মিনার রশিদ
আমাদের এক আজব প্রেমিক বন্ধু ছিল । তাজব ছিল তার হৃদয়ে জমে থাকা সুপ্ত প্রেম । প্রেমিকার বিয়ে সহজেই মেনে নিয়েছে । কিন্তু যখন খবর পেয়েছে সেই প্রাক্তন প্রেমিকার সন্তান হয়ে গেছে , তখনই যারপরনাই ভেঙে পড়ে !
এই প্রেমিক বন্ধুটির মতই হয়েছে আমাদের দেশপ্রেমের (?) অবস্থা ! দেশটি এমন এক শক্তি বা গ্রুপের হাতে তুলে দিয়েছি - যাদের অন্তরে সর্বদা অন্য একটি দেশ বাস করে । ৫০ বছর আগে কিছুসংখ্যক মানুষের অন্য একটি দেশপ্রীতিকে আমরা অভিশাপ দেই , অগত্যা সেই দেশটির নাম উচ্চারণ করলে দাঁত ব্রাশ করে ফেলি । অথচ নিজের দেশ রেখে এই মহামান্যদের অন্য দেশপ্রীতিকে স্বাধীনতার চেতনা বলে শ্রদ্ধা করি , সমীহ করি ।
তাদের যে বিয়ে হয়ে গেছে , তারা যে স্বামী স্ত্রী সেই কথাও জানান দিয়েছে । তখন আমাদের মধ্যে তেমন কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় নাই । এখন অন্য নাগরের সঙ্গে একটু খানি দহরম মহরম দেখে সেই স্বামী বা ভাতারের মন মেজাজ খারাপ হতেই পারে । এই ‘বেশ্যামি’র জন্যে
সেই ভাতারের অধিকার ছিল ‘চুতমারানি’ কিংবা এর চেয়েও কঠিন গালি দেয়ার । তা কিন্তু দেয় নাই । শুধু নতুন নাগরের অর্থনৈতিক প্যাকেজ বা উপহারকে ‘খয়রাতি’ বলেছে ! এতেই এখন আমাদের প্রেস্টিজে লেগে গেছে !
নতুন করে এই রাজনৈতিক গোলামির অনেক আগেই আমরা আনন্দবাজার গ্রুপের সাংস্কৃতিক গোলাম বনে গিয়েছি । এই আনন্দবাজার গ্রুপই তসলিমা নাসরিনের মত তৃতীয় শ্রেণীর এক পর্ণো লেখিকাকে বিশাল বড় লেখিকা বানিয়েছে । এদের কাছ থেকে একটু প্রশংসা পাওয়ার জন্যে উন্মুখ হয়ে থাকে এদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের রুই কাতলাগণ । কে চুনুপুটি আর কে রুই কাতলা তা নির্ধারণের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে আলো-স্টার - চ্যানেল আই গ্রুপের হাতে । আমরাই দুধ কলা খাইয়ে এদের পুষেছি ।
দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি অনেকটা সময় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলেও এই মহলটিকে তোয়াজ করে গেছে - এদের বিরুদ্ধে কার্যকর সাংস্কৃতিক , বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়তে পারে নাই । বিএনপির ট্যাগ মেরে যে সব বুদ্ধিজীবী প্রদর্শন করা হয়েছে তারাও এই হীনমন্যতা থেকে বের হতে পারেন নি । এরা জাতীয়তাবাদ ও সেই বোধকে কতটুকু ধারণ করেছিলেন তা নিয়েও প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে ।
বিএনপি নেতৃত্বকে উঠতে বসতে গালি দেয়া নেতাদের সাথে বিএনপি পন্থী বুদ্ধিজীবীদের
মনের টান দেশবাসীকে হতবাক করে দিয়েছে।
এরই মাশুল বিএনপি সহ সারা দেশকে আজ গুণতে হচ্ছে ।
প্রথম আলোর আনিসুল হকদের লম্ফ ঝম্ফ দেখেই আমরা জাতীয় বীর নির্ধারণ করি ! অনেক বাটপার বা মেকি বীরকে জাতীয় বীর বানিয়ে টেক্সট বুকে ঢুকানো হয়েছে ( এভারেষ্ট বিজয় দ্রষ্টব্য ) ।
অথচ গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজমের মত প্রকৃত বীরকে অবজ্ঞা করা হয়েছে । শুধু মারা যাওয়ার পর জানা গেলো তিনি আসলেই কী ছিলেন !
সাংস্কৃতিক গোলামি থেকে বের হতে না পারলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অকার্যকর হয়ে পড়ে । চোখের সামনে এসব স্পষ্ট হওয়ার পরেও আমাদের হুঁশটি ফিরবে কি না জানি না ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন