মিজানুর রহমান খবির
ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন অনেকে। বাড়িওয়ালার বিপদে ভাড়াটিয়া খুশি, বাড়িওয়ালা বেজার। এইসেই কত কী। গ্রামে গেলে শহুরে খরচের অংকটি কমে হয়ত আর্থিক উপকারটি হবে। কিন্তু বিপদও কম নয়। আপনার সম্পত্তি আর অধিকারে এতদিন রাজার হালে থাকা গ্রামের স্বজনের এলার্জি শুরু।
প্রথম কয়েকদিন বেশ মেহমান মেহমান ভাব। এরপর যখন অধিকার বুঝতে যাবেন, আপনার বউ/স্বামী/সন্তান ফল, মাছ, গাছ নিয়ে কথা বলবেন, ক্যাচাল শুরু। আপনার কি মনে হয়, গ্রাম এখনও ছায়ামায়ায় ভরপুর আছে? রাজনীতি, নেশা আর বখাটেপনা ভরপুর হয়েছে। বেহেশত বলে যেটাকে জানেন, গিয়ে দেখেন স্বয়ংক্রিয় নরক হয়ে আছে ওটি।
শহরে বড় হওয়া ছেলেমেয়েরা মানিয়ে নিতে বহু সমস্যায় পড়বে। এতো গেল গতানুগতিক বড়লোকের কথা। এবার আসেন পকেটে। জমানো টাকা বহুদিন খাওয়ার সামর্থ্য অনেকেরই নেই।
এ সমস্যা সমাধানে, অনেকের মতে সমস্যায় আরও জড়াতে আছে 'কিস্তি'! নূহ নবীর কিস্তি নয়। সমিতির কিস্তি। উঠানো লাগবে অনেকেরই। এরপর শুরু ঋণ আর বিবাদ।
শহর থেকে গ্রামে যাওয়া মেয়েরা মানেই হলো আশপাশের বহু ক্ষেপণাস্ত্র ওইদিকে তাক করা শুরু। ‘ওই বাড়িতে একটা মাল আইছে’- এমন অদম্য অসভ্য বাসনায় ছোটবড় বহু কুত্তা বাড়ি কিংবা আশপাশে ঘুরঘুর করবে।
মাজাব্যাকা, দাঁত ফোকলা ছকিনার মায়রে নিয়া আজীবন ঘুমানো দাদু, রগরগে ছবির নিয়মিত দর্শক উঠতি কিশোর, রাজনীতি করে পাট নেয়া ঢেউটিন মার্কা বিড়িখোর বাবাখোরের লোলুপ দৃষ্টি থেকে কন্যা এমনকি বউ/বোনকে রক্ষা করা কঠিন।
বিলাস দ্রব্যেও নজর থাকবে অনেকের। আলতুর মায়ের যেমন জ্বলবে সোনার হার কিংবা চুরি দেখে, তেমনি চোরেরাও তক্কেতক্কে থাকবে সুযোগ হবে কখন। তাই বলে ডাকাত মহোদয়কেও ভুলবেন না।
রাজনীতি ও প্রশাসনের ব্যাকআপে সবযুগেই দুর্বৃত্ত থাকে। যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড অপকর্মে ভরা, অ্যাকশনের জন্য তারাই এগিয়ে। পুলিশের সোর্স, সহযোগী ভু্ইফোঁড় সংগঠন, দলীয় ক্যাডারের ইতিহাস তাই বলে।
বিষয়টি সার্বিক না হলেও চ্যালেঞ্জ নিবি না কেউ, খবরদার! চোখ হাতে নিয়া বড় হই নাই আমি। গরিব, বিধবা, স্বামী নেই অথচ বয়ঃস্থা মেয়ে আছে এমন পরিবারকেও বিপদে পড়তে হবে বেশি করে!
গ্রামকে কখনওই কোন সরকার কর্মসংস্থানের আদর্শ জায়গা করেনি। এন্টাসিড খেলে যে রোগ ভালো হয়, সে চিকিৎসাও ঢাকায়। জয়পুরহাটের কলমি শাক কিংবা কচুর লতি বেচা হবে ঢাকায়। ভালো কলেজ- ঢাকা, ভার্সিটি- ঢাকা, ইনকাম করবো- ঢাকা, ক্যারিয়ার গড়বো- ঢাকা।
বহুত দালাল বলবে অবকাঠামো এই সেই ভাতা আপনার চোখে পড়ে না? খুব পড়ে রে কিন্তু পাকা রাস্তা আর পাকা ভবন মানেই অর্থনীতির মানদণ্ড নয়। কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক ও জীবনযাপন, চিকিৎসা ও শিক্ষার কী কচুডা আছে কোন গ্রামে?
যা আছে তা কি পর্যাপ্ত? জনসংখ্যার দোহাই দিবেন? এদেরকে জনশক্তি করতে দেখছেন কখনও? সরকারি বরাদ্দের কোন টাকাটা হালাল উপায়ে তোমার গ্রামে ব্যয় হয়? দোষ কি ঢাকার?
একটা সিস্টেম দাঁড়িয়ে গেছে মীরজাফরের বংশধর আমরা। গ্রামে পয়দা হয়েছি অথচ সেই গ্রামের অর্থনীতি কখনও চাঙা করিনি। খামার, মাছ চাষ, কৃষি করার কথা বলবেন? কারও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে এ বিষয়ে? আমার আছে তিনবছর ধরে, বহু ইতিহাস রচিত হয়েছে এ খাতে।
কিস্তিওয়ালা আর ফিডওয়ালা বাচ্চাওয়ালারা সরকারের মাথায় লবণ রেখে কাঁঠাল খায় এসব ব্যবসা তাই জমছে না। শতশত বছরে গ্রামের দফারফা সারা হইছে, এবার শহরেরডাও মারা হবে।
লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, সময় সংবাদ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন