পি কে হালদার তার কোন্ গার্ল ফ্রেন্ডের পেছনে কতটাকা খরচ করেছে সেই খবরটি এদেশের সাংবাদিকরা ঠিক মত বের করতে পারে নাই ! ফরিদপুরের বেয়াইয়ের খবরেরও কোনো ফলোআপ নেই ! কিন্তু ইউক্রেনে মিসাইল আক্রমণে নিহত মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের পরিবার কত ক্ষতিপূরণ পাবেন সেটা ঢাকঢোল বাজিয়ে সারা দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছে।
এই সাংঘাতিকরা কাজের কাজ কিছুই করতে পারে না । অকাজ / কুকাজে পিছিয়ে নেই ! হাদিসুরের পরিবারকে এতে কতটুকু বিড়ম্বনা বা চতুর্দিকের বারো ভূতের জ্বালা কতটুকু সইতে হবে সেই বিবেচনা ইনাদের নেই ! এখানে বিএসসি কর্তৃপক্ষের আক্কেল- জ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন উথ্থাপিত হতে পারে । কেউ কেউ হয়তো মুখিয়ে আছেন কখন টেলিভিশনের সামনে বলবেন , ‘ থ্যাংক ইউ প্রধানমন্ত্রী ! ‘
একই ধরণের একটি মেরিটাইম দুর্ঘটনা আপনাদের সঙ্গে আজ শেয়ার করছি । ঘটনাটি ঘটেছে ২০১১ সালের দিকে ! আমি যে শিপিং কোম্পানীর টেকনিকেল ইনচার্জ ছিলাম তাদের একটি জাহাজে এটি ঘটেছে । মালয়েশিয়ার উপকূলে জাহাজটি খারাপ আবহাওয়ার মুখোমুখি হলে জাহাজের ক্যাপ্টেন জাহাজ এবানডেন ঘোষণা করে লাইফ রাফ্টে ( শক্ত প্লাষ্টিকের তৈরি জীবনতরী ) আশ্রয় নেন । কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেই জীবন তরী তাদের জন্যে মরণতরীতে রূপান্তরিত হয় । এখানে ট্রাজেডিটি হলো ,
জাহাজটি শেষমেষ ডুবে নাই কিন্তু সেই জাহাজ ছেড়ে আসা নাবিকদের ক্যাপ্টেনসহ বারো জনের সলীল সমাধি হয়েছিল ! অর্থাৎ ক্যাপ্টেন এবং নাবিকরা জাহাজটি ত্যাগ না করে যদি সাহস করে জাহাজেই থেকে যেতেন তবে হয়তো সবাই বেঁচে যেতেন ! এখানে উল্লেখ্য , নাবিক এবং জাহাজের জীবন রক্ষায় জাহাজের ক্যাপ্টেনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত । এটা আন্তর্জাতিক আইন এবং এটাকে মালিকপক্ষ বা জাহাজের ম্যানেজারগণ ভায়োলেট করতে পারে না । আমার জীবনে সত্যিই একটি কঠিন রাত ছিল সেই রাতটি !
যাই হোক , পার্শ্ববর্তী দেশগুলির নেভির সহযোগিতায় সাগর থেকে একজন বাদে বাকি সবগুলি লাশ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পাঠানো হয় । এই কাজটিও অত্যন্ত কঠিন ছিল । এরপর আসে ক্ষতিপূরণের পালা । বাংলাদেশের ইতিহাসে আমি বলব এটিই সবচেয়ে সফল ও স্বচ্ছ মেরিটাইম ক্লেইমের ঘটনা । ইন্সুরেন্স কোম্পানী থেকে যার জন্যে যত টাকা পাওয়া গেছে ঠিক তত টাকাই তাদের নমিনির কাছে যথাযথভাবে পৌছানো হয়েছে । একটা পয়সাও মালিক পক্ষ বা ম্যানেজারগণ এদিক সেদিক করে নাই । এমনকি হতভাগা নাবিকদের নমিনি যাতে এই টাকা নিয়ে অন্যান্য আত্মীয়স্বজন বা সামাজিক / প্রশাসনিক গুন্ডাদের হাতে হেনস্থা না হন , সে ব্যাপারেও যথেষ্ঠ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে । জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ারের বাবা ছেলে ছোট থাকতেই স্ত্রী সন্তানদের পরিত্যাগ করে অন্য বিয়ে করেন । সেই বায়োলজিকেল ফাদারও আসে ক্ষতিপূরণের টাকায় ভাগ বসাতে। আমার কঠোরভাবে তাকে দূরে রেখেছি। এরকম অনেক ছোট বড় সমস্যাও অফিস থেকে আমরা সমাধা করেছি/ সতর্ক দৃষ্টি রেখেছি !
সরকারের এক হোমড়া চোমড়াকে টাকা বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করা হয়েছিল । এত টাকা বিতরণ করবেন অথচ সাংবাদিক - ক্যামেরা আসবে না , এটা কী করে হয় ? তিনি সাংবাদিকদের ডাকতে চেয়েছিলেন । এই সব পরিবারদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা সেটিও করতে দেই নাই । যতটুকু শুনেছি প্রত্যেক পরিবার তখন যত টাকা পেয়েছিলেন তা দেশের ইতিহাসে সম্ভবত: সর্বোচ্চ । এত কিছুর পরেও ক্যাপ্টেন সাহেবের স্ত্রী আমাদের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন ! কারণ উনার চেয়ে এক অয়লারের স্ত্রী বেশি টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন ! এটি মেনে নিতে উনার কষ্ট হচ্ছিল ! প্রকৃত ঘটনা হলো , ক্যাপ্টেন সাহেবের দুটি বাচ্চাই তখন আঠার বছরের উপরে ছিল । কিন্তু সেই অয়লারের কয়েকটি বাচ্চা আঠার বছরের নিচে থাকায় টাকার পরিমাণ এরকম বেড়ে গিয়েছিল ! এখানে পদ মর্যাদা দেখে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না । তাছাড়া
এখানে মালিক পক্ষ /সংশ্লিষ্ট
ম্যানেজার / মেরিটাইম লইয়ার কোনো রূপ হস্তক্ষেপ করে নাই । অর্থাৎ সেই টাকা তুলে কিছু নিজেরা রেখে বাকিটুকু ইনসাফের ( ? ) সাথে পদবী অনুযায়ী বন্টন করে নাই ! ক্যাপ্টেনের স্ত্রীর সেই অসন্তুষ্টি দেখে মনে হয়েছিল , আমরা কয়েকজন বোধহয় এই সমাজের জন্যে ফিট না ! নিজেদের লাভের অংশ রেখেও জনগণকে খুশী রাখা যায় , সেই বিদ্যাটি হয়তোবা সেভাবে রপ্ত করতে পারি নাই !
ভিক্টিম পরিবারকে না ঠকানোর
সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব এখানে জাহাজের মালিক পক্ষের । এই পরিবারের নামটি বললে আবার আমাকে রাজাকার ঠাহর করা শুরু করবেন । থাক্ ! সেই নামটি এখন নাই বা নিলাম !
মিনার রশিদ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন