মিনার রশিদ
ইসরাইলের স্বার্থ সংরক্ষণকারী দুটি আমেরিকান টিভি চ্যানেল এর সাথে গোপন সমঝোতায় পাসপোর্ট থেকে এক্সেপ্ট ইসরায়েল শব্দ দুটি বাদ দেয়া হয়েছে । এখন এরা সরকারের কথিত উন্নয়নের ফিরিস্তি শুরু করবে !
আমাদের পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ দুটি আলগোছে বাদ দেয়ার পেছনে একটি শিশুতোষ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে ।
পাসপোর্ট থেকে শব্দ দুটি তুলে দেওয়া হলেও নাকি ইসরাইলের উপর থেকে বিধিনিষেধটি তোলা হয় নাই । এই দুটি শব্দ বাদ দেয়ার পর পাসপোর্টের মধ্যে বাকি বাক্যটিও অনর্থক / হাস্যকর হয়ে পড়ে। পাসপোর্ট যেখানে বলছে - This passport is valid for all countries of the world !
এখন কোন্ আইনের বলে ইসরাইল-বান্ধব এই সরকার ইসরাইল গমণের অপরাধে কাউকে শাস্তি দিতে পারবে ? এই প্রশ্নটিরও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় নাই ।
আওয়ামী বাকশালী সরকার শুধু রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেই উলট পালট করে নাই - মানবীয় যুক্তি ও মানবীয় সেন্সরেরও বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে । এরা সত্যি সত্যি ভাবা শুরু করে দিয়েছে যে এদেশের মানুষ সব কচুরিপানা খাওয়া বলদ ছাড়া কিছু নয় । হাসান মাহমুদ জানিয়েছেন , পাসপোর্ট থেকে ইসরাইলের নাম বাদ দেওয়াতে ইসরাইলের খুশী হওয়ার কিছু নেই ! বেচারা বিএনপি - জামায়াতের জন্যে তৈরি করা বাক্যটি ‘বন্ধু’ ইসরাইলের ব্যাপারে প্রয়োগ করে ফেলেছেন! এতে ইসরাইলের উৎফুল্ল হওয়ার খবরটিই আরো ছড়িয়ে পড়েছে ।
পর্দার সম্মুখে এরূপ কয়েকজন জোকারকে রাখা হলেও আড়াল থেকে বুদ্ধিদাতা হিসাবে কাজ করছে দুটি রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এবং তাদের থিংক ট্যাংক সমূহ ।
এই জোকারদের অসংলগ্ন কোনো কথা মানুষ বিশ্বাস করুক বা না করুক -তাতে কিছু যায় আসে না । পেছনের প্লেয়াররা তাদের টার্গেট মতই কাজ করে যাচ্ছে !
আধিপত্যবাদী শক্তির মূল এসেট এদেশের একটি দল যারা যে কোনো কিছুর বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকতে চায় ।
গাজর অথবা লাঠি ( Carrot or stick ) পলিসি প্রয়োগ করে দেশীয় মিডিয়াকে বশ মানানো সম্ভব হলেও বিশ্ব মিডিয়াকে নিয়ে খুবই বেকায়দায় রয়েছে।
এব্যাপারে অনেক প্রচেষ্টা বা তদবিরের ফলে সর্বোচ্চ ঘানা অথবা নাইজেরীয়ার মত দেশের মিডিয়া সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা করেছে ! পশ্চিমা বিশ্ব থেকে এমন সংস্থা বা সংগঠন থেকে প্রশংসা আদায় করা হয়েছে যাদেরকে ডিজিটাল বাটিচালান দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় নাই । এতে জনগণের ঠাট্টা বিদ্রুপ বাড়ছে বৈ কমছে না । প্রকারান্তরে বিশ্বের প্রায় প্রতিটা নামী দামী সংস্থা থেকেই সরকারের ফ্যাসিবাদী নিপীড়ন , অর্থনৈতিক বিশৃংখলা, গণতন্ত্রের শোচনীয় অবস্থা ও মানবাধিকার লংঘন নিয়ে পরম অস্বস্তি প্রকাশ করা হয়েছে ।
সর্বশেষ আলজাজিরা কর্তৃক ‘ অল দা প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান ’ প্রচারের পর সরকারের পায়ের নিচ থেকে অবশিষ্ট মাটিটিও সরে পড়েছে । এমতাবস্থায় বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর গণ মাধ্যমের একটু প্রশংসা বা নেকদৃষ্টি সরকারের জন্যে অতি জরুরি হয়ে পড়ে । সরকারের সেই খায়েশটি পূর্ণ করতে একটি ডিলের অধীনেই নাকি পাসপোর্ট থেকে এই দুটি শব্দ বাদ দিতে হয়েছে । একটি অতি বিশ্বস্তসূত্র থেকে জানা গেছে যে ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষাকারী আমেরিকার দুটি স্বনামধন্য টিভি চ্যানেলের সাথে এব্যাপারে সরকারের একটি বোঝাপড়া হয়ে গেছে । সেই বোঝাপড়া অনুসারে সরকার পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল ’ শব্দ দুটি তুলে দিবে । বিনিময়ে দুটি বিশ্ববিখ্যাত টিভি চ্যানেল সরকারের না না উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফিরিস্তি দিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে । এই তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্যে হয়তোবা আমাদের খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না । বাজিকররা জাতিকে এবার সত্যি সত্যি নতুন ম্যাজিক দেখাবে !
ফলে জাতি কেমন ভয়ংকর বিপদ ও আপদে জড়িয়ে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয় । দেশের সম্পদ দয়ামায়াহীনভাবে এই মাফিয়ারা লুট করবে। কাজীর গরু কেতাবে থাকবে কিন্তু গোয়ালে থাকবে না । কিন্তু সিএনএন বা ফক্স নিউজের মত মিডিয়া কেতাবের সেই ‘কাজীর গরু ’ নিয়েই লম্ফ ঝম্ফ শুরু করে দিবে । সারা দেশ থেকে রক্ত শুষে মুখ ফুলিয়ে দেখানো হবে ‘স্বাস্হ্য কাহাকে বলে’ !ফোলা মুখটি দেখাবে , শীর্ণ শরীরটি লুকিয়ে রাখবে । বাংলাদেশের দালাল মিডিয়াকে তখন আর পায় কে ?
আপাতত: পাসপোর্ট থেকে ইসরাইলের উপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তোলার পেছনে এটিই মূল মতলব ! ছোটখাটো অন্য মতলবগুলি হয়তোবা আপাতত: দৃশ্যমান হবে না ।
প্রশ্ন হলো , বিষয়টি নিয়ে বিএনপি সহ অন্যান্য দলগুলি নীরব কেন ? এদের জন্যে কোন্ মূলাটি ঝোলানো হয়েছে ?
পশ্চিমা দুনিয়ায় শয়তানের পূজারী নামে একটি গ্রুপ রয়েছে । শয়তানের পূজা করার পেছনে একটি চমৎকার দার্শনিক ব্যাখ্যা বা যুক্তি রয়েছে । এই পূজার মূল উদ্দেশ্য শয়তানকে খুশী করে তার ক্ষতির হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা । দেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতি আজ অনেকটা এই পলিসি ধরেই এগোচ্ছে বলে মনে হচ্ছে । কেমন যেন শয়তানকে খুশী করে কিংবা ‘ বেশি নাখোশ না করে’ মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছার একটি অভিপ্রায় স্পষ্ট হয়ে পড়ে ।
বিএনপি নেতৃত্বকে স্পষ্ট উপলব্ধি করতে হবে যে শয়তান তার খাঁটি বা এক নম্বর পূজারীকে রেখে কখনোই দুই নম্বর পূজারীকে এই মঞ্জিলে মকসুদে পৌছতে দিবে না । এর ফলে বিএনপির আম আর ছালা দুটোই চলে যেতে পারে । কাজেই একটু দরদ মাখা দৃষ্টি দিয়েই বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ।
এখন সারা বিশ্বেই ইসরাইল বিরোধী একটি মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে । ইসরাইলের পক্ষে যেমন বিশ্ব মিডিয়া রয়েছে তাদের বিপক্ষেও বিশ্ব মিডিয়ার সংখ্যা কম নহে । বিএনপি সহ বিরোধী দলগুলিকে সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার করে আধিপত্যবাদী শক্তি ও তার দোসরদের সকল ষড়যন্ত্র ও প্রপাগান্ডাকে মোকাবিলা করতে হবে । সত্যের নিজস্ব একটা শক্তি থাকে । সেই শক্তি নিয়ে শয়তানের পূজা নয় তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে ।বিএনপি এখন ক্ষমতার জন্যে উতলা হলে সেই ক্ষমতা কখনোই ধরা দিবে না । কিন্তু দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান নিলে সর্বশক্তিমান আল্লাহর মেহেরবাণীতে জনগণই তাদেরকে ক্ষমতায় বসাবে ।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা যখন ‘উই রিভোল্ট’ বলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নিজেও যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন তখন তিনি ছিলেন ৩৫ বছরের একজন যুবক । পরমা সুন্দরী এক জন স্ত্রী , দুটি ফুটফুটে বাচ্চা রেখে এবং যে কোনো মুহূর্তে নিজে নিহত হওয়ার ঝুঁকি কিংবা কোর্ট মার্শালের খড়গ মাথায় নিয়ে তিনি এই কাজটি করেছিলেন ! আজ সেই দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির গড় বয়েস পয়ত্রিশ দু গুণে সত্তরের কম হবে না । কেন যেন মনে হচ্ছে জীবনের প্রতি এঁদের টান কমপক্ষে দুই গুণ বেড়ে গেছে ! দংশন তো দূরের কথা - অনেক সময় ফোঁস করতেও ভুলে যাচ্ছেন !
বিএনপির সকল নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান , কোনো মূলার আশায় আর বসে থাকবেন না । সময় দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে ।জীবনে তো অনেক কিছু আপনারা পেয়েছেন। জীবনকে কানায় কানায় উপভোগ করেছেন ।কাজেই আপনাদের তো আর এই জীবনের প্রতি লোভ থাকার কথা নয় !
একজন পঁয়ত্রিশ বছরের যুবক যার সামনে তখনো পুরো জীবনটি বাকি ছিল তিনি যদি ঐ ভয়ানক রিস্কটি নিতে পারেন - সেই মনীষীরই প্রথম কাতারের অনুসারী হয়ে আপনারা কেন তা পারছেন না ?
ক্ষতি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে শয়তানকে আর পূজা না করে তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন ।
সবার আগে আল্লাহর ওয়াস্তে এই দেশটিকে বাঁচান ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন