সাইয়েদা ইয়াসমিন বানু
“আব্বা বলতেন, 'দাম্ভিক পরহেজগারের চাইতে অনুতপ্ত পাপী উত্তম।' ব্যক্তি জীবনে আব্বা ছিলেন পরহেজগার। যতক্ষন তিনি সুস্থ ছিলেন, সচেতন ছিলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে আমরা নামাজ কাজা করতে দেখিনি। শরীর ভীষণই অসুস্থ থাকা অবস্থায়ও ত্রিশ রোজাই রেখেছেন। আব্বা ধার্মিক ছিলেন কিন্তু গোঁড়া ছিলেন না; সাম্প্রদায়িক তো ছিলেনই না। তিনি বলতেন, সত্যিকারের ধার্মিক মানুষ কখনো সাম্প্রদায়িক হয় না।
আব্বার পোশাক-পরিচ্ছদের মধ্যে দুটো পায়জামা, দুটো পাঞ্জাবী, একটি গেঞ্জী, একটি শেরওয়ানী, একজোড়া স্পঞ্জের সেন্ডেল, একজোড়া জুতো, শীতের সময় একটি পুলোভার এবং একটি আলোয়ানই যথেষ্ট ছিল। নবিজি সা. এর সুন্নতকে ভালবাসতেন বলে আব্বা তালি দেয়া পোশাকও পরিধান করতেন।
দরিদ্রদের আব্বা খুব ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন রাসুল সা.-এর সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারী, তাই রাসুল সা. যেমন দরিদ্র ব্যক্তিদের ভালোবাসতেন, আব্বাও তাই। মহানবি সা. শ্রমের মর্যাদার যে শিক্ষা দিয়েছেন, আব্বা তার পুরো জীবনে তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে গেছেন।
সোনার চামচ মুখে নিয়েই আব্বার জন্ম হয়েছিলো, কিন্তু দু:সহ দারিদ্র্যের মধ্যে তাকে শেষনি:শ্বাস ত্যাগ করতে হয়েছে। অভাব ও দারিদ্র্য তার মাথা নত করাতে পারেনি। দরিদ্রতা বরং তাকে সম্মান দান করেছে। এই মর্দে মুমিন জীবনে আল্লাহ্ ছাড়া কারো সামনে মাথা নত করেন নি। শির উঁচু রেখে সম্মানের সংগে এই জরাগ্রস্থ পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছেন।
আব্বার ইন্তেকালের পরের ঘটনা বড়ই মর্মান্তিক। কপর্দকহীন হয়ে আব্বা ইন্তেকাল করেছেন। বাড়ী-গাড়ী, ব্যাংক-ব্যালেন্স এবং বিষয়-সম্পত্তি বলতে কিছুই রেখে যান নি। মুসাফির খালি হাতে আসে আর খালি হাতে ফিরে যায়। আব্বাও ছিলেন এমনি এক মুসাফির। দুনিয়ার বুক থেকে যখন আব্বা বিদায় নিলেন, তখন ছুটে এলেন তার অসংখ্য গুণমুগ্ধ, সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু আব্বা তখন অনেক দূরে। আব্বা তখন তাঁর প্রভুর সান্নিধ্যে পৌঁছে গেছেন।''
-- (আব্বাকে যেমন দেখেছি, লিখেছেন কবি ফররুখ আহমদের কন্যা সাইয়েদা ইয়াসমিন বানু)
শাহাবুদ্দীন আহমদ-সম্পাদিত 'ফররুখ আহমদঃ ব্যক্তি ও কবি', প্রথম সংস্করণ ১৯৮৪, পৃষ্ঠা ২৮৩-২৮৫)
ইসলামী জাগরণের কবি ফররুখ আহমেদ। সত্য ও ন্যায়ের পথে যার কলম ছিল আপোষহীন। আল্লাহ তাকে তার উত্তম কর্মকান্ডের জন্য সর্বোচ্চ প্রতিদান দিন। আমিন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন