পরিবেশবাদীরা সেমিনার করছে ‘গাছ লাগাও, বৃক্ষনিধন কমাও’ বিষয়ে। কোথায়? কদিন আগে জঙ্গল উজাড় করে যে উঁচু বিল্ডিংটা হয়েছে, তার টপে। বস্তিবাসীর অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছে তারা অনুদান নিচ্ছে বস্তি উচ্ছেদকারী শিল্পপতীর কাছ থেকে।
নদীবাঁচাও কর্মসূচিতে যে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়ে গেল, এটা নদীজীবী এবং নদীগ্রামের মানুষেরা টেরই পেল না। নদী যত মরবে তত ফান্ড পাবে এই প্রকল্প, আবার চিরতরে মরে গেলে ফান্ডিং বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে খুব কৌশলে নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা হবে।
গৃহকর্মী নির্যাতন প্রতিরোধ সংগঠনের সেক্রেটারি ম্যাডাম মিটিংয়ের ফাঁকে ছোটবোনকে টিপস দিচ্ছেন, 'কাজের মেয়েকে না মারলে মাথায় উঠে যাবে, ছোটোলোকের জাত, দেখিস না আমারটা কেমন টাইটে থাকে!'
আপাতদৃষ্টিতে নারী নির্যাতন কমে যাওয়ায় নির্যাতনের ডাটা কালেকশনে বরাদ্দ কমে যাচ্ছে শুনে এ কাজে নিয়জিত এনজিওকর্মীদের মাথায় হাত। মাদকবিরোধী র্যালির উদ্বোধন যিনি করবেন তার আয়ের একটা বড় অংশ আসে এই ব্যবসা থেকেই।
কৃষকদের উন্নয়নে দশ কোটি টাকা বরাদ্দ, এক কোটি টাকা কৃষকরা পাবেন, বাকি নয় কোটি টাকা বণ্টন-সম্পাদন ব্যয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব নিতে কমিটি গঠন। থানায় ধর্ষণ। প্রখ্যাত আইনজীবী লড়ছে কুখ্যাত খুনির পক্ষে। একশ টাকায় নিজের ভোট বিক্রি করে রাজনীতিবিদের অসততার কথা বলে বেড়াচ্ছে লোকগুলো।
ফুলটাইম হারাম রোজগেরে লোকটা বাজারে গিয়ে হালাল খাবার খুঁজে হয়রান। নামাজ না-পড়া লোকটা লক্ষ টাকা দিয়ে মসজিদ কমিটির প্রধান। প্রাইমারি ফেল করা লোক, ক্ষমতাবলে মাধ্যমিক স্কুলের সভাপতি। দুর্নীতি নির্মুল কমিটির আয়-ব্যায়ে গড়মিল।
বিশ্বের সবচেয়ে সাম্প্রদায়িক লোকটার হাতে বিশ্বসম্প্রীতির দায়িত্ব অর্পণ। লেখকসংঘের পরিচালক সবচেয়ে দুর্বল লেখকটা। 'প্রাইরেসি অ্যান্ড কপিরাইট ল' বইটার অর্ধেকটা টুকে লেখা।
পৃথিবীজুড়ে চলছে এ অদ্ভুত গেইম। সবমিলে চমৎকার একটা খেলা। এই খেলায় একটা পক্ষ সব সময় বিজিত, একটা পক্ষ চিরকালীন পরাজিত। তার মানে খেলাটা ফেয়ার/স্বচ্ছ না। ফেয়ার যেহেতু না তার মানে মাঝখানে অবশ্যই অপরাধী কেউ আছে।
অপরাধীটা তাহলে কে? অপরাধী হলো যারা এই খেলা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। যেমন এই মুহূর্তে আমি অপরাধী। যেহেতু রাষ্ট্র, সিস্টেম, সম্মানী ব্যাক্তি, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্রভৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা মানে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী যে শাস্তিযোগ্য অপরাধী সেটা কেনা জানে!
ফলে শেষ পর্যন্ত অপরাধ নিজেই অপরাধীকে খুঁজে নিল--যেহেতু অপরাধের অপরাধী থাকতেই হবে। জনগণ জানল, এই গেমে যে অপরাধী সে ধরা পড়েছে। আমিও সর্বদা মহান কেউ না। কিন্তু একটা নির্মিত প্লটে এই কথাগুলো বলে পুরো গেমে জড়িয়ে পড়া আমার নিয়তিমাত্র। পুরো গেমটা তৈরি।
আমি আমার ছোটগল্পে এই গেমটা ধরার চেষ্টা করি। আমার চরিত্রটা অধিকাংশ সময় অপরাধী, কারণ অপরাধ নিজে তাদের খুঁজে নিয়েছে নিজের ন্যায্যাতা প্রতিষ্ঠার জন্য।
লেখক: গল্পকার
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন