ইলিয়াস মাহমুদ নীরব
শরীর রক্তাক্ত! থেতলানো নখ! দুজনে বাঁধা একটি হাতকড়ায়! কোমড়ে লটকানোর মত রশিও ঝুলছে গলায়! বিধ্বস্ত চেহারায় উৎকণ্ঠার চিহ্ন! ওরা দুর্ধর্ষ?? রাষ্ট্রের জন্য থ্রেট?? জনমনের জন্য হুমকি?????
ওদের অপরাধ কি ছিল??
করোনায় করুন চেহারার মানুষ গুলোকে রমজানের খাদ্য সামগ্রী দিচ্ছিল নিজেদের সবচেয়ে নিরাপদ স্থান নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বসে।
অভিযোগ, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে আটক করা হয়! এর দুদিন পরে গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে চালান দিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন!! সেখান থেকে দুদিন মঞ্জুর!
ছবিতে পাঞ্জাবি পরা আখতার। যিনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দ্বারা নির্বাচিত ডাকসুর সদ্য সাবেক সমাজ সেবা সম্পাদক।
প্রচন্ড মেধাবী, পরিশ্রমী এবং নিরেট সেচ্ছাদীল একজন ছাত্রনেতা। ডাকসুতে অন্য যে কোন দলের ছাত্রনেতাদের নিয়ে নানান ধরনের বিতর্ক থাকলেও আখতার ছিলেন ব্যতিক্রম। তাঁকে নিয়ে কটু কথা তীর্যক ব্যাঙ্গ মন্তব্য তার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক ছাত্র নেতারাও কখনো করেননি।
আইন বিভাগের এই আখতার আলোচনায় আসেন মুলত ঢাবির পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে একা অনশন আন্দোলন করে, সেই পরীক্ষা বাতিল করায়ে, পুনরায় পরীক্ষা আদায় করার মাধ্যমে।
তখন আখতার কেবলই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। রাজনীতির "র" না জানা ছেলেটা যে প্রচন্ড একরোখা তা বুঝা গিয়েছিল তার অনশন আন্দোলন করা দেখে।
সকল ছাত্র সংগঠন যখন নিয়ম রক্ষার প্রতিবাদ করে যার যার হলে। আখতার তখন টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে একা দিনরাত পড়ে থাকেন কয়েকটি প্লাকার্ড নিয়ে। দিন যায়, সপ্তাহ যায় আখতার নড়ে না। ওর এমন পাগলামিতে ক্রমেই সে দাবি জোড়ালো হয়ে ওঠে। প্রতিদিন সংহতি জানাতে আসেন অনেকে। দিনে দিনে তার পাল্লা ভাড়ি হয়। আখতারের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে জনমত গড়ে ওঠে। টিএসসি চত্বরে নতুন করে ভীর লেগে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কিংবা প্রক্টর কারো আশ্বাসেই ছেলেটা স্থান ছাড়ছিলনা। তার দাবি একটাই পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নিতে হবে।
অবশেষে আখতার সফল হয়। তার দাবি মেনে হয় নতুন করে পরীক্ষা।
ততদিনে আখতার এক নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিরো ????
এর কিছু দিন পরেই ঢাবির ইতিহাসে চালু হয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন। জাতীয় সংসদের পড়েই ডাকসু (সংসদের) আলাদা গুরুত্ব সেই (পাকিস্তান আমল) বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্ব থেকেই। এটা এমনই এক ছাত্র সংসদ যা অনেক জাতীয় সংসদকে তুড়ি মেরে ঘুড়িয়েছে। নাড়িয়ে দিয়েছিল আইয়ুবের স্বৈরাচারী মসনদ। ভীত কাঁপিয়েদিয়েছিল টিক্কাখানের। নিয়াজি কিংবা রাওফরমান আলীর ফরমায়েশকেও হুংকার দিয়েছিল।
স্বাধীনতার বহু বছর পরে সেই ছাত্র সংসদের নির্বাচনে আখতার নিজের পরিচয়েই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।এক অখ্যাত ব্যানার থেকে। হয়ে ওঠেন ছাত্রদের সত্যিকারের সমাজ সেবক হিসেবে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নেতৃত্ব দেয়া এই তরুন তুর্কীর হাতে হাতকড়া ছিল জাতীর জন্য লজ্জাকর।
আখতারের মুক্তি কামনা করছি।
গণমাধ্যমকর্মী ও ব্লগার
#ইলিয়াস৮১৭_আখতার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন