মিনার রশিদ
নামটি আর নিলাম না ! প্রতিটি লেখার সাথে নিজের বত্রিশ দন্ত বের করা একটি ছবি দেয় ! সেই ছবিটা দেখলেও মেজাজটি যারপরনাই খারাপ/তিরিক্ষ হয়ে যায় । নিজের এই ভেটকি হাসিটির মতই এদেশের সাংবাদিকতাকে খেলো করে ফেলেছেন ! লেখার সেই লিংকটি মন্তব্যে দেয়া হলো !
এই খবিশরা দেশ ও দেশের সাংবাদিকতার বারোটা বাজিয়েছে । সাংবাদিক হলেও লেখার মধ্যে কখনোই সাপোর্টিং ডকুমেন্টের ধার ধারে না ! মাঝে মাঝে কয়েকটি সত্যের মাঝে একটা মিথ্যাকে বিশেষ মুন্সীয়ানায় গুলিয়ে দেয় । সেই মিথ্যাটি শুধু জাতির মর্মপীড়ারই কারণ হয় না - জাতির সবচেয়ে কষ্ট ও আবেগের জায়গাকেও আহত করে । ৭১ সালে পাক বাহিনীর হাতে আটককালীন ঘটনা নিয়ে বেগম জিয়া এবং শহীদ জিয়ার প্রতি আবারো চরম অবমাননামূলক এবং মিথ্যা কথাটি লিখেছে সাংবাদিক নামধারী এই খবিশ !
একজন আওয়ামী লীগার যদি দুটি রাজনৈতিক কথা বলে বা লিখে তার মধ্যে একটি থাকবে – ‘ তিরিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা পেয়েছি ।‘ অথচ এরাই উঠতে বসতে বেগম জিয়া এবং তাঁর দুই শিশুপুত্রের উপর নির্যাতন নিয়ে অশ্লীল ঈঙ্গিত করে বিকৃত আনন্দ উপভোগ করে ।
নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা একটুও চিন্তা না করেই এই জিয়ারা সেদিন ঝাপিয়ে পড়েছিলেন বলেই আমরা আজকের এই স্বাধীনতাটি পেয়েছি । এই খবিশরা নিজেদেরকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত দাবি করেও জিয়াদের সেই মহান ত্যাগ ও পরিবারের দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে মশকরা করে , টিপ্পনি কাঁটে , অশ্লীল ঈঙ্গিত করে I
এই ধরণের ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকলেও তো তা প্রকাশ করা উচিত না । অথচ শয়তানদের বলয়ে কিছু গুজব ছাড়া এই দাবির পক্ষে ন্যূনতম সাপোর্টিং ডকুমেন্ট পাওয়া যায় না । অসংখ্য সরকারী কর্মচারীদের স্ত্রীগণ তাদের দাম্পত্য সংকট / স্বামীর অন্যায্য ব্যবহারের জন্যে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নালিশ করে থাকে । বেগম খালেদা জিয়ার এই ধরণের কোনো নালিশের কপি বা নথি কি কেউ সংগ্রহ করতে পেরেছেন ? কোনো উকিল নোটিশ বা এই ধরণের কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য কি এদের হাতে রয়েছে ? ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’র সেই জিয়া তখন সারা দেশে এবং সকল ক্যান্টনমেন্টে অত্যন্ত পরিচিত মুখ ! এধরণের সংবাদ পেলে তখনকার সংবাদপত্রগুলি এটা লুফে নিত । কারণ তখনও সংবাদপত্রের কন্ঠ রোধ করা হয় নাই ।
জিয়া দম্পতির কথিত দাম্পত্য জটিলতা নিয়ে কি কোনো টক অব দা ক্যান্টনমেন্ট / টক অব দা সিটি / টক অব দা কান্ট্রির কোনো ঘটনা সংশ্লিষ্ট কারো মগজে রয়েছে ? দেশের সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তির নজরে যাওয়ার আগে এই ঘটনাটি বন্ধু মহলে বা পারিবারিক মহলে জানার কথা ! সেরকম ক্লূ কি কোথায়ও রয়েছে ?
বেগম জিয়া ও জেনারেল জিয়া দুজায়গায় অবস্থান করেছেন এই ধরণের কোনো প্রমাণ কি কোথায়ও দেখাতে পারবেন ? দেশের কোন সংবাদপত্রে কি এই ধরণের কোনো সংবাদের ছিটেফোঁটা কোথায়ও রয়েছে ? এই ঘটনা যদি সত্যিই সংঘটিত হতো এবং শেখ মুজিব সুরাহা করে দিতেন তবে দেশের অন্যান্যদের উৎসাহ দেয়ার জন্যে পজেটিভ সংবাদ হিসাবেও এটি প্রচার হতো । এই পরিবারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের ত্যাগ ও বীরত্ব গাঁথা নিয়ে ১৯৭২ /১৯৭৩ সালেই পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে । সেই প্রতিবেদনের অনেক প্রমাণপ এখনও মজুদ আছে ।
শুধু এই খবিশ সাংবাদিক নহেন চেতনার বলয়ে এই বিষয়টি খুবই মুখরোচক বিষয় ! টপ টু বটম এসব কথা বলে বা লিখে পুলক অনুভব করে! সবচেয়ে হতাশা জনক ব্যাপার হলো - তাদের সর্বোচ্চ নেত্রী নারী হয়েও অন্য একজন নারীকে নিয়ে এরূপ অশ্লীল মন্তব্য অনেকবার করেছেন । বরং বলা যায় তিনি নিজেই এই গুজবটি ছড়ানোর মূল উৎসাহদাত্রী !
অথচ বিপরীতদিকে বর্তমান শাসক পরিবারের টপ সদস্যদের সংকটময় দাম্পত্য জীবন অনেকদিন টক অব দা কান্ট্রি হলেও ,গার্ডিয়ান সহ অনেক পত্রিকায় খবর হলেও এ ব্যাপারে বেগম জিয়ার মুখ থেকে একটা কথাও উচ্চারিত হয় নাই । প্রতিপক্ষের এই সব ব্যক্তিগত গীবত ও অশ্লীল ঈঙ্গিত চরম সীমায় পৌছালে প্রতিপক্ষের ব্যাপারে বেগম জিয়ার মুখ থেকে সর্বোচ্চ উচ্চারিত হয়েছে ‘বেয়াদব’ বলে একটি শব্দ ! প্রতিপক্ষের সাংবাদিকগণও এব্যাপারে বিশেষ সংযম দেখিয়ে এসেছেন !
এরা প্রচার করে যুদ্ধ থেকে ফেরত এসে বেগম জিয়াকে ঘরে নিতে অস্বীকার করে জিয়া ! অথচ দেখেন কর্ণেল শাফায়াত জামিল ( খালেদ মোশাররফের সঙ্গে ৩রা নভেম্বর যিনি খোন্দকার মোশতাকের বিরুদ্ধে পাল্টা ক্যূ করেছিলেন ) তাঁর “ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ , রক্তাক্ত মধ্য আগষ্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর “ নামক গ্রন্থে সিলেটের শেষ দিনগুলোতে স্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন । গ্রন্থটির ৯৪ পৃষ্ঠায় কর্ণেল শাফায়াত জামিল লিখেছেন , ‘ ডিসেম্বরের শেষ দিকে জিয়া একদিন আমাকে ফোনে বললেন , পাকবাহিনীর বন্দিদশা থেকে তাঁর সদ্যমুক্তি প্রাপ্ত সহধর্মীনি সিলেট মাজার জেয়ারত করতে চেয়েছেন । আমাকে এজন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , বেগম জিয়া তাঁর দুই ছেলেসহ বেশ কয়েক মাস পাক বাহিনীর হাতে অন্তরীন থাকার পর ১৬ ডিসেম্বর অন্য যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে মুক্তি পান । আমি ও আমার স্ত্রী রাশিদা বেগম জিয়াকে হযরত শাহজালালের মাজারে নিয়ে গেলাম । সেখান থেকে তিনি মাইল পনের দূরে রাণীপঙ নামে একটি গ্রামে যেতে চাইলেন । চট্টগ্রামে পাক সেনাদের হাতে বন্দি অবস্থায় নিহত শহীদ লে. ক. এম আর চৌধুরীর স্ত্রী তখন রাণীপিঙ এ ছিলেন । বেশ কিছুক্ষণ সেখানে কাটাবার পর তিনি সেদিনই শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান ।’
এগুলি দেখে মনে প্রশ্ন জাগে , এদেশে সাংবাদিকরা শয়তান হয় নাকি শয়তানরা এদেশে এসে সাংবাদিক হয় ?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন