আলী আহমেদ মাবরুর
২৮ অক্টোবরের শহীদ শিপন: একজন হাফেজ কুরআন
শহীদ হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপন এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। তার বাবার সাথে, ভাইয়ের সাথে গত বছরও গিয়ে দেখা করলাম। তাদের আলাপ থেকেই জানলাম, মানুষকে ইসলামের দিকে, নামাজের দিকে টেনে নেয়ার বিষয়ে শহীদ হাফেজ শিপন খুবই সক্রিয় ছিল। ছেলে হিসেবে সে যেমন খুব শান্ত ছিল না, আবার খুব চঞ্চলও ছিল না।
ইলম অর্জনের বিষয়ে আগ্রহ থাকায় ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত সাধারণ মাদ্রাসায় পড়ার পর শিপনকে ভর্তি করা হয় হাফিজিয়া মাদ্রাসায়। সেখান থেকে সে যায় তামিরুল মিল্লাতে। ২৮ অক্টোবরের শহীদ হাফেজ শিপন দাখিল পরীক্ষায় ১১ তম বোর্ড স্ট্যান্ড করেছিলেন- তা অনেকেই জানেন না। হাফেজ হওয়ার পর শহীদ শিপন ভাই স্থানীয় মসজিদে টানা ৪টি রামাদানে তারাবীহ পড়িয়েছেন। তার তেলাওয়াতও মুসুল্লীরা ভীষণই পছন্দ করতো। তারাবীহ’র নামাজের বাইরে শিপন এলাকার অনেক মানুষকে বিশেষ করে যুবক ও কিশোরদেরকে সহীহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছে।
এলাকার মানুষজনের নানা সমস্যায়, চিকিৎসা সমাধানে শিপন ছিল সক্রিয়। শহীদের মায়ের কাছ থেকে জানা যায়, একবার স্থানীয় একটি ছেলের অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা উঠলে তাকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তির পর দেখা গেল তার ওষুধের টাকা নেই। হাফেজ শিপন তার নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ঐ ছেলের ওষুধ কিনে দেয় এবং সারারাত তার বিছানার পাশে থেকে সেবা-শুশ্রুষা প্রদান করে ভোরে পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরে।
এলাকার মানুষকে সে ইসলামের পক্ষে নিয়ে আসতে চাইতো। তাই সরাসরি সংগঠনের নামে দাওয়াতি কাজ না করে বরং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার আয়োজন করে তার মাধ্যমে সে দাওয়াতি কাজ করতো। ফজরের নামাজের সময় ছেলেদেরকে নামাজের জন্য ডাকতো ভোরে যেন কেউ না ঘুমায় সে জন্য শহীদ মাসুম তাদেরকে সাথে নিয়ে মাঠে খেলতে যেতো।
শহীদ শিপনের গুণাবলীগুলো আমাকে মুগ্ধ করে। আল্লাহ তাআলা ২৮ অক্টোবরে একই এলাকা থেকে দুজন শহীদকে কবুল করেছেন। একজন এই হাফেজ শিপন আর আরেকজন শহীদ মাসুম। এরা দুইজন জীবদ্দশায়ও মিলেমিশেই চলতো। আল্লাহ ২৮ অক্টোবরের সকল শহীদকে কবুল করুন। এই অন্যায়ের সুবিচার করার তাওফিক দিন। আমিন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন