রুকাইয়া আক্তার
দীর্ঘ ৯৬ বছরের কর্মভার সমাপ্ত করে মুসলিম উম্মাহর মাঝ থেকে বিদায় নিলেন বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ড. শায়খ ইউসুফ কারজাভী। তিনি মুসলিম উম্মাহর মাঝে মহান রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এক নিয়ামতস্বরুপ ছিলেন। তিনি তার গোটা জীবন ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠায় উৎসর্গ করে গেছেন।
শায়খ ইউসুফ আবদুল্লাহ আল কারজাভী মিসরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী গবেষক আলেম। তিনি মিসরভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের উপদেষ্টা ছিলেন।
মিসরীয় জাতিসত্ত্বার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও শায়খ কারজাভী কাতারে বসবাস করতেন। মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে তিনি কয়েকবার কারাবরণ করেন এবং সবশেষ মাতৃভূমি ত্যাগ করে কাতারে স্থায়ী হন। ২০১৫ সালে মিসরের একটি আদালত তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ জারি করে।
মুসলিমদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন শায়খ কারজাভী। মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন International Union of Muslim scholars এর সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।
একইসাথে জর্ডানের Royal academy for Islamic culture and research, ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (OIC), রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার, অক্সফোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আয়ারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা European Council For Fatwa and Research এর প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি আধুনিক উদ্ভূত নানা জটিল সমস্যার সাবলীল ও গভীর ইজতিহাদভিত্তিক সমাধানমূলক শতাধিক গবেষণা-গ্রন্থ রচনা করেছেন যা প্রকাশের পরপরই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে জ্ঞানী, গবেষক, পন্ডিতমহল ও সাধারণ মানুষের কাছে সেগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
মহান এই মনীষীর জন্ম ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, মিসরের উত্তর নীলনদের তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে। দুই বছর বয়সে বাবা ইন্তেকাল করলে চাচা তার লালন-পালন করেন। দশ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ কুরআন হিফজ করেন।
হিফজ সম্পন্ন করে আল-আজহার কারিকুলামে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে জাতীয় মেধায় দ্বিতীয় হন। প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুলুদ দ্বীন অনুষদ থেকে অনার্স, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘Institute of Imams’ এর পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন শায়খ ইউসুফ কারজাভী। কিছুদিন তিনি আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ‘Board of Religious Affairs’ এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরীয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডীন নিযুক্ত হন। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৯০-৯১ সালে আলজেরিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের Scientific Council এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে পুনরায় কাতার ফিরে আসেন।
শায়খ ইউসুফ কারাজাভী ১৪১১ হিজরিতে ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরস্কার লাভ করেন। ইসলামী শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৪১৩ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন । ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়াও তার বৈচিত্র্যময় পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি নানা পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন। তার অন্যতম কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার-
১. কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ।
২. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পদক, মালয়েশিয়া।
৩. আন্তর্জাতিক পবিত্র কুরআন সম্মাননা পুরস্কার, দুবাই।
৪. সুলতান হাসান আল বলকিয়াহ সম্মাননা, ব্রুনাই।
৫. আল-ওয়াইস পদক, সংযুক্ত আরব আমিরাত।
৬. জর্ডানের মেডেল অব ইন্ডিপেন্ডেন্স ।
(মহান রাব্বুল আলামীন তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুক)
আমিন
সূত্র : আলজাজিরা, উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন