মিনার রশিদ
“ ১৯৫২ সালের শেষদিকে আমার ধর্মবিশ্বাস চলে যায়। “ প্রথম আলোর সাথে সাক্ষাতে নিজেই এই কথাটি বলে গেছেন সদ্য প্রয়াত আনিসুজ্জামান । আজ প্রথম আলো তার সেই সাক্ষাতকারটি পুরো ছেপেছে ।
সেই যে ১৯৫২ সালে চলে গিয়েছিল , সেই ধর্ম বিশ্বাস শেষ নি:শ্বাস ছাড়ার আগ পর্যন্ত আর ফিরে এসেছিল বলে জানা যায় নি ।
বাঙালী সংস্কৃতিকে অত্যন্ত সার্থকভাবে ইসলামী সংস্কৃতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিলেন ! বলতে গেলে তিনি ছিলেন এই ধারার পেশ বা বড় ইমাম । এ কাজের নিমিত্তে অনেক মুয়াজ্জিন তিনি তৈরি করে গেছেন ! এখন ধর্মনিরপেক্ষতার সেই ইমামকে তাঁর আজীবন লালিত আদর্শের বিরুদ্ধে দাফন -কাফন -জানাজা করা হবে তাঁর সত্ত্বার উপর সবচেয়ে বড় জুলুম ।
প্রথম আলোর সাথে তাঁর সর্বশেষ সাক্ষাতকারটিতেও তিনি বলে গেছেন ,
“ মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের বড় সংখ্যক নাগরিক চাকরি বাকরি করছে। দেশে ফেরার সময় তারা ওই দেশের সংস্কৃতিটা সঙ্গে নিয়ে আসছে। বাংলাদেশে যে এখন হিজাব ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসী বাঙালিদের মাধ্যমে। সৌদি আরবে বা মধ্য প্রাচ্যে গিয়ে তারা ওখানকার সংস্কৃতিকে ইসলামি সংস্কৃতি বলে মনে করছে। তারপর দেশে ফিরে এসে ওই সংস্কৃতির চর্চা করছে। “
এরপরেও কোনো না কোনো মওলানা অতি উৎসাহ ভরে উনার জানাযা পড়াবেন । এই কিছিমের মওলানারাই আবার পান থেকে চুন খসলেই আজহারি বা জাকের নায়েকের বিরুদ্ধে লাগেন ! জীবন ভর ইসলামী সংস্কৃতি ও হিজাবের চরম বিরোধিতা করেও উনার ঈমান অটুট রয়েছে বলে জ্ঞান করেন । অথচ আজহারি পূর্বতন ইসলামী স্কলারদের
রেফারেন্স টেনে শুধু জানিয়েছিলেন , মেয়েদের মুখ খোলা রাখা এবং মুখ ঢেকে রাখা দুটিই অনুমোদিত ।
একথা বলাতেই মহা হৈ চৈ শুরু হয়ে গেলো ! তিনি কাফের/ বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন বলে যারা ফতোয়া দিয়েছিলেন তারাই এখন হিজাবের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তির জানাযা অত্যন্ত উৎসাহ ভরে পড়াবেন !
২.
যাহোক ধর্মের বিষয় নিয়ে কথা কম বলাই ভালো । তবে ইহ জাগতিক নৈতিকতা যা উনি চর্চা করে গেছেন তা উল্লেখ করলে খুব বেশি অনৈতিক হবে না ।
তিনি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক অর্থাৎ জাতির সবচেয়ে বড় বিবেক । অথচ গত ১১ বছর দেশে যে অনিয়ম , লুটপাট , ভোটচুরি , হত্যা , খুন , গুম সংঘটিত হয়েছে সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব থেকে গেছেন । বিশ্বের তাবদ মিডিয়া ও মানবাধিকার সংগঠন গুলি এসব নিয়ে সোচ্চার হলেও তিনি এবং তার মুয়াজ্জিনরা সম্পূর্ণ নীরব থেকেছেন ।
তিনি তার সকল মুয়াজ্জিন সহ সকল অনিয়ম ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে নিরব থেকে গেছেন শুধু এই সাংস্কৃতিক নৈকট্যের কারণেই ।
যে করোনায় তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন সেটা ছড়াতেও এই সরকারের কুব্যবস্থাপনা , অদক্ষতা , বাকস্বাধীনতা হরণ ও
দুর্নীতি দায়ী - এটুকু বলার সুযোগও তার হয় নি ! এগুলির বিরুদ্ধে সময় মত প্রতিবাদ করলে হয়তোবা তাকে এই ভাবে মরতে হতো না !
জানি না , এই হুঁশ বাদবাকিদের এখনও হবে কি না !
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন