কামরুল হাসান মামুন:
সভ্য দেশ হওয়ার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো যোগ্য ব্যক্তিদের যোগ্য স্থানে যোগ্য মর্যাদা দিয়ে রাখা। যার ওপর যেই দায়িত্ব সে তার ওপর নেস্ত দায়িত্ব সততা এবং নিষ্ঠার সাথে অক্ষরে অক্ষরে পালন করা।
কোন দেশ যে সভ্য না এইটা বোঝার উপায় কি? ধরুন রেলের একজন টিটিইর কথা। তার দায়িত্ব কি? তার দায়িত্ব হলো রেলে যাত্রীদের কাছে বিনীতভাবে টিকিট আছে কিনা দেখতে চাইবে। কেউ টিকিট ছাড়া উঠলে তাকে জরিমানা করবে। এটিই তার কাজ। সারা বিশ্বের সকল টিটিইদের এটাই কাজ। এখন একজন টিটিই দেখল ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কামরায় কয়কেজন প্যাসেঞ্জার উঠেছে যাদের কাছে টিকেট নাই। বিনা টিকেটে রেলে উঠার জন্য জরিমানা করতে চাইলে ওই যাত্রীরা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। রেল মন্ত্রীর আত্মীয় জানার পর টিটিই বিষয়টি উর্ধতন রেল কর্মকর্তার পরামর্শ নেন। যদিও এটি তার করা উচিত হয়নি। উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শ নিতে চাওয়া মানেই টিটিই ভয় পেয়েছেন। তবে বাংলাদেশের পার্স্পেক্টিভে এটি ঠিকই আছে।
উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে টিটিই তাদের ৩৫০ টাকা জনপ্রতি হিসেবে ১০৫০ টাকা নিয়ে তিনটি সুলভ শ্রেণির নন-এসি কোচে সাধারণ আসনের টিকিট দেন। ওই তিন ট্রেনযাত্রী ঢাকায় পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ করেন এবং সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়। একজন টিটিই যেই কাজ করার উচিত টিটিই ঠিক সেই কাজটিই করেছেন। আর ঠিক ঠিক কাজটি করার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন।
এইরকম উদাহরন কেবল রেলের ওই টিটিই না। ভেজাল ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকারী র্যাবের আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলমও সম্প্রতি পদোন্নতি বঞ্চিত হন। শুধু তাই না সম্প্রতি জানতে পারি ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে গণজোয়ার সৃষ্টিকারী রোকন উদ-দৌলা সরকারি চাকরি থেকে নীরবে অবসর নিয়েছেন। ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে এখন মানুষের যে সচেতনতা তার শুরুটা হয়েছিল রোকন উদ-দৌলার হাত ধরে। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি প্রায় প্রতিদিন অভিযান চালিয়েছেন ভেজাল খাবার উৎপাদনের উৎসস্থলে। হানা দিয়েছেন কারখানা থেকে কারখানায়। ভেজাল উৎপাদনকারীরা ভয়ে তটস্থ থাকতেন এই বুঝি দলবল নিয়ে গেটে কড়া নাড়ছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ-দৌলা!
আমাদের রাষ্ট্রটাই এমন। সকল অফিসে একটা রেওয়াজ আছে। কোথাও কোন অনিয়ম দুর্নীতি দেখলে চেপে যান। প্রতিবাদ করেছেন কি মরেছেন। সৎ অফিসার সততার জন্য এই রাষ্ট্রে পুরস্কৃত না হয়ে তিরস্কৃত হওয়ার উদাহরণ ভুরি ভুরি। তাইতো আমাদের নাটক সিনেমাতেও সৎ অফিসারদের দুর্বিসহ জীবনের চিত্র চিত্রায়িত হয়। তারা সঙ্গবদ্ধ দুর্নীতিবাজদের হাতে খুন হওয়ার উদাহরণ আছে প্রচুর।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন