আমিনুল ইসলাম
সিলেটে মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য যেই পুলিশ অফিসার একজন জলজ্যান্ত মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে; সেই পুলিশ অফিসার ধরা পড়ার পর স্থানীয় মানুষজনদের কাছে হাত জোর করে বলেছে, ‘মুঝে জান ভিক্ষা দে না ভাই’। জলজ্যান্ত যে ছেলেটাকে সে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল, সেও হয়ত তার নিজের জীবন ভিক্ষা চেয়েছিল। কিন্তু পায়নি। ধরা পড়ার পর সে আরও কি বলেছে জানেন? আমি তো একা মারিনি। সবাই মিলে মেরেছে। আমি তো নিজের ইচ্ছায় পালাইনি। আমার সিনিয়র বস আমাকে পালাতে বলেছে দুই মাসের জন্য। এরপর তো সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। এখন হয়ত আপনারা ভাবছেন, এই পুলিশ অফিসার তো ধরা পড়েছে। এর আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই। তার বিচার হবেই।
ঘটনা দুই
ইয়াবা বদির কথা কি ভুলে গিয়েছেন আপনারা? কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ। যিনি ইয়াবা ব্যবসার জন্য বিখ্যাত। তো, ইয়াবা ব্যবসা করার কারণে নিজে আর সাংসদ হতে না পারলেও তার বউ অবশ্য সাংসদ হয়েছেন!
মূল ঘটনা অবশ্য অন্য। গত বছর আমরা সবাই টেলিভিশনে লাইভ প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেখলাম কিংবা আমাদের জানানো হলো- আসলে সাংসদ বদি না; ইয়াবা ব্যবসা করে তার চার ভাই! এরপর এই চার ভাইকে দেখলাম অস্ত্র, ইয়াবাসহ কক্সবাজারের পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে গত বছর। এই দৃশ্যও আমরা টেলিভিশনে সরাসরি দেখেছি! এরপর নিশ্চয় ভেবেছিলেন বদির বিচার না হোক, এই চার ভাই এর অন্তত বিচার হবে।
এরপর কি হয়েছে জানেন? গতকাল এই চার ভাই জামিন পেয়েছে!
ঘটনা তিন
এদিকে পরশু পুলিশের এক এএসপি'কে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য নেয়া হয়েছিলো। কারণ তিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এরপর ওই হাসপাতালের ৭-৮ জন কর্মী মিলে ওই পুলিশ অফিসারকে এমন মারা মেরেছে; ভর্তি হবার খানিক বাদেই এই পুলিশ অফিসার মারা গিয়েছে! সেই ভিডিও আবার এখন ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে! তো, হাসপাতালের লোকজনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আপনারা তাকে মারলেন কেন? উত্তরে হাসপাতালের লোকজন বলেছে, সে নাকি উল্টা-পাল্টা কথা বলছিল। মানুষজনকে মারতে আসছিল। আমি নিজে সমাজিক মনোবিজ্ঞানের ছাত্র এবং শিক্ষক। এই নিয়েই পড়াশুনা করেছি। গবেষণাও করছি।
কেউ কি একটু আমাকে বলবেন, মানসিক ভাবে অসুস্থ একজন মানুষকে যখন মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়; তখন সেই রোগী কি আপনার সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসা করবে? হয় সে বেশি কথা বলবে। না হলে কথাই বলবে না। কিংবা আরেক স্টেপ যদি অসুস্থতা বেড়ে যায়, তাহলে রোগী ভায়োলেন্ট হতে পারে। এটা তো যে কোন মানসিক রোগের খুব সাধারণ লক্ষন।
একটা মানসিক হাসপাতালের কর্মীদের কি এই সাধারণ জ্ঞান টুকু নেই? এরা এই পুলিশ অফিসারকে মুহূর্তের মাঝে হত্যা করে ফেললো।
যা হোক, ওই হাসপাতালের কর্মীদের নাকি গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা ওই ছবিও এখন ফেসবুকে ঘুরে বাড়াচ্ছে।
কী, ভাবছেন এদের সবার বিচার তো হবেই; তাই না? বদির চার ভাই কিন্তু দিব্যি জামিন পেয়ে গিয়েছে।
এসআই আকবর ধরা পড়ার পর কি বলেছে, সেটা নিশ্চয় ভুলে যাননি। আমার বস বলেছে, দুই মাস পালিয়ে থাকতে। এরপর সবাই ভুলে যাবে। সে কিন্তু পুলিশে চাকরি করে। তার বসও কিন্তু পুলিশ অফিসারই। তারা নিশ্চয় এমনি এমনি এই কথা বলেনি। তারা জানে, এটাই এই দেশের সংস্কৃতি।
আচ্ছা, নোয়াখালীর ধর্ষণের ঘটনার কি দুই মাস পার হয়েছে? আমরা কি সবাই এর মাঝে ভুলে গিয়েছি?
তাহলেই তো চলছে। এরপর যে যার মতো দিব্যি জামিনে বের হয়ে কেউ আবার পিটিয়ে কাউকে হত্যা করবে। কেউ ইয়াবা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হবে। কেউ আবার কোন নারীকে উলঙ্গ করে ধর্ষণ করে সে ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেবে। এ এক গোলকধাঁধা। কেবল চর্কির মতো ঘুরতেই থাকে!
পুলিশের যেই এএসপিকে মানসিক অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল; সে হয়ত বুঝতেই পারেনি- চিকিৎসা তো তার না; চিকিৎসা দরকার পুরো সমাজ এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থার।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন