটা নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। আর সেই অধ্যায়টির সূচনা আমেরিকা-রাশিয়া কিংবা চায়না করেনি। করেছে আমাদের পাশের দেশ ভারত। টেলিভিশনে সরাসরি দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, ভারতীয়রা দেখতে আমাদের মতো। ওদের চাল-চলন, খাদ্য অভ্যাস সব কিছুই আমাদের মতো। ইনফ্যাক্ট আমরা তো একটা সময় ভারতীয় উপমহাদেশের অংশই ছিলাম। ভারতীয়রা কোথায় চলে গেলো। আর আমরা কোথায় পড়ে রইলাম। শুধু আমাদের রাজনীতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। পুরো পৃথিবীর সকল দেশের সকল টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ব্রেকিং নিউজ দিয়ে প্রচার করছে ভারতীয়দের এই সাফল্য। আমাদেরও আজ এখানকার একটা স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। স্কুলের বাচ্চাদের এই দৃশ্য টেলিভিশনে সরাসরি দেখানো হয়েছে। আমরাও গিয়েছিলাম ওই দৃশ্য বাচ্চাদের সঙ্গে দেখার জন্য।
স্কুলের একটা বাচ্চা আমার কাছে জানতে চেয়েছে, তুমি নিশ্চয় ভারতীয়? আমি হেসে উত্তর দিয়েছি, না, আমি ভারতীয় নই। আমি বাংলাদেশি। বাচ্চাটা হয়তো ভেবেছিলো, আমি ভারতীয়। আমার কাছ থেকে হয়তো ভারত সম্পর্কে জানবে বা এমন কিছু। আমাদের কথা আর আগায়নি। সে আবার অন্য বাচ্চাদের সাথে গিয়ে চাঁদ দেখতে কেমন। সেখানে কি পাওয়া যায়, না পাওয়া যায় এইসব নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করেছে। আমি ভাবছিলাম, ভারতীয়রা পেরেছে। আমাদের তাই বলে পারতে হবে এমন না। সবাই তো আর পারছে না। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমাদের স্থানটা আসলে কোথায়? আমাদের ইউনিভার্সিটির ছাত্র-শিক্ষকরা সর্বক্ষণ ব্যস্ত ‘আমরা’ই সেরা’ নিয়ে। কোথাও কি কোনো জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা আদৌ হয়? সবাই আছে পদ-পদবী নিয়ে ব্যস্ত। আমার কি ধারণা জানেন? আমার ধারণা বাংলাদেশের ৮০ ভাগ স্কুল,কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা জানতোই না আজ যে এমন একটা সফল অবতরণ হতে যাচ্ছে। আর আমাদের এখানকার প্রাইমারী স্কুলের বাচ্চারা কিনা আগে থেকে প্রস্তুত ছিল সে দৃশ্য সরাসরি দেখার জন্য। বাড়ির পাশের দেশ ভারতীয়রা চাঁদে সফল অভিযান চালাচ্ছে। এটি হয়তো আমাদের অনেকের জানা ছিলা না। অথচ হাজার মাইল দূরের দেশ গুলো ঠিকই খেয়াল রাখছে, জানার চেষ্টা করছে- তারা কিভাবে এতো দূর এগিয়ে গেলো। আর আমরা ব্যস্ত আছি চা, সিঙ্গারা, সমুচা এইসব নিয়ে। ফেসবুক থেকে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন