কদরুদ্দিন শিশি
ভিপি নুরকে নিয়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সংক্রান্ত খবর বাংলাদেশের মিডিয়াতে দেখে বিষয়টা সম্পর্কে আরেকটু জানতে আগ্রহ জাগলো। রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য যেভাবে সংবাদমাধ্যমে এসেছে তাতে সেগুলোকে 'আনডিপ্লোমেটিক' মনে হয়েছে।
তাই দূতাবাসের এক কর্মকর্তা যিনি মিডিয়া কো-অর্ডিনেট করেন তার সাথে যোগাযোগ করে রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাই। আসলে কী বলেছিলেন রাষ্ট্রদূত?
ফিলিস্তিনি দূতাবাসের ওই কর্মকর্তার বক্তব্য হলো, মিডিয়া পুরো বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে।
"রাষ্ট্রদূত নতুন কোন তথ্য দেননি। বরং তিনি মিডিয়ায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কথা বলেছেন, যেটা আপনারা আমরা সবাই জানি। ফিলিস্তিনি গোয়েন্দারা নতুন কোন তথ্য দেয়নি", বলেছেন ওই কর্মকর্তা। (যেহেতু আমি রিপোর্ট লিখছি না, ফলে তার নাম উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকছি)।
রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপনের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ওই কর্মকর্তা এই কথাটিও বলেছেন, "যেসব সাংবাদিক ইংরেজি বুঝেন না, তাদের উচিত ইংরেজি ভাষার কোর্সে ভর্তি হওয়া!"
ওই অনুষ্ঠানটা ছিল রোহিঙ্গাদেরকে ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে সহায়তা বিতরণ উপলক্ষে। "কিন্তু মিডিয়া মূল বিষয়ে রিপোর্ট করেনি। একজন সাংবাদিক অপ্রাসঙ্গিকভাবে নুরের ইস্যুটি নিয়ে আসেন", বলেছেন ওই কর্মকর্তা।
আমি তার কাছে ওই অনুষ্ঠানের বক্তব্যের পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান তারা রেকর্ড করেননি। মিডিয়ার লোকেরাই রেকর্ড করেছে এবং তাদের অনেকের রিপোর্টে বেশিরভাগ বক্তব্যই আছে।
কল রেখে আবার মিডিয়ার কয়েকটি রিপোর্ট দেখলাম।
সময় টিভির ইউটিউবে সাড়ে ৩ মিনিটের একটা ফুটেজ আপলোড করা হয়েছে রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের। সেখানে প্রথম অংশে রাষ্ট্রদূত সাফাদির সাথে নুরের বৈঠক নিয়ে কয়েকটি কথা বলেছেন, এবং পরবর্তী অংশে একধরনের 'প্রতিক্রিয়া' ব্যক্ত করেছেন।
প্রথম অংশটি, যেটিকে দেশি মিডিয়া ''নুরের বিরুদ্ধে মোসাদের সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের", হিসেবে প্রচার করেছে সেই অংশে রাষ্ট্রদূত যা বলেছেন তা সময় টিভির ফুটেজে দেখা ও শোনা যায় এভাবে:
"This information came to our attention during the football games in Qatar. That was the first time into our attention. And our intellegent sources were interested about this. And they were able to get some photos, he was meeting with Safadi, ...on this issues. There was other meetings took place I think in Dubai, in Qatar, in India. Those are places that they have met."
সময় টিভি এটির বঙ্গানুবাদ করেছে এভাবে:
"তথ্যটি আমাদের কাছে সর্বপ্রথম কাতার বিশ্বকাপের সময় আসে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন। তারা কিছু ছবি সংগ্রহ করে, যাতে দেখা যায় তিনি সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়া দুবাই, কাতার ও ভারত এ তিন জায়গায় তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে।"
এই অনুবাদটি এমনভাবে করা হয়েছে যা মূল ইংরেজি বক্তব্যটির অর্থ কিছুটা বিকৃত করে ফেলে, এবং পুরো ঘটনাকে 'ফিলিস্তিনি গোয়েন্দা সংস্থা দেয়া নতুন তথ্য' হিসেবে ধারণা দিতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রদূত বলেছেন, "And our intellegent sources were interested about this."
এটির অনুবাদ সময় টিভি করেছে, "আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন।"
লিটারালি এই লাইনটির অনুবাদ হবে: "(এবং) আমাদের গোয়েন্দা সূত্রগুলো এ বিষয়ে আগ্রহী ছিল।"
''আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন'' বলে এরপর যদি বলা হয় "এছাড়া দুবাই, কাতার ও ভারত এ তিন জায়গায় তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে", তাহলে যে কেউ ধারণা পাবে, ফিলিস্তিনি গোয়েন্দা সংস্থা এই দেশের বৈঠকের বিষয়ে নিজ উদ্যোগে জানতে পেরেছে।
তাহলে সেটা নতুন তথ্য হয় বাংলাদেশি মিডিয়ার জন্য। এবং এটা দিয়ে খবর প্রকাশ করা যায় এবং নুরকে অভিযুক্ত করা যায়।
কিন্তু রাষ্ট্রদূত বলেননি 'কাজ শুরু করে'। এ বিষয়ে আগ্রহী ফিলিস্তিনি গোয়েন্দা সূত্রগুলোও যেমন ছিল, তেমনি আমরা বাংলাদেশি সাধারণ মানুষরাও ছিলাম। এবং সাফাদির সাথে বৈঠকের ছবি শুধু গোয়েন্দারা নয়, সামাজিক মাধ্যম ও মিডিয়ার মাধ্যমে সবাই 'সংগ্রহ' করতে সক্ষম হয়েছে!
আর দুবাই, কাতার ও ভারতে বৈঠকের বিষয়েও নিশ্চিত করে কিছু বলেছেন বলেও রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য থেকে মনে হয়নি। তিনি 'ও ঃযরহশ' ব্যবহার করে এ বক্তব্যটি দিয়েছেন, যা সময় টিভি বা অন্য সংবাদমাধ্যমের অনুবাদে রিফ্লেক্টেড হয়নি।
কুটনীতিকের বক্তব্যের (বা কোন সংস্থার স্টেইটমেন্টের) হুবহু অনুবাদ না করে অনুপোযোগী শব্দ ব্যবহার করা বা কোন শব্দ বাদ দেয়া অর্থ বিকৃতির ঝুঁকি তৈরি করে।
সাংবাদিক হিসেবে যতটুকু সাম্প্রতিক ঘটনা ফলো করি তাতে জানি যে, ভিপি নুর তার সর্বপ্রথম বিদেশ সফর করেন গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। ওই সময়ই তিনি দুবাইয়ে মেন্দি সাফাদি নামক এক ইসরায়েলির সাথে দেখা করেন।
এরপর মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ সফর শেষে দেশে ফিরেন। ওই ঘটনার পর থেকে নুরের আর কোনো বিদেশ সফরের খবর শুনিনি। তার ভারত সফরের কোন ঘটনা ঘটলে তা মিডিয়াতে রিপোর্টেড না হওয়ার কোন কারণ নেই।
কিন্তু রাষ্ট্রদূত ভারতেও তার বৈঠকের কথা জানালেন! এই বিষয়টিতেও তার 'I think' এর প্রভাব রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তিনি নিশ্চিত না হয়েই বলেছেন এটা।
ভিপি নুরও গতকাল লাইভে এসে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন তার পাসপোর্টে ভারতের কোন ভিসাই নেই।
তবে রাষ্ট্রদূত যে সূত্র থেকেই নুর-সাফাদির বৈঠকের ব্যাপারে জেনে থাকেন না কেন, তার বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, সাফাদির সাথে বৈঠকে তিনি (হয়তো স্বাভাবিকভাবেই) নুরের ওপর ক্ষুব্ধ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন