মিনার রশিদ
আমাদের এক বড় ভাই ৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্টে সারাদিন কেঁদেছিলেন । উনার সম্মুখে বঙ্গবন্ধু কিংবা আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে কোনো বন্ধু সহজে পার পেয়েছেন , এমন নজির খুব বেশি একটা নেই । সেই তিনি জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত দেখে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাতে আমিও কিছুটা অবাক হয়েছি । মনে হচ্ছে , একই অনুভূতি/ মনোকষ্ট কমপক্ষে দেশের নব্বই ভাগ মানুষের ।
কিছুদিন আগে গবুচন্দ্র একমন্ত্রী দেশবাসীকে ঘাষ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন । সেই ঘাষ খাওয়ার নেমন্তন পেয়ে এই বড় ভাইটি যতটুকু চটেছিলেন এবারের ক্ষোভ তার চেয়ে কোনো অংশে কম মনে হলো না । আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম একদা মুজিব ভক্ত এই বড় ভাইটি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া দেখালেন কেন ?
আসলে মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী , লুটেরা এবং তাদের পরিবারবর্গ ছাড়া আর কেউ আওয়ামীলীগে অবশিষ্ট নেই । গওহর রিজভীর মত একজন স্কলার আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর কী হয়েছে ডয়চে ভেলের সাথে সাক্ষাৎকারে তা ফুটে উঠেছে । কিছুটা বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন কোনো মানুষের পক্ষে এই দলটিকে সমর্থন করা কঠিন হয়ে পড়েছে ।
কিছুদিন আগে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় রাজাকারদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল । দেখা যায় , এই তালিকার অধিকাংশ কিংবা তাদের আওলাদগণ আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত । এই সত্যটি উদঘাটিত হয়ে পড়লে তাড়াহুড়া করে সেই তালিকাটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয় । কিন্তু কাজ যা হওয়ার তা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে । রাজাকারদের দল আসলে কোনটি নিজেরাই তার দালালিক প্রমাণ দাখিল করেছে । এখন এই রাজাকারদের হাতেই পড়েছে - মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাব বাতিলের এখতিয়ার !!!
যারা একটি দেশের জন্ম দেন তারা পরবর্তি প্রজন্মের কাছে ফাদারস অব দা নেশন বলে বিবেচিত হন , সম্মানিত হন । বিশেষ ভাবে যারা সেই সংগ্রামের নেতৃত্বে থাকেন তারা এই বিশেষ সম্মানটি পেয়ে থাকেন । সেই হিসাবে অন্ততপক্ষে স্বাধীনতাযুদ্ধে পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সকলকে গড়পরতা ‘ফাদারস অব দা নেশন’ বলে অভিহিত করতে পারি । কারণ এই দেশের ফাদারিং বা জন্মদানের কাজটি তারা করে গেছেন । এদের কেউ কেউ পরবর্তিতে কোনো ভুল বা কোনো অপরাধও করতে পারেন কিন্তু তাতে তাদের সেই ফাদারিং এর কাজটি বাতিল হয়ে যায় না । ফাদারিং শব্দটিই এমন যাকে কোনো আইন বলেই বাতিল করা যায় না , অস্বীকার করা যায় না , ত্যাগ করা যায় না , বদলে দেয়া যায় না ।
এটাই স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানীদের প্রাপ্য অনন্য মর্যাদা ! দলমতের উর্ধে উঠে এই সম্মান বা মর্যাদা ধরে রাখার দায়িত্ব খেতাবদারী কিংবা তাদের সন্তান সন্ততিদের সকলের । একজন ‘ফাদার অব নেশন ‘হবে নাকি অনেক জন ‘ফাদারস অব নেশন ‘ হবে সেই ব্যাপারে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন তাজউদ্দীন কন্যা শারমিন আহমেদ । একজনকে দেবতা বানাতে গিয়ে অপরাপর জন্মদাতাদেরকে শুধু অবহেলাই নয় - রীতিমত অপমান এবং হেয় করা হচ্ছে । সেই দেবতার তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে অনেক চামচিকাও এখন হাতিকে লাথি মারে ।
এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে জীবিত সেই সব জাতীয় বীরদের প্রতি আবেদন - এই চরম ক্রান্তি লগ্নে আপনারা এগিয়ে আসুন । মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীরের এই অবমাননায় আপনারা একযোগে হুংকার দিন । শেষবারের মত একযোগে মাঠে নামুন । মিথ্যা দেবতার পূজা থেকে জাতিকে মুক্ত করে আপনাদের স্ব স্ব মর্যাদা আদায় করুন ।
প্রয়োজনে একযোগে সকলের খেতাব ত্যাগের ঘোষণা দেন ।
আপনাদের হারানোর কিছু নেই । বরং আপনাদের নামের পাশে যোগ হবে নতুন একটি শব্দ - ফাদারস অব দা নেশন ! এটিও কারও দান নয় । আপনারা এই জাতির ফাদারিং করেছেন । এটি আপনাদের প্রাপ্য পুরস্কার ।
‘ ফাদারস অব নেশন’ এই নতুন ভাবনাটি আমাদের জাতীয় মানসে যুক্ত হলে এক দলীয় ফ্যাসিবাদ এই জাতির ঘাড়ে চেপে বসতে পারবে না । কাজেই জাতির সত্যিকারের ফাদার হোন । জাতিকে এই মানসিক , সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গোলামি থেকে মুক্তি দেন ।
পদকপ্রাপ্ত প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার জন্যে ‘ফাদারস অব নেশন’ খেতাবটি আদায় করুন ।
এটি শুধু আপনাদের নিজেদের মর্যাদা সুরক্ষার জন্যেই নহে - জাতির সার্বিক মুক্তির জন্যেও জরুরি হয়ে পড়েছে ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন