মিনার রশিদ
আমার এক চাচা , আমার এক বছরের সিনিয়র । সময়টা ১৯৮১ সাল। ওরা এসএসসি পরীক্ষা দেবে , আমরা ‘নিউ টেন’ - এ উঠেছি । স্কুলটি কবি নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত নজরুল একাডেমি ( প্রাক্তন দরিরামপুর হাইস্কুল ) , ত্রিশাল ।
। সেই চাচা আমাকে অনুরোধ করে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কে নিয়ে একটি রচনা লিখে দিতে । স্কুলের আব্দুর রহমান স্যারের নির্দেশ ছিল , রচনাটি নিজে নিজে লিখতে হবে । কিন্তু ও আমাকে লিখে দিতে অনুরোধ করে । আমিও লিখে দেই । লেখাটি দেখে স্যারের সন্দেহ হয় । স্যার চাচাকে জিজ্ঞেস করেন , ‘ সত্যি করে বল , এটি তোকে কে লিখে দিয়েছে ?’ ভাতিজার গর্বে গর্বিত সেই চাচা নিজের প্রেস্টিজ / ধরা খাওয়ার বিপদ ভুলে
আমার নামটি বলে দেয় ।
সেখানে একটি লাইন ছিল এরকম , “ রাজনীতি আমি বুঝি না । কাজেই রাজনীতি দিয়ে আমি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বিচার করতে চাই না । আমি তাঁকে বিচার করতে চাই দেশ ও জনগণের স্বার্থ দিয়ে । “
এই গল্পটি / লাইনটি আমার সেই চাচা প্রায়ই বলে থাকেন । ফলে আমার স্মৃতিতেও সেই লাইনটি গেঁথে গিয়েছে ।
জানি না সেই কিশোর বেলায় কতটুকু বুঝে এই কথাটি লিখেছিলাম ?
আজ মধ্যবয়সে এসে যাপিত জীবনের উপলব্ধি , সকল অভিজ্ঞতা এবং সাপোর্টিং ডকুমেন্ট/ ইতিহাস / গুণীজনের উদ্ধৃতি মিলিয়ে এই কথাটি আরো গভীরভাবে অনুভব করছি । এদেশের অর্থনীতির অনেক নারিকেল গাছ রোপন করে গেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া । এত লুটপাটের পরেও অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে যে গার্মেন্টস ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স - এই দুটির গোড়াপত্তন করেছিলেন এই জিয়া । এরকম এদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন ও প্রগতির আট দশটি নারিকেল গাছ তিনি রোপন করে গেছেন - যেগুলির ফলন আমরা উপভোগ করছি ।
এই জাতির সামনে যত বিপদ ঘনিয়ে আসে তত বেশি করে জিয়ার কথা মনে পড়ে । বার বার মনে হয় , এ মুহূর্তে জিয়ার মতো কাউকে দরকার । ১৯৭১ সালে চাপাবাজ চাচারা যখন আপন প্রাণ বাঁচাতে তল্পি তল্পা সহ
বর্ডার পানে ছুটে গিয়েছিলেন তখন ‘ উই রিভোল্ট ‘ বলে ৩৫ বছরের এক তরুণ মেজর রুখে দাঁড়িয়েছিলেন , আমি মেজর জিয়া বলছি .... ! এখন টিটকারী করা হয় ৪০০ টাকার মেজর বলে । অথচ আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসটাই এই চার শ টাকার মেজরদের ইতিহাস !
আবার ১৯৭৫ সালে বাকশাল সৃষ্টির ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়ায় যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক বিশৃংখল অবস্থার সৃষ্টি হয় - সেখানেও রেসকিউয়ার হিসাবে জিয়ার আবির্ভাব ঘটে । জিয়ার জন্ম না হলে গণবাহিনী ও তাহের- ইনু - মেননেরা এই দেশটিকে আফ্রিকার ওয়ার লর্ডদের দেশ বানিয়ে ফেলতো তাতে কোনো সন্দেহ নাই । সামরিক বাহিনীতে যে চেইন অব কম্যান্ড অতি জরুরি তা ফিরিয়ে এনেছিলেন জেনারেল জিয়া ।
সামরিক বাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার সাথে সাথে অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশটিকে
গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনা- সেটিও একটি বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল!
আজীবন গণতন্ত্রের পূজারী এক নেতার হাতে যখন গণতন্ত্রের কবর রচিত হয় তখন তা পুণরুদ্ধার হয়েছে গণতন্ত্রের যম বলে বিবেচিত এক আর্মি জেনারেলের হাত দিয়ে । বিষয়টি রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদেরকেও হতবাক করে দিয়েছে ।
আজ সেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী । তিনি যখন এদেশের দায়িত্বভার গ্রহন করেন তখনও তাঁর বয়েস ছিল মাত্র ৩৯ বছর ! এই তরুণ নেতা শুধু এদেশের মানুষের অন্তরেই জায়গা করে নেন নি । বিশ্ব বাসীর সমীহ ও শ্রদ্ধাও কুড়িয়েছেন - যা বর্তমান চাপাবাজরা কল্পনাও করতে পারবে না । জিয়ার প্রত্যেকেটি বিদেশ সফর নিয়ে স্টাডি করেন । পার্থক্যগুলি সহজেই চোখে পড়বে ।
জিয়ার অন্তর এদেশের
মানুষ সহজেই পড়তে পেরেছিল । কাজেই জিয়াকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যে
তার কোনো জায়নামাজ বা পরনের টুপি সংরক্ষণ করতে হয় নাই । তাঁর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার গল্প বলতে হয় নাই । মজার ব্যাপার হলো , নামাজ পড়া রত কোনো ভিডিও / ছবি কোথায়ও দেখা যায় না । তারপরেও সারা বিশ্বে তিনি মুসলিম বিশ্বের একজন প্রথম সারির নেতা হিসাবে গণ্য হতেন । আর এই পরিচয় নিয়ে কখনো তিনি ইনফেরিয়র কমপ্লেক্সে ভুগতেন না । মুসলিম বিশ্বের বাইরেও তাঁর গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছিল । ফিলিপাইনের স্মারকমুদ্রার ছবি সংযুক্ত করা হলো যা জিয়ার রাষ্ট্রীয় সফর উপলক্ষ্যে প্রকাশ করা হয়েছিল । এ থেকে বিশ্ব পরিসরে তখনকার এই তরুণ ও স্মার্ট নেতার গুরুত্ব সহজেই অনুমেয় ।
জিয়া যে দুটি জিনিস গড়েছিলেন সেই দুটি প্রতিষ্ঠানই আজ অস্তিত্বের হুমকিতে পড়েছে ।
এক .গণতন্ত্র ।
, দুই . দেশ রক্ষাকারী বাহিনী ।
এদের খোলস ঠিক রাখা হয়েছে , ভেতরের স্পিরিটটি উধাও হয়ে গেছে ।
কাজেই সামনের দিনগুলিতে এই জিয়াকে আরো বেশি করে দরকার পড়বে ।
জিয়া বিদ্বেষী এই ফ্যাসিষ্ট সরকার তাকে যতবেশি জনগণের কাছ থেকে সরাতে চাচ্ছে , তত বেশি তিনি মানুষের অন্তরে গেঁথে যাচ্ছেন ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন