আলী আহমেদ মাবরুর
পরিত্যাক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেল। রুমের দরোজার ওপর এভাবেই লেখা থাকতো ‘মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত। ঢাকা কারাগারের অনেক সেলেই ফাঁসির আসামীরা থাকতো। কিন্তু যাদের ফাঁসি খুবই আসন্ন অথবা যারা একটু বেশি সেনসিটিভ তাদেরকেই এ সেলে এনে রাখা হতো। এই সেল থেকে ফাঁসির মঞ্চ খুবই কাছে। এটাও একটি কারণ হতে পারে।
অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে একটি ঘর। খুবই ছোট। আমাদের অনেকের বাসার বাথরুমও এর চেয়ে বড়ো হয়। এই সেলে আব্বাসহ আমাদের শহীদ দায়িত্বশীলগন একটা সময়ে থেকেছেন। এই সেলে থাকা খাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই অতিরিক্ত কষ্ট হওয়ায় কেউ আসতে বা থাকতে চাইতেন না। বরং তারা ঢাকার বাইরের জেলগুলোতে থাকতে চাইতেন। মোল্লা চাচা, কামারুজ্জামান চাচা বা নিজামী চাচাকে রায় কার্যকর করার একদিন আগে বা সর্বোচ্চ দু্-তিনদিন আগে এই সেলে নিয়ে আসা হলেও আব্বাকে এই সেলে সব মিলিয়ে বছর দেড়েক থাকতে হয়েছিল।
আবার ট্রাইবুনালে যেদিন রায় ঘোষণা হতো, তার আগের দিন দায়িত্বশীলদের ঢাকার বাইরের কারাগার থেকে নিয়ে এসে এখানে রাখা হতো। আবার রায় ঘোষণার পরপরই এখানে না এনে বরং আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু বরাবরের মতোই আব্বার সাথে এখানেও বৈরি আচরণ করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে যখন তার বিরুদ্ধে ট্রাইবুনাল রায় ঘোষণা করে, তার আগের দিন নারায়নগঞ্জ কারাগার থেকে আনা হয় ঠিকই, কিন্তু তাকে আর ফেরত নেয়া হয়নি। বরং এখানেই তাকে কয়েক মাস রেখে দেয়া হয়। আবার রায় কার্যকরের আগেও নানা অজুহাতে আব্বাকে ৮ মাসের বেশি সময় এই সেলে ফেলে রাখা হয়।
ছোট্ট একটা ঘর। এই ঘরেই ঘুম, খাওয়া এবং টয়লেটের ব্যবস্থা। আমার চোখ ভিজে আসে, যখন ভাবি কীভাবে আব্বা এখানে দিনের পর দিন থেকেছিলেন। কিন্তু এত বছর পরও এই ভেবে বিস্মিত হই যে, এই সেলে থাকা অবস্থায়ও যতবার আব্বার সাথে দেখা হয়েছে কিংবা অন্য মামলায় যখনই তাকে আদালতে নিয়ে আসা হতো, আমাদের চেয়েও বরং তাকে বেশি ফ্রেশ আর সক্রিয় মনে হতো। আল্লাহর সাহায্য আর বলিষ্ঠ ঈমান ছাড়া এমনটা হওয়া সম্ভবও নয়।
আল্লাহ তাআলা আব্বাসহ আমাদের সকল দায়িত্বশীলকে সম্মানিত করুন। যে কষ্ট তারা দুনিয়ায় পেলেন আখেরাতে এর উত্তম প্রতিদানের ফায়সালা করে দিন। আমিন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন