মো:মুকতাদির রাশেদ
উন্নয়ন, নব্য বিত্তবান ও চিঁড়েচ্যাপটা নির্ধারিত আয়ের মানুষ
বাংলাদেশের গত ১ দশকে যে অর্থনৈতিক "উন্নয়ন" হয়েছে তা শহর, এমনকি গ্রামীণ জনপদেও দৃশ্যমান।
সাহেবদের চলার জন্য সুন্দর রাস্তা। নান্দনিক অফিস আদালত। আর মানুষের হাতে যে এখন প্রচুর টাকা তার জন্যে আপনাকে খুব একটা গবেষণা করার প্রয়োজন নেই। আমি যে ছোট্ট শহরে বড় হয়েছি সেখানে রাস্তাঘাটের উন্নয়নও নান্দনিক। এসব সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি যা আমাকে চমক দেয় মানুষের হাতে প্রচুর টাকা। আর এখানেই হিসাব মেলাতে পারিনা।
প্রশ্ন করতে পারেন "তুমি শ্রমিক মানুষ টাকার কি বুঝো?" আমি মানছি। কিন্তু চারদিকে তাকালে শুধু মনে পাশা সবাই গোপনে তাসপাশা খেলছে। কিন্তু ধরতে পারিনা। তাই বলে সবাই যে রিজেন্ট শাহেদ হয়েছে সে অভিযোগ করছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে আমরা অর্থনীতির assignment paper এ argument করেছি দুর্নীতি আমাদের মতো দেশগুলোতে আশীর্বাদ। হিসেবে তাই দেখেছি। এমনটি যে হয়েছে তা বলতে চাইনা। তাছাড়া এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত গবেষণা পরে আর করা হয়নি। তাহলে?
১। মেনে নিচ্ছি সরকারি চাকুরেদের বেতন বেড়েছে। সেটা তো ১৫ লাখ মানুষের। সাথে বেড়েছে জীবনযাত্রার মান। কিন্তু এটা ০.১ শতাংশ। সরকারের যে আয় তার উপর নির্ভরশীল।
২। রেমিট্যান্স বা হুন্ডির টাকা? হতে পারে। প্রবাসীদের পাঠানো টাকা হিসেবে রেখা উপর নিচ হয় হুন্ডির সহজ লভ্যতার উপর ভিত্তি করে । সাথে IT professional, freelancer, social media influencer দের কাছে প্রচুর currency আসছে।
৩। ব্যবসা বানিজ্য বিশেষত রপ্তানি। কিন্তু রপ্তানি তো আজকাল নতুন হচ্ছে না।
৪। #NacroFin অর্থাৎ সারাদেশে মাদকের যে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে তার টাকা ভাগ গ্রামে গ্রামে পৌঁছেছে। ভয়াবহ আকারে। রঙিন বাড়ি নামে সিনেমা বানানো যাবে।
৫। #Sexfin. বাংলাদেশের যৌনতার hotmoney কি পরিমান তার পরিসংখ্যান নাই তবে বর্তমানে sexfin যে বড় মার্কেট নিয়ে দেশে বিদেশে তা অজানা নয়। supply industry!
৬l প্রচুর সরকারি কাজ হচ্ছে। সরকারি দলের নেতাকর্মীরা সাথে মিলে মজা মিলে কিছুটা উপার্জন। এটাতো শেষ হবেনা। তাতে খালি মাঠকে paper এ স্টেডিয়াম দেখানো হলে জনগণের জানার সুযোগ কম।
এর বাইরে খুব solid কিছু পাইনা। অথচ! মফস্বল এলাকায় এখন কোটি টাকার গাড়ি চলতে দেখি। আমি আশ্চর্য হই।
কিভাবে সম্ভব। আমার তো বাচ্চার স্কুলের ফি ৫০০ টাকা বাড়লেও চিন্তা শুরু হয়। যার বেতন সর্বসাকুল্যে ৫০,০০০ টাকাও না তাদের পাঁচ -ছয় তলা বাড়ি। গ্রামের বাড়িতে চলাচল করে private কারে। মফস্বলেও এখন Fast Food দোকানে ভীড়।
ঢাকার অলিগলিতে Fast Food গুলোতে করোনার পর থেকে জমজমাট আড্ডা লেগেই আছে। প্রায় ২৫ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীন বিমানে চলাচল করে যা ২০১৩ সালে ছিলো মাত্র চার লাখ। কখন শুক্র বা শনিবার ঢাকার আশেপাশের রিসোর্ট বা কক্সবাজারের হোটেল গুলোতে যেতে দেখুন রুম পেতে কি বেগ পেতে হয়। আমার কাছে কেবলই অর্থনৈতিক চোরাবালি মনে হয়৷
লোকাল ফ্যাক্টারিতে যে প্রচুর production হচ্ছে এটা মানি কি করে যখন ভারত, চীনের পন্যে সয়লাব। ব্যয় বেড়ে নাভিশ্বাস!
৬৩ টাকার চাল ৭৯ ছিলো ঈদের সময়। কোকের ক্যান ৩৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা। ছোট সিংগাড়া দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ৮ টাকা। মানছি better living always expensive
কিন্তু এতো টাকা কিভাবে সম্ভব? অন্য দিকে খরচের ভারে, মধ্যবিত্তের বা বেতন নির্ভর উপার্জনকারী শ্রেনী এখন আর মধ্য বিত্ত নাই।
তাদের বড় অংশই উচ্চ ও মধ্য বিত্তের মাঝখানে নতুন একটা লেয়ার তৈরী করেছে। যাদের অংকের হিসেবে মধ্যবিত্ত বল্লে সংঙগা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। আর দীর্ঘ বছর ধরে গড়ে উঠা মধ্যবৃত্ত আজ তার পরিচয় হারিয়ে চিঁড়েচ্যাপ্ট্যা।
না পারছে তার নুন্যতম ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে না পারছে TCB লাইনে দাড়াতে। আর নব্য বিত্তবানেরা সমাজে ভয়ংকর বৈষম্য তৈরি করে রেখেছে৷ আপনি ফেসবুক দেখলে কিছুটা ধারনা করতে পারবেন। কিন্তু সবই মাছের তেলে মাছ ভাজা কিনা তা বোঝা যাবে আগামী তিন বছরে।
লেখক
সিনিয়র সাংবাদিক
নিউএইজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন