হঠাৎ করেই গত দুদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী সামরিক বাহিনী, বিডিআর হত্যাকান্ডের দায়, মার্শাল ল শব্দটি বাদ দেওয়াসহ সামরিক বাহিনীর স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে কেন এতো সরব হলেন?
আজকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সামরিক অভিধান থেকে মার্শাল ল শব্দটি বাদ দেওয়া উচিত।' অথচ মার্শাল ল বা সামরিক আইন শুধু বাংলাদেশই নয়। বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষা। বহিরাক্রমন, অভ্যন্তরীন বিদ্রোহ। গৃহযুদ্ধ বা ব্যাপক দাংগা হাংগামা প্রতিহত করার জন্য। ও রাষ্ট্রের শান্তি শৃংখলা রক্ষা করার জন্য মার্শাল ল জারী করা হয়ে থাকে।
এদিকে এতবছর পরে গতকালকে প্রধানমন্ত্রী বিডিআরের ঘটনার পেছনে কারা জড়িত তাও জানিয়ে দিলেন। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘যারা তখন ক্ষমতায় আসতে পারে নাই তারাই তখন তাদের পেছনে ছিল এবং তাদের সঙ্গে ওই ১/১১ যারা সৃষ্টি করেছিল।’ অর্থাৎ এতবছর পরে প্রধানমন্ত্রী বিডিআর হত্যাকান্ডের দায় মূলত বিএনপি ও ১/১১’র সময়ের সামরিক কর্মকর্তাদের উপর চাপিয়ে দিলেন। এদিকে আজকে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘সব দিকে নজর রেখে সশস্ত্র বাহিনীকে ঢেলে সাজিয়েছি।’
মূলত: পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত মেজর সিনহা রাশেদ খানের মর্মান্তিক মৃত্যু বাংলাদেশের জনগণের সাথে প্রধানমন্ত্রীর ‘ঢেলে সাজানো’ সশস্ত্র বাহিনীরও কেউ একজনও মেনে নিতে পারেনি। প্রথমে সেনাপ্রধান কর্তৃক এটাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলা হলেও পরে মাঠ পর্যায়ের অবস্থা বেগতিক দেখে সশস্ত্র বাহিনী এই ইস্যুতে হার্ডলাইনে চলে যায়। আর তাতে আর্মিবিদ্বেষীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। তখন এই বিচারের দাবীতে খোদ সেনাপ্রধানসহ সাবেক-বর্তমান পুরো সেনাপরিবারই এক শক্ত অবস্থানে চলে আসে।
এদিকে আর্মিবিদ্বেষী দেশ-বিদেশী চক্রটিও থেমে নেই। এই মামলায় গ্রেফতার, তদন্ত, রিমান্ড, জিজ্ঞাসাবাদ, জবানবন্দি, মামলা দায়ের, আইন, আদালত, বিচার, প্রসিকিউশন- সর্বক্ষেত্রেই সেই শক্তির প্রবল বিচরন। দেখুন, যেখানে মুহুর্তের মধ্যেই যে কারো ফোনালাপ ফাঁস করে প্রচার করা সরকারের নিত্যদিনের হাতের খেলা। সেখানে প্রদীপ-লিয়াকতের ফোন রেকর্ড পায়নি তদন্ত কমিটি। তার মানে প্রদীপের সংশ্লিষ্টতার রেকর্ড গায়েব!
অর্থাৎ মেজর সিনহা রাশেদ খানের মর্মান্তিক মৃত্যুতে সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে যে একটা সুদৃঢ় ঐক্য তৈরি হয়েছে। সেটাকে (১) রক্ত চক্ষু দেখিয়ে দমিয়ে রাখা। (২) বিডিআর হত্যাকান্ডে প্রধান রাজনৈতিক দলকে দায়ী করে তাদের মুখ বন্ধ করে রাখা। (৩) বিডিআর হত্যাকান্ডের দায়ে ১/১১’র সময়ের সামরিক কর্মকর্তাদের বিচারের ভয় দেখিয়ে রাখা। আর সর্বপরি, এগুলোর আড়ালে প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে— দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষা বা অন্যকোন দেশের আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করা কিংবা দেশে কোন গৃহযুদ্ধ বা দাংগা বাধলে যাতে সশস্ত্র বাহিনী এগিয়ে আসতে না পারে তার পাকাপাকি একটা বন্দোবস্ত করা। সেজন্যই আজ সামরিক অভিধান থেকে মার্শাল ল শব্দটি বাদ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আর এটাই সশস্ত্র বাহিনীকে সেই ‘ঢেলে সাজানো’।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন