আবদূন নূর তুষার
বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে, বাক স্বাধীনতা ও চিন্তার স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার বলা হয়েছে। ৩৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে-
“৩৯। (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল।(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং
(খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার
নিশ্চয়তা দান করা হইল ”
বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় একটি পত্র জারী করেছে। সেখানে তারা কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি না নিয়ে তাদের কর্মীদের গণমাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে বারণ করেছেন।
শুধু তাই না টক শোতে গিয়ে সরকার ও প্রতিষ্ঠানের “ভাবমূর্তি” ক্ষুন্ন হয় এমন কথা না বলতে অনুরোধ করেছেন।
দ্বিতীয় অংশে ভাবমূর্তি শব্দটি একটি আপেক্ষিক শব্দ। এটাকে কিভাবে পরিমাপ করা হয় তার একটা স্কেল থাকা দরকার।
আপগার স্কোর এর মত একটা স্কেল বা পেইন এর FLACC স্কেল এর মত ... ০ থেকে ১০ পর্যন্ত একটা ভাবমূর্তি স্কেল। যেটাতে ৭ এর বেশী হলে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে করা হবে।
তাহলেই কেবল বিচারটা সবজায়গায় সমান হতো।
আমার কেবল প্রথম অংশটা নিয়ে একটা প্রশ্ন আছে।
একজন স্বাস্থ্যসেবার শিক্ষক বা উচ্চ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মচারী , যিনি জ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার শ্রেষ্ঠতম স্থান বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন, তিনি স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কথা বলার আগে অনুমতি নেবেন?
যিনি অনুমতি দেবেন তিনি কার কাছ থেকে অনুমতি নেবেন?
যিনি অনুমতি দেবেন তিনি কি করে নিশ্চিত হবেন যে যাকে অনুমতি দেয়া হয়েছে তিনি কি বলবেন?
তিনি কি অনুমতিপ্রার্থীর লিখিত বক্তব্য পরীক্ষা করে তারপর অনুমতি দেবেন নাকি কেবল তার অনুগতদের অনুমতি দেবেন?
স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ে দেশের শ্রেষ্ঠতম স্থানের শিক্ষককে কথা বলার আগে অনুমতি নিতে হবে আর বিনা অনুমতিতে যে কেউ এসে জানালা দিয়ে রোগী দেখা, ইথানল এর ভাপ নেয়া, ডিম থেকে ভাইরাস ছড়ানো, ইত্যাকার বক্তব্য দিতে পারবেন?
স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কথা বলবে কে তাহলে?
শাহবাগের ফুল বিক্রেতা?
অবশ্যই বলবে। ফুল বিক্রেতারও অধিকার আছে এটা বলার।
স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে বলার অধিকার শুধু নয়, যে কোন সেবা বিষয়ে বলার অধিকার যে কোন নাগরিককে দিয়েছে বাংলাদেশের সংবিধান। কেবল সেটা জ্ঞাননির্ভর ও সত্য হতে হবে।
করোনাকাল আসল মুখোশ বাইরে পরিয়ে ভেতরের মুখোশগুলি খুলে দিচ্ছে
আমাদের নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দানবগুলি প্রকাশিত হচ্ছে। [ফেসবুক স্ট্যাটাস]
লেখক: চিকিৎসক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন