সিরাজুল ইসলাম শাহীন।
১৯৪১ থেকে ২০২২; আশি ঊর্ধ্বের প্রাচীন দল জামায়াতে ইসলামী। ''খেলাফত আলা মিনহাজুননবুওয়্যাত '' এর লক্ষ্যে পরিচালিত পরিপূর্ণ ইসলামী আন্দোলন। ভারত উপমহাদেশ সহ বিশ্ব রাজনীতিতে বহুল আলোচিত নাম। সঙ্গতকারণেই ক্ষমতার বলয়ের ধারক গুষ্টি এবং বিশ্ব মোড়লদের মাথা ব্যথার কারন। দেশী-বিদেশী গোয়েন্দা চক্রের স্ক্যানিং তাই বাস্তবতা। বৈরিতার ভিতর দিয়েই দলটিকে পার করতে হয়েছে প্রায় পুরো সময়কাল। অপবাদ-অপপ্রচার, হিংসা-বিদ্বেষ, জুলুম-নিপীড়ন নিত্য নিয়তি। তবুও এ দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় জঙ্গীবাদের সাথে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা কেউ প্রমান করতে পারেনি। জামায়াতের পরিচ্ছন্ন রাজনীতি সচেতন মহলের কাছে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি জামায়াত সবসময় শ্রদ্ধাশীল। সংগঠনটি নিয়ে একাডেমিক পর্যায়ে রিসার্চ করা হয়। এমনকি এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে। তাই জামায়াতের সাথে জঙ্গিবাদ তেল ও পানির সংমিশ্রণের মত অবাস্তব।
সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এবং এজেন্সি গুলো বিষয়টি ভাল করেই জানে। তারপরও আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে হাস্যকর জঙ্গিবাদ মামলায় রিমান্ড নিয়ে চরম ধৃষ্টতার পরিচয় দিয়েছে। মূলত: সরকার জামায়াত আতঙ্কে ভুগছে। অন্যদের একটু লাঠি-হাতকড়া উঁচিয়ে মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠ দেখিয়ে নিতে পরলেও এদেরকে যেন কাবু করতে পারছে না। নায়েবে আমির সাবেক এম পি মাওলানা শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারী জেনারেল সাবেক এম পি মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল সাবেক শিবির সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান দীর্ঘদিন থেকে কারাগারে। বার বার জামিন হওয়ার পরেও আটকিয়ে দেয়া হচ্ছে। গায়েবী মামলা দায়ের হচ্ছে অবিরত। একমাত্র ছেলে সন্তান আটকিয়ে জঙ্গি মামলায় রিমান্ড নিয়ে হুমকি ধমকিতে আমীরে জামায়াতকে আটকানো যায়নি। প্রধান বিরোধী দলের সাথে একই দিন দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বিরোধী দলীয় যুগপৎ কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে সকল দুর্যোগে দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সবার আগে সর্বত্র ছুটে গিয়ে মানবিক নেতা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছেন। দক্ষতা, সাহসিকতা, বিচক্ষণতায় তাঁর ভিন্ন ইমেজ গড়ে উঠেছে। প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে পর্দার অন্তরালের কুশীলবরা। এখনই আটকাতে হবে তাঁকে। '৭১ টেবলেট এখানে অকার্যকর বিধায় ভিন্ন এ অপকৌশল - ' জঙ্গি মামলা '।
অনেক আটঘাট বেঁধে জঘন্য -গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বুনা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। চরম বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালে মিথ্যার সয়লাবে সফল হওয়ায় তারা এ দুঃসাহস দেখাচ্ছে। জামায়াত সামলানোর কলা দেখিয়ে অনেককে ঘুম পাড়িয়ে গোটা জাতিকে আরেকবার ভয়াবহতম খাদে ফেলে দেয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী চক্র আর নেহেরু ডিকটিনবাজরা এ ক্ষেত্রে একাকার। জাতীয় অস্তিত্বের স্বার্থে ভয়ানক এ থাবা এখনই ব্যর্থ করে দিতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সকল দেশপ্রেমিক দেশে বিদেশে সর্বোচ্চ সক্রিয় হতে হবে।
একাধারে শীর্ষ ৫ নেতাকে ফাঁসি দিয়ে, অনেককে ফাঁসি-আমৃত্যু দণ্ডাদেশে কারাগারে ফেলে, হত্যা করে, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় এবং অধিকাংশ স্থানীয় কার্যালয় বন্ধ রেখে জামায়াতে ইসলামী দমন করতে গিয়ে সরকার ইতিহাসের বিরল ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এতকিছুর পরেও আপন গতিতে জামায়াত এগিয়ে যাচ্ছে। এখন জনগণ বের হতে শুরু করেছে। কোন বাধা তাদের আটকাতে পারছে না। লাখো মানুষ সরকার পতনের আশায় মাঠে জমায়েত হচ্ছে। এ জনস্রোতের সাথে পরীক্ষিত শক্তি জামায়াত যুক্ত হতে পারলে আর রেহাই নাই। তাই ঘুম হারাম সরকার মহাশয়ের। ভুয়া আশ্বাস এবং কাউকে '' একাই একশ'র '' পাঠ চলছে অবিরাম। কিন্তু স্বস্তি মিলছে না। অস্থিরতা বাড়ছে। এ থেকেই এমন পাগলামির উপাখ্যান, '' জঙ্গী- জামায়াত- ডাঃ শফিক কানেকশন '' প্রসব করা হয়েছে। কিন্তু অতি প্রিমেচুরড হওয়ায় এর অকাল মৃত্যু অবধারিত।
এ দেশের মানুষ জঙ্গিবাদ কখনো প্রশ্রয় দেয়নি। সকল ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী শক্তি এর বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার। ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে এ সব অপপ্রচার তাই কোন দিন হালে পানি পায়নি। এবারো পাবে না ইনশাআল্লাহ।
সকলকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। কর্মসূচিতে বলিষ্ঠতা ও ধারাবাহিকতা জরুরী। নীরব থাকলে হায়েনার থাবা নিজ ঘাড়ে অচিরেই এসে পড়বে। অতীতের মত ভুল করা চলবে না। হিনমন্যতা এবং দলীয় সঙ্কীর্ণতা পরিহার করে প্রতিবাদে গর্জে উঠতে হবে। জনগণ প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। সময়ের সাহসী সিদ্ধান্ত দেখলে লুফে নেবে। বিপরীতে কাপুরুষতা মেনে নেবে না। স্রোতস্বিনী নদীর মত জনতা ময়দানি ভূমিকা দেখে আপন গতিপথ তথা মঞ্জিল নির্ধারণ করতে বাধ্য হবে ।
এ ভূখণ্ডে মুক্তিকামী জনগণ ব্যর্থ হয় না। ১৯৭০-এর আগে তাদের নেতাকে আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তা সফল হয়নি বরং জনতা দেশ স্বাধীন করে ছেড়েছে। এবার ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের এ লড়াইয়ে মানুষ ঘর থেকে বের হতে শুরু করেছে। তাদের কাঙ্ক্ষিত-পরীক্ষিত নেতা -দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না। স্বাধীনতার অসমাপ্ত লড়াইটা এবার বীরজনতা সফল সমাপ্তির দিকে নিয়েই যাবে।।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন