মিনার রশিদ
বিশ দলীয় জোটের বর্তমান অস্তিত্ব কিংবা এটার উপযোগিতা নিয়েই অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । মূলত: এই জোটটিকে নিয়ে বিএনপিকে কখনোই স্বস্তিতে থাকতে দেয়া হয় নাই । সামান্য স্বস্তির আশায় চার দল থেকে আঠার কিংবা বিশ দল করেও সেই স্বস্তিটি মিলে নাই । জনকন্ঠ , ভোরের কাগজ থেকে শুরু করে কালের কন্ঠ , প্রথম আলো নিজ নিজ মাত্রায় এবং নিজ নিজ ফ্রিকোয়েন্সিতে এই অস্বস্তির তরীটিতে হাওয়া দিয়ে গেছে ।
এখানে ডাক্তার জাকির নায়েকের একটি পর্যবেক্ষণ অতি প্রণিধানযোগ্য । তিনি তাঁর একটি বক্তৃতায় জানিয়েছিলেন , ইন্ডিয়ার টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা বিশ্ব তালিকায় ছিলেন ৩৪ নম্বরে । এক নম্বরে ছিলেন সেরেনা উইলিয়ামস । সানিয়া মির্জার পোশাক জায়েজ কী নাজায়েজ এটা নিয়ে উৎসাহী সাংবাদিকগণ আমাদের মাওলানাদের প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে । কারণ মওলানা সাবদের উত্তর তাদের কাছে খুবই শ্রুতিমধুর । যতবার শুনে ততবারই ভালো লাগে । অথচ তালিকার উপরের দিকের তেত্রিশ জন বিশেষ করে এক নম্বরে
যিনি সেই সেরেনার পোশাক খ্রীষ্টান ধর্মানুসারে ঠিক আছে কি না তা নিয়ে এই সাংবাদিকরা কোনো ফাদারের কাছে কোনোদিন জানতে চায় না !
তেমনি জামায়াতের সাথে জোট নিয়ে এই সংবাদপত্রগুলি যত বার বিএনপি নেতাদের প্রশ্ন করেছে সেই একই ধরণের রাজনৈতিক সখ্য ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলেও তা নিয়ে কোনোদিন প্রশ্ন করে না । বিএনপিকে এসব প্রশ্ন করে মজা পায় । বিএনপির কোনো কোনো নেতার লাজ-রাঙা মুখ সাংবাদিকদের বোধহয় এই সব প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করে ।
তথাকথিত মরাল ব্রিগেইডের বুদ্ধিবৃত্তিক উপদ্রব থেকে বাঁচতে ২০১৮ সালে ড. কামাল হোসেনকে যুক্ত করে আরেকটু মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে চেয়েছিল বিএনপি । বিয়ে বসতে নারাজ মেয়েকে কবুল বলাতে স্বজনদের যতটুকু কষ্ট না হয় তার চেয়েও বেশি কষ্ট হয়েছে ড. কামাল হোসেনের মুখ দিয়ে জিয়া কিংবা খালেদা জিয়ার নাম উচ্চারণ করাতে । তারেক জিয়ার নাম নেয়ার কথা তো কল্পনাতেই টানা যায় না !
বিএনপি এবং জামায়াত সম্পূর্ণ আলাদা দুটি রাজনৈতিক দল । এই দুই দলের মিশন ও ভিশন সম্পূর্ণ আলাদা । এরা কেউ নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা লুকিয়ে রাখে না ।
বিএনপি একটি কনজার্ভেটিভ দল । ২০১৬ সালে আমি যখন লন্ডনে গিয়েছিলাম সে সময় বিশ্ব কনজার্ভেটি রাজনৈতিক দলগুলির ফোরাম থেকে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল । বিলাতের কনজার্ভেটিভ পার্টি ছিল সেই সম্মেলনের উদ্যোক্তা । সম্ভবত: জনাব আমির খসরু সহ কয়েকজন সেই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন । কাজেই যারা এই কনজার্ভেটিভ দল করেন তারা জেনে শুনেই এটা করেন । তবে ধর্মভিত্তিক দল আর কনজার্ভেটিভ দল এক নহে ।
যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্য সহ পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশের দুটি প্রধান দলের একটি কনজার্ভেটিভ অন্যটি লিবারেল । কাজেই এই কনজার্ভেটিভ শব্দ নিয়ে গ্লোবাল কনটেক্সটে অস্বস্তির কোনো কারণ নেই । আর কনজার্ভেটিভ দল হিসাবে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের বোধ বিশ্বাসের বাইরে থাকা সম্ভব নয় । এই আত্মবিশ্বাস , সাহস ও প্রজ্ঞা নিয়ে এই দল করলে ধর্ম -বিদ্বেষী -মৌলবাদীদের ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়ার কিছু নেই ।
গত ২৬শে মার্চ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাতিকে ১৯৭১ এর মত ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন । এই দেশে জনগণের কোন মিডিয়া বা সত্যিকারের গণমাধ্যম থাকলে সবচেয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধানের এই আহ্বানটি সবার আলোচনার শীর্ষে থাকত । অথচ সেটি নিয়ে কোনো আলোচনা নেই । বরং বিশ দলীয় জোট থাকবে কি না সেই ক্যাঁচাল বাঁধিয়ে দেয়া হয়েছে ।
আজ কালের কন্ঠ এবং প্রথম আলোদের মনোতুষ্টির জন্যে শব্দ করে তালাক উচ্চারণ করতে হবে । অথচ এমন কোনো কাবিন নামা হয় নাই, কাবিন নামার ছেঁড়া কপিও বোধ হয় পাওয়া যাবে না । ।এটা নিয়ে বিএনপি বা প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অহেতুক শ্রম ও সময় নষ্ট করছে ।
সকল দিক চিন্তা ভাবনা করে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই জোটের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না । তার চেয়ে বরং নব্বই সালের মত যুগপৎ আন্দোলন শুরু করাই শ্রেয় । যে ব্যক্তি বা দলের মধ্যে দেশের প্রতি টান বা দরদ রয়েছে তারাই এই যুগপৎ আন্দোলনে শরীক হতে পারে । যুগপৎ আন্দোলনের ধারাগুলি বিএনপি প্রধানের ২৬ শে মার্চের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে পড়েছে ।
সময় হাতে খুবই কম ।
কাজেই আর সময় নষ্ট না করে এখনই কাজে লেগে পড়া উচিত ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন