মিনার রশিদ
এর পেছনের (শিরোনামে উদ্ধৃত ) কারণটি অনুমান করতে খুব বেশি কষ্ট হয় না । গৃহ শান্তি কিংবা নিজের শান্তি নিশ্চিত করার জন্যে কারো কারো ক্ষেত্রে এরকম দাম্পত্য পলিসি গ্রহন অপরিহার্য হয়ে দেখা দিতে পারে ।
আমাদের প্রিয় জন্মভূমিও এরকম একটি আজব দাম্পত্যের তাজব ঘর হয়ে পড়েছে । এখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া সম্পর্কে কঠিন সত্য বলতে গেলে সেটা নাকি বঙ্গবন্ধুর জন্যে অবমাননাকর হয়ে পড়ে । বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করা ছাড়া এদেশে জিয়ার প্রশংসা করা সম্ভব হবে না । জিয়াকে এমনভাবে বনসাই সাজাতে হবে যাতে কোনোক্রমেই বঙ্গবন্ধুর চেয়ে উজ্জল মনে না হয় । এটা যারা মানবেন তারা উদারবাদী । যারা মানবেন না তারা কট্টরবাদী ।
রাজনৈতিক পঙ্গুত্বের হাত ধরে এই বুদ্ধিবৃত্তিক পঙ্গুত্ব এসেছে নাকি বুদ্ধিবৃত্তিক পঙ্গুত্ব এই রাজনৈতিক পঙ্গুত্ব টেনে এনেছে সেটাই আজ প্রশ্ন ।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি ফেইসবুক পোষ্টে প্রফেসর আসিফ নজরুল সেটাই দেখিয়ে দিয়েছেন । আসিফ নজরুলের সেই পোষ্টটিতে প্রায় ২৮০০ মন্তব্য পড়েছে । আজকের এই পোষ্টের শিরোনামটিও নিয়েছি সেখানকার একটি মন্তব্য থেকে । মজার ব্যাপার হলো , পাঠকদের অধিকাংশ মন্তব্যই ছিলো এমন ঝাঁঝাল স্বাদের ! পাঠকদের সেই সব মন্তব্য দেখে মনে হলো , লেখকরা পাঠকদের যতটুকু বোকা ঠাহর করে , তারা আদতে ততটুকু বোকা নহেন !
যে জিয়া এই ভূ-খন্ডে সত্য বলার তাগদ /সাহস /সুযোগ সৃষ্টি করে গেছেন - আজ তাঁর জন্মদিবসে তাঁর সম্পর্কে দুটি সত্য কথা অন্য কারও মিথ্যে প্রশংসা ভিন্ন সম্ভব না । ফ্যাসিবাদের পক্ষ থেকে এ যেন এক বিশেষ অফার ‘ একটি মিথ্যে বললে একটি সত্য ফ্রি ‘ I এই বিশেষ অফারটি পেয়ে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক মানস তৃপ্ত ও পরিতৃপ্ত !
সত্য- মিথ্যার এই মিশ্রণ বা শরবতটি মুখে ঢেলে আসিফ নজরুল দেশের মৃত্যুপথযাত্রী গণতন্ত্রকে বাঁচাতে চাইছেন ! তাঁর উদ্দেশ্যটি মহৎ হলেও এর পরিণাম বা পরিণতি কখনোই ভালো হবে না । তাঁর এই মৃত সঞ্জীবনী সালশা নিস্তেজ জাতিকে আরো নিস্তেজ বানিয়ে ফেলতে পারে ! এই আশংকা থেকেই এই লেখাটি লিখতে বাধ্য হয়েছি !
‘এক নেতার এক দেশ ‘ এই শ্লোগানটি গণতন্ত্রকে অংকুরেই বিনাশ করেছে । সেই বোধ ও ভাবনা জাতির জন্যে একদিন কাল হয়েছিল এবং সেই দু:স্বপ্নের কাল আরো ভয়াবহরূপে আবির্ভূত হয়েছে ।এখন সেই শ্লোগানটির উপর সুগারকোটিং / নিরপেক্ষ কোটিং লাগিয়ে কি পরিবেশন করা হচ্ছে ? জানি না , এটা তিনি জেনে করছেন , নাকি না জেনে ?
এটাইতো বর্তমান ফ্যাসিবাদের মূল দার্শনিক ভিত্তি ! ফ্যাসিবাদের জন্যে দরকার একজন দেবতা । এই ধারণা ভেঙে / মুচড়িয়ে মৃত জিয়াও ব্যক্তি মুজিবের দারুন উপকার করছেন । কোনও কোনও ক্ষেত্রে মুজিবকে ছেড়ে এগিয়ে গেছেন জিয়া - এই কঠিন সত্যটি গণতন্ত্রের জন্যে এক তিক্ত বটিকা ।
ফ্যাসিবাদ থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণে জিয়া এক মারাত্মক বটিকা । সেই বটিকার কার্যকারিতা কমাতে এগিয়ে এসেছেন জিয়া ভক্ত আসিফ- কেন যেন এরকমই মনে হচ্ছে ।
আপনি রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে মুজিব ও জিয়ার মধ্যে তুলনা বা আলোচনার জন্যে দশটি পয়েন্ট বাছাই করলেন । এখানে দশটির মধ্যে একটি পয়েন্ট ধরে নিলাম , স্বাধীনতা সংগ্রাম । সেখানে আপনি বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বরে রাখতেই পারেন । বাদবাকি আরো নয়টি পয়েন্টে জিয়া বঙ্গবন্ধুর উপরে ওঠে টোটাল নম্বর ও জনপ্রিয়তা বেশি পেয়ে যেতে পারেন । স্বাধীন গবেষণার সেই রাস্তাটিও মনে হয় বন্ধ । সরকার এটি বন্ধ করতে চায় রাষ্ট্রীয় ও পাশবিক শক্তি প্রয়োগ করে । সেই একই কাজ এখানে করা হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক কৌশলে এবং লেখা বা কথার মুন্সীয়ানায় ?
নির্মম সত্য কথাটি বলতে না পারলে অর্ধ সত্য কথা বলা বন্ধ করুন ।
পরিস্থিতি যাই হোক না কেন , সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রণ কখনই কল্যাণকর হয় না । বিষ জেনে পান করুন আর না জেনে পান করুন কিংবা শরবত জ্ঞান করে পান করুন - ফলাফল একই হবে ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন