মিনার রশিদ
ভালুকায় যে এক সময় ভালুক থাকতো সেখানকার ক্লাস নাইনের একটি ছেলে তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে । ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টের অধীনে ছেলেটিকে জেলে ঢুকানো হয়েছে । তার অপরাধ সে তেয়াত্তর বছরের এক মেয়েকে ফেইস বুকে সমালোচনা করেছে , মতান্তরে মন্দ কথা বা অশালীন কথা বলেছে !
কবি যখন বলেন , ‘ভাত দে হারামজাদা , নইলে মানচিত্র চিবিয়ে খাবো ‘ তখন কবির এই বেয়াদবি হজম করে ক্ষোভের কারণটি বের করাই বুদ্ধিমানের কাজ । অতি দরকারি এই বুদ্ধিটিই শাসক শ্রেণী এবং চামচাদের মাথা থেকে আজ উধাও হয়ে পড়েছে ।
ফলে এই চৌদ্দ বছরের ছেলেটি তেয়াত্তর বছরের সরকার প্রধানের প্রতিপক্ষ বনে গেছে । কিংবা অতি উৎসাহী চামচার দল সেভাবেই বিষয়টিকে জাতির সামনে হাজির করেছে ।আগে ছেলেটির যে মন্তব্য কয়েকজন বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন দেখতে পেতো - এদের বদৌলতে তা সারা দেশবাসীর গোচরে চলে এসেছে !
মজার ব্যাপার হলো , এক সময় যারা কিন্ডারগার্টেনের দুধের বাচ্চাদের কন্ঠে ‘অমুকের ফাঁসি চাই’ শ্লোগানকে অনৈতিক মনে করেন নাই সেই মরাল ব্রিগেইড আজ এই চৌদ্দ বছরের কিশোরের স্বত:স্ফুর্ত প্রতিবাদে
/ আচরনে নিদারুন কষ্ট পেয়েছেন !
কিশোরটি দেখেছে, সে যদি ১০০ টাকা মোবাইলে ঢুকায় তবে সেখান থেকে সরকার কেটে রাখে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা । এগুলি নিয়ে যে বড়দের প্রতিবাদ করার কথা / সোচ্চার হওয়ার কথা -সেটা তারা করছেন না ।
বিষয়টি কিশোরটিকে ক্ষুদ্ধ ও হতাশ করেছে । এভাবে সাধারণ জনগণের পকেট কাটা এবং জনগণের চুপ করে থাকা পৃথিবীর কোথায়ও দেখা যায় না । জনগণের পকেট কেটে কিছু সংখ্যক সরকারী কর্মকর্তা / কর্মচারীদের বেতন / বোনাস বাড়িয়ে অবৈধ শাসনকে পোক্ত করা হচ্ছে । এটাও এক ধরনের ঘুষ । পঁচানব্বই ভাগ মানুষের রক্ত শুষে পাঁচ ভাগ মানুষকে ধনী থেকে অতি ধনী বানানো হয়েছে । সেই টাকা লুটেরারা আবার বিদেশে পাচার করেছে । এই কিশোর জানে যে সাইত্রিশ লাখ টাকা দিয়ে পর্দা কিনেছে , ছয় হাজার টাকা দিয়ে যে বালিশ কিনেছে সেগুলোর জন্যেই আজ তাকে সহ দেশের আঠারো কোটি মানুষকে ১০০ টাকার মোবাইল চার্জে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা সরকারকে দিতে হচ্ছে ।
এখন আপনারা এগিয়ে এসেছেন এই প্রতিবাদী কিশোরকে আদব শেখাতে !!!
কিশোরটি তার বুদ্ধিমত / বিবেচনামত তীব্রভাষায় এই লুটেরা পলিসির প্রতিবাদ জানিয়েছে । সে আঘাত করেছে এর মূল হোতাকে । এদিকে পীর হাবিব / নঈম নিজামরা ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চায় কিন্তু ব্যর্থ সরকার এবং পালের গোদা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে । আমার মনে হচ্ছে পীর হাবিব / নঈম নিজাম/ নাইমুল ইসলাম / মতিউর রহমান / মাহফুজ আনাম / শ্যামল দত্তদের জন্যে একজন যোগ্য ওস্তাদ পাওয়া গেছে । এদের উচিত এই ছেলের মক্তবে গিয়ে ভর্তি হওয়া এবং পরে এসে সাংবাদিকতা করা ।
এই ছেলেটির জন্যেই বোধহয় কবিগুরু বলে গেছেন ,
“ওরে সবুজ , ওরে আমার কাঁচা
আধ মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা । “
এদেরকে আদব শেখানোর চেষ্টা বাদ দিয়ে
এরকম ঘা খাওয়ার আরো প্রস্তুতি নিন ।
এদেরকে নিয়েই আশায় বুক বাঁধছি । এই আধমরা শরীরটির সমস্ত শক্তি জড়ো করে একটা স্যালুট দিচ্ছি !
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন