অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন
কদিন আগে ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা ফোন করলেন। তার ছেলে সিডনি থেকে ঢাকা ফিরবে, টিকেট কাটার জন্য জরুরি ভিত্তিতে টাকা দরকার। এই নেতাকে আমি ছাত্রজীবন থেকে চিনি, দুঃসময়ের ছাত্রনেতা। আমার খুব আপন মানুষ। আমি বললাম, আপনি চিন্তা করবেন না, আমি ব্যাপারটা দেখছি। ভাতিজার সাথে ফোনে কথা বলে ৩৮৬০$ পাঠিয়ে সেদিনই তার প্লেনের টিকেট কেটে দিলাম।
কিন্তু সমস্যা তাতে কমলো না। নেতা প্রায়ই ফোন করেন, টাকাটা তিনি কিভাবে পরিশোধ করবেন? আমি বলি, এটা নিয়ে চিন্তা কইরেন না, এক সময় দিলেই হবে। কিন্তু তিনি ফোনে ফোনে আমাকে অতিষ্ঠ করে ফেললেন। বুঝতে পারছিলাম, টাকাটা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত তিনি স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। এ সময়ে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা থেকে এমদাদ ভাই এলেন, সাথে করে আমার টাকাটা নিয়ে এলেন। এই না হলে নেতা!
ছেলেটার ঢাকা যাবার দিন ঘনিয়ে এলো। ঢাকা এয়ারপোর্টে তার করোনা নেগেটিভের সার্টিফিকেট লাগবে, নইলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন। নেতা ফোন করে বললেন, ‘প্রভাব খাটালে হয়তো এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় নিয়ে আসতে পারবো, কিন্তু আমি তা চাই না। তুই ওরে একটা করোনা টেস্টের সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করে দে’। আমি ওকে করোনা টেস্টের পরামর্শ দিলাম। টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসলো, তখন ডাক্তার সেই রিপোর্ট দেখে তাকে করোনা মুক্তির সার্টিফিকেট দিলেন। পুরো ব্যাপারটাই স্বচ্ছ, কোথাও কোন দু'নম্বরি নাই। ভাতিজা এখন ঢাকায়, সুস্থ এবং নিরাপদে আছেন। কদিন পরে তার বিয়ে হবার একটা সম্ভাবনাও নাকি আছে!
একজন সাবেক মন্ত্রীর মেয়ের করোনা পজিটিভ। তিনি সেটা লুকিয়ে রেখে ‘করোনা নেগেটিভের’ একটা ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে লন্ডন যাবেন বলে ঢাকা বিমানবন্দরে এসে আজ ধরা খেয়েছেন। সব মিডিয়ায় এটা আজ ‘সংবাদ’ হয়েছে। এই সাবেক মন্ত্রীর মানসম্মান বরাবরই কম, এটা নিয়ে তাই মোটেই চিন্তিত নই। আমি ভাবছি, এই ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে লন্ডনে ধরা খেলে দেশের ইমেজের কী হতো? এমনিতেই সাহেদ-জেকেজির কল্যাণে করোনার ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে সারা বিশ্বের মিডিয়ায় সংবাদ হয়েছে। তাছাড়া, একজন করোনা পজিটিভ রোগী এভাবে ভ্রমণ করলে তার মাধ্যমে আরো কতজন মানুষ সংক্রমিত হতে পারতো? এটা তো রীতিমত অপরাধ। তারপরও যদি আমাদের এসব নেতাদের হুঁশ না হয়, তাহলে কিভাবে চলবে?
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন