মিনার রশিদ
শেখ হাসিনার মনে যতগুলি আক্ষেপ ছিল একে একে প্রায় সবগুলোই তিনি উপশম করে ফেলেছেন ! এগুলি করেছেন তিনি গল্পের সেই কৃষকের চার আখচোরকে শাস্তি দেওয়ার মত করে !
সত্য হোক বা মিথ্যা হোক, পঁচাত্তরে তাঁর পরিবারের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পেছনে শেখ হাসিনা চারটি শক্তিকে দায়ী করেন । এক, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া ও তাঁর বিএনপি । দুই, জামায়াত এবং অন্যান্য ডানপন্থী রাজনৈতিক দলসমূহ । তিন , প্রতিষ্ঠান হিসাবে সেনাবাহিনী - যেহেতু টপ টু বটম কেউ প্রতিবাদ করে নি । চার , জাসদসহ বামপন্থী দলগুলি যারা মুজিব হত্যাকাণ্ডের মূল প্রেক্ষাপটটি তৈরি করেছিল ! নিজ দলের অনেকেই এই ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিলেন কিংবা পরবর্তিতে মোশতাকের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বা আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন । নিজেদের সর্বোচ্চ নেতা আক্রান্ত হলে নিজ দলের যাদের এগিয়ে যাওয়ার কথা তাদের নিস্ত্রিয়তাও গবেষকদের হতবাক করেছে । । সেই কষ্টের কথা শেখ হাসিনা এবার প্রথমবারের মত প্রকাশ্যে উচ্চারণ করেছেন !
প্রথম তিনটি গ্রুপ বা শক্তির উপর নিজের মনের ক্ষোভ তিনি মিটিয়ে ফেলেছেন । এটি করেছেন তিনি সেই কৃষকের বুদ্ধি প্রয়োগ করে ! তিনি যখন পিলখানায় সেনাবাহিনীর উপর মনের ঝালটি মিটিয়েছেন তখন সেনাবাহিনীর উপর এক- এগারোকালীন সময়ে সৃষ্ট বিএনপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের দগদগে ক্ষোভটি কমে নাই ! দেশের জনগণের সাথে সেনাবাহিনীর যে আবেগগত সম্পর্ক ছিল , এক-এগারো তার অনেক খানিই নষ্ট করে ফেলেছিল । জনগণ থেকে সেনাবাহিনীকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল সম্ভবত তাদের উপর ঐ কারবালাটি সৃষ্টি করার নিমিত্তে ! এটি ছিল আমাদের জ্ঞানী কৃষক শেখ হাসিনার প্রথম সফলতা !
যাই হোক , এভাবে সেনাবাহিনীর মাজা ভাঙার পর যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রথমেই ধরলো জামায়াতকে । জামায়াতকে সাইজ করার সময় অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের দল বিএনপিকে পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হল । আওয়ামী লীগের কিছু নেরেটিভ বা বয়ান বিএনপির মুখে / অন্তরে ধরিয়ে দেয়া হলো ! এক্ষেত্রে বিএনপির ট্যাগ মারা কিছু বুদ্ধিজীবীদের বা নেতাদের সুকৌশলে ব্যবহার করা হলো । সার্বিক পরিস্থিতি এমন করা হলো যে বিএনপি টু শব্দটি উচ্চারণ করার সাহস করল না ।
প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মে এভাবে জামায়াতকে সাইজ করার পর এসে ধরল ( কৃষকের তিন নম্বর চোর সাইজের মত ) বিএনপিকে । সঙ্গতকারণেই এবার জামায়াত সাইডে দাঁড়িয়ে তামশা দেখাকেই টিট ফর ট্যাট জ্ঞান করল । । ফলে ফলে চতুর কৃষক শেখ হাসিনার পক্ষে বিএনপিকে পিষে শেষ করা আরেকটু সহজ হয়ে পড়ল ।
এখন এক, দুই , তিন শেষ করার পর চার নম্বর মানে কৃষকের ঘরের চোর/ অপরাধীদের ধরার পালা । শেখ হাসিনা নিজেই জানিয়েছেন , তিনি ফরগিভ করলেও ফরগেট করেন না । আসলে তিনি ফরগিভও করেন না । মনে মনে চিন্তা করেন যে কীভাবে টার্গেটকে যমের মত যমধরা ধরবেন ।
কারণ , ১৫ ই আগষ্টে ট্যাংকের উপর ইনু-মেননদের নাচার সেই দৃশ্য আর যেই ভুলুক না কেন , শেখ হাসিনা কোনো দিন ভুলতে পারবেন না ! এখন ইনু -মেননরা যতই অস্বীকার করার চেষ্টা করুন না কেন , মহিউদ্দীন আহমেদ সহ অনেকের লেখায় বা বয়ানে এদের সম্পৃক্ততা স্পষ্ট হয়েছে ।
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন , ইনু মেননের সাথে বিচারপতি মানিককে যোগ করা হবে কেন ? এই মানিক এখন বড় আওয়ামী লীগার সাজলেও মূলত বামপন্থী ইনু-মেনন- কর্ণেল তাহেরের খাঁটি সাগরেদ ! এই বিচারপতি মানিক তাদের মহান কমরেড আবু তাহেরকে এক রায়ের মাধ্যমে হিরো বানিয়ে ফেলেছে । যে তাহের শেখ মুজিবের লাশকে কবর না দিয়ে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল । বিষয়টি নিশ্চয় শেখ হাসিনার ভালো লাগে নাই । তার প্রতি শেখ হাসিনার এই গোস্বাটির খবর মানিক ভালো করেই জানে । একজন প্রাক্তন বিচারপতি হওয়ার পরেও আওয়ামী লীগের পক্ষে তার বর্তমান গলাবাজি অনেকের মনেই প্রশ্নের উদ্রেক করছে ।
কিসের তাগিদে এই বিচারপতি এমন নাছোড়বান্দা হয়ে পড়েছেন?
বিএনপি এবং জিয়া পরিবারের প্রতি ইনুন - মেনন - মানিক এই তিনজনের বিষোদগারের মাত্রা সাকুল্য আওয়ামীলীগের চেয়ে বেশি ! এত কিছুর পরেও ইনু- মেনন - মানিকদের বোধহয় শেষ রক্ষা হবে না ।
ওয়াকেবহাল মহল নিশ্চিত যে শেখ হাসিনা যদি আরেকবার ক্ষমতায় আসতে পারে তবে নি:সন্দেহে মনের শেষ ক্ষোভটি উপশম করবেন ।
সেটি হবে এই কৃষকের শেষ খেলা , ‘ তোরা আমার নিজের/ কাছের / ঘরের লোক হয়েও এই জঘন্য কাজটি কীভাবে করলি ? একদা আমার বাবার এত কাছের মানুষ হয়েও ইনু-মেনন তোরা এই কাজটি কীভাবে করলি ? আর মানিক্যা , যে আবু তাহের আমার বাবার লাশ বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিল সেই তাহেরকে তুই কেন সর্বোচ্চ আদালতে হিরো বানিয়ে এলি ? ’
কাজেই আরেকবার ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনার জন্যে একারণেও অতীব জরুরি !
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন