হামলাকারী "ভাসুরদের" নাম মুখে না নিতে পারলে তারা যুগ যুগ ধরে "#সংখ্যালঘু কার্ড" নিয়ে খেলে যাবে....
রামু থেকে #শাল্লা, #অভয়নগর থেকে #নাসিরনগর, দ্বেবিদ্বার থেকে রংপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর। সবগুলো হামলার শুরুতে ধর্মীয় সহিংসতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জিকির তোলা হয়। আস্তে আস্তে খোলস বের হলে দেখা যায় মাসির দরদের মত কান্নাকাটি করা মুখোশ পরে থাকা চেহারাগুলো বের হয়ে আসে। যারা পাওয়ার পলিটিক্সের সাথে জড়িত।
আর তখন সাম্প্রদায়িক জিকির তোলা লোকগুলো সামনে মাস্টারমাইন্ড ভাসুরদের চেহারা দেখে তাদের নাম আর মুখে আনেনা, চুপসে যায়।
আর এই সুযোগে তারাও খেলারাম খেলে যা সূত্র ধরে একের পর এক সহিংসতা দেখায়। কখনো সেটা হয় বান্দরবানের রামুতে, ফেসবুকে পোস্ট নিয়ে, কখোনোবা যশোরের অভয়নগরে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করে, কখনোবা কুমিল্লার দ্বেবিদ্বারে গভীর রাতে লাইট অফ রেখে, হনুমানের পায়ের উপর কুরআন দিয়ে, দিনের বেলা রুলিং পার্টির মেয়রের পিএসের নারায়ে তাকবির স্লোগান দিয়ে, প্লান করে ঠিক করে রাখা লোকজন জড়ো করে ভাঙচুর করে স্বার্থসিদ্ধ হাসিল করে।
একের পর এক ঘটছে। দেশের নানান প্রান্তে। গত ৫০ বছরের সব সরকারের সময়ই এটা হয়েছে। তবে গ্রাফের চিত্র বলে দেয় বর্তমান সময়ের ভয়াবহতার কথা। তাদের প্রায় ২৫ বছরের ক্ষমতায়নের মধ্যে সহিংসতার চিত্র ভয়াবহ। এবং এর প্রায় সবগুলোতেই যখন যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের নেতা কর্মীদের ইনভলবমেন্টই বেশি পাওয়া যায়।
শুধু গত ৫/৭ বছরে গোটা দেশে যত ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা ভাঙচুর হয়েছে আগুন হয়েছে তা স্বাধীনতার পরের গত ৫০ বছরের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো প্রায় সবগুলো হামলার পেছনে, রসদ জোগানোর পেছনে, জনবল জোগাড়ের পেছনে স্থানীয় রুলিং পার্টির সম্পৃক্ততা ছিল ন্যাক্কার জনক ভাবে প্রমানিত।
প্রশ্ন হলো ক্ষমতাসীনদের স্থানীয় নেতাকর্মীরা কেনো ধর্মীয় স্থাপনায় হামলায় জড়িয়ে যায়, কেনো এসময় তারা টুপি পাঞ্জাবি পরে নেয়, কেনো ক্ষমতাসীন মেয়েরের পিএসের মুখ থেকে নারায়ে তাকবির স্লোগান আসে?? এগুলো কি তারা হৃদয়ে ধারন করেন?? তাদের রাজনৈতিক মেনুফেস্টুর মধ্যে পড়ে?? উত্তর যদি "না" হয় তাহলে ধর্মীয় স্থাপনার সবগুলো হামলার পেছনে কেনো দিনশেষে স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়??
আমরা কখনো প্রশ্ন করি ঘটনা গুলো কেনো সবগুলো এমন সময় ঘটে যখন কোন বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সফর থাকে তার আগমুহূর্তে হয়? কেনো ধর্মীয় বড় উৎসবের সময় হয় যখন মিডিয়া কাভারেজ পাওয়ার এবং বিষয়টিকে ধর্মীয় মোড়কে রং দেয়ার সুযোগ হয়!
বান্দরবানের রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার নেতৃত্বে ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কামালুদ্দিন! এই কামালুদ্দিনের কি বিচার হয়েছে কেউ বলতে পারবেন?? কামালুদ্দিনের সাথে স্থানীয় বিএনপির নেতারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়! কেনো?? এই দলদুটি বা এদের নেতাকর্মীরা কি ধর্মীয় রাজনীতি করেন?? করেন না, তাহলে সংখ্যালঘুর স্থাপনায় হামলার সময় কেনো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমে পড়েন?? কারন সংখ্যালঘুরা দেশ ছাড়লে তাদের জায়গাজমি এরাই ভাগবাটোয়ারা করে খেতে পারেন, সেখানে অন্যকোন রাজনৈতিক দলের সুযোগ আছে? দিবে তারা??
সদ্য ঘটে যাওয়া কুমিল্লার #মন্দিরে হনুমানের মূর্তির পায়ে কুরআন রাখা নিয়ে যে ছেলেটি ফেসবুকে লাইভ করলো তার নাম ফয়েজ! তিনি মন্দিরের পাশেই বাসা ক্ষমতাসীন দলের মেয়রের (আওয়ামী লীগ) কর্মী হিসেবে পরিচিত। এই ফয়েজের বাসা মন্দির থেকে বেশ দূরে, প্রশ্ন হলো ওই সকালে ফয়োজ মন্দিরে কি করছিল? ফয়েজের লাইভ করার সময়ে ময়েরের পিএস বাবু নারায়েতকবির স্লোগান দিয়ে লোকজন জড়ো হতে আহবান জানান। (তথ্য সূত্রঃ গতকালকের টেলিভিশন টকশোর আলোচক মাগুরার আওয়ামী লীগ এমপি শেখর সাহেব)
নাসিরনগরের ঝুমন দাশের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে যে সহিংসতা হলো ভার'তের প্রধানমন্ত্রী নরে*ন্দ্র মো*দির আগমনের আগ মুহুর্তে। সেখানেও লক্ষ করুন স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি মুল মাস্টারমাইনড! প্রথমে এটাকেও ধর্ম অবমাননার হুজুগ তুলে মিডিয়ায় প্রচার করা হলেও সত্য বের হয়ে আসতে সময় নেয়নি।
জমি জমার পানি দেয়া নিয়ে পুরনো ক্ষোভ ঝেড়েছেন ধর্মীয় সহিংসতার জিকির তুলে!!
শতশত মানুষ দলবেধে ঝুমন দাসের বাড়িতে হামলা করে, তাদের বাড়ির মহিলা পুরুষ শিশু পর্যন্ত বাদ যায়নি।
এটাতেও প্রথমে ধর্মীয় জিকির তোলা হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে মুখোশ উন্মোচিত হয়ে দেখা যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আখি চেয়ারম্যান এবং তার দলবল নেতাকর্মীরা জড়িত! এদের নামে চার্জশিট হয়, মামলা হয় কিন্তু অবাক করর বিষয় হলো নাসিরনগরে হামলায় জড়িত এসব নেতাদেরকেই আবার দলীয় মনোনয়ন দিয়ে পুরুষ্কৃত করা হয়। মিডিয়ায় যখন এটা নিয়ে আলোচনায় আসে তখন আবার বাদ দেয়া হয়।
এ বছর প্রায় ৩৮ হাজার পূজা মন্ডপ তৈরি হয় সারা দেশে। অস্টমির দিন এবং দশমীর দিন মিলে ২০০র মত মন্ডপে হামলা হয়! কোন কোন শহর উপশহরে ৭/৮ ঘণ্টা ধরে আয়েশ করে লম্বা সময় নিয়ে হামলা চললেও থানা, পুলিশ, ৯৯৯, ইউএনও সবাইকে জানালেও, ঘটনা শেষ হওয়ার আগে কেউ আসেনি। সারা দেয়নি।
এমনকি প্রতিবছর প্রতিটি মন্ডপে আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনির একটা অংশ দায়িত্বে থাকলেও এবারই প্রথম সেটা ছিল না! এসব তথ্য দিয়ে গতকাল শ্যামল দত্ত সাহেব একটি টেলিভিশনে বেশ আফসোস করে বলেন হামলার খবর পেয়ে এক ইউএনওকে রাতে ফোন করলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন এতে রাতে ফোন দিয়েছেন এটা জানানোর জন্য??!!!
ফেনিতে মার্কেটে স্বর্নের দোকান লুট হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে। গতকাল রংপুরে একই রকম ঘটনা ঘটলো, আগুনদেয়া হলো সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে! কারা করে এগুলো???
কয়েকদিন আগে গাজীপুরের কাশিমপুরের একটি মন্দির এবং মার্কেটে সকাল বেলা হামলা করলো যারা, তারা কেউই ওখানকার স্থানীয় না। প্রায় ৩০০লোক কোনাবাড়ি থেকে গাড়িতে করে ভাড়ায় এসেছিল! তাদের অধিকাংশের বাড়ি উত্তরবঙ্গে। তাদের মধ্যে থেকে স্থানীয় জনতা ১০/১৫ জনকে ধরে মাইর দেয়ার দেয়ার পরে তারা বললো তারা কোনাবাড়িতে একটি ফ্যাক্টরিতে জব করে।
এখন প্রশ্ন করুন সেই ফ্যাক্টরির মালিক কে?? কেনো এতদূর এসে মন্দির এবং মার্কেটে হামলা করলো? কে তাদের নিয়ে আসলো?? তাদের কতকজনে পুলিশ ধরেছে বা তাদের পরিচয় কি প্রকাশ হয়েছে? না হলে কেনো হচ্ছে না?
দেশের বিরোধী দল বা জঙ্গিগোস্টি কোথাও দুইতিনজন বসে আড্ডা দিলেও আমাদের পুলিশ খবর পায় আর এরা দল বেধে দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণে পাড়ায় মহল্লায় আয়েশ করে ৭/৮ঘণ্টা সময় নিয়ে আগুন দিচ্ছে ভাঙচুর করছে অথচ তাদের ধরা হচ্ছে না, পুলিশকে ফোন করলে আসছেন না, ইউওনোকে জানালো বিরক্তি প্রকাশ করছেন!
জনমনে দ্রব্যমূল্যের জন্য নাভিশ্বাস উঠলেও, যে দেশে হাজারো অন্যায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নামার সাহস করেনা মানুষ আটক, মামলা, আর গুলি খাওয়ার ভয়ে সেদেশে কাদের এত সাহস?? কাদের এত (বে)ইমানি তেজ??? কারা এরা??
দিনশেষে এরা চিহ্নিত হলেও কেনো বিচার না হয়ে উল্টো দলীয় মনোনয়ন পায়, প্রমোশন দেয়া হয়?? কেনো??
সম্মিলিত ভাবে এই দূর্বৃত্তয়নের বিরুদ্ধে সমস্বরে ভয়েজ রেইস করতে না পারলে এরা খেলারাম খেলে যাবে... সুতরাং "জাগো বাহে, কুণ্ঠে সবাই"
মো. ইলিয়াস
গণমাধ্যমকর্মী
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন