বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি জাপানের অ্যাভিগান এর পেটেণ্ট নিয়ে তৈরি ফ্যাভিপিরাভির ওষুধটি গত ৪ এপ্রিল জমা দিলেও এখনো অনুমোদন পায়নি। পরীক্ষা নীরিক্ষা চলছে। বীকন ফার্মার মালিক এবাদুল করিম সাহেব আওয়ামী লীগের এমপি। বেক্সিমকো একই ওষুধ তৈরি করেছে যা এখনো অনুমোদন পায়নি বলে শুনেছি। পরীক্ষাগারে প্রক্রিয়াধীন আছে। অথচ জাপানের অ্যাভিগান করোনা রোগীদের উপর প্রয়োগ করে চীন এবং জাপান ভাল ফলাফল পেয়েছে বলে বিশ্ব মিডিয়ায় খবর আছে। কিন্তু যথাযথভাবে পরীক্ষা করে নিশ্চিত না হয়ে অনুমোদন দিচ্ছেনা ওষুধ প্রশাসন যদিও করোনা রোগের চিকিৎসার কোন ওষুধ নেই। এটা নিয়ে সংবাদ মাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো মাথাব্যাথা নাই। কারণ এখানে রাজনীতি নেই। অথচ গণস্বাস্থ্যের টেস্টিং কিট পরীক্ষার জন্য জমা না দিয়ে সভা আহ্বান করে সরকারকে তা গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে অপেক্ষা করা, সরকারের প্রতিনিধি না আসায় বিষোদগার করার মধ্যে অন্য কিছু আছে কিনা তা দেখা দরকার।
গণস্বাস্থ্যের না জানার কথা না কোন প্রোডাক্ট কিভাবে অনুমোদন নিতে হয়, কোন প্রক্রিয়ায় পরীক্ষাগারে জমা দিতে হয়। টেস্টিং কিট জীবন রক্ষাকারী ওষুধ নয়, রোগ নির্ণয়ের উপাদান মাত্র। টেস্টিং কিটের অভাবে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না, এমন কোন সংবাদও দেখছি না। সরকার বলছে পর্যাপ্ত কিট আছে। গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিনামূল্যে দেয়া চীন থেকে আমদানিকৃত ৩০ হাজার কিটও সঠিকভাবে মানসম্মত না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি বলে পত্রিকান্তরে জানতে পেরেছি। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখলাম চীন থেকে আমদানি করা ১০ লাখ কিট পরীক্ষা করে মানসম্পন্ন না পাওয়ায় কানাডা সরকার তা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। গণস্বাস্থ্যের বিজ্ঞানী বিজন শীলের বক্তব্যও পড়লাম। তিনি বলেছেন, তিনি ডাক্তার জাফরউল্লাহর ঘুষ প্রদানের বিষয়সহ কিছু বক্তব্যের সাথে একমত নন যদিও তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর পাশে ছিলেন। তিনি বলেছেন ওষুধ প্রশাসন ডিজির ইঙ্গিত পেয়েছেন এবং কোন পরীক্ষাগারে জমা দিবেন তা ওনাদের ২৭ এপ্রিল জানানো হবে। তা বিএসএমএমইউ পরীক্ষাগারে হতে পারে বলেও জানিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন সরকার এভাবে পরীক্ষার জন্য উৎপাদিত প্রোডাক্ট সংগ্রহ করে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্দেশমত নির্দিষ্ট পরীক্ষাগারে পাঠাতে হয়। তাহলে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য ভবনে পশরা সাজিয়ে অপেক্ষা করা কি সরকারের বিরুদ্ধে ব্লেইম গেম খেলার পটভূমি সৃষ্টির লক্ষ থেকে করা হয়েছে?
স্বাস্থ্য বিভাগ ‘ধোয়া তুলশি পাতা’তা কেউ দাবি করে না। আমিও না। কিন্তু এক্ষেত্রে? যেখানে সব সভা সমাবেশ সেমিনার সিম্পোজিয়াম করোনা উপলক্ষে সরকার বেআইনি ঘোষণা করেছে, সেখানে জাফরউল্লাহ সাহেবের ডাকা তেমন একটি টেস্টিং কিট পরীক্ষার আগে হস্তান্তরমূলক সভায় না যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ঘুষ নেয়ার অগ্রিম অভিযোগও গ্রহণযোগ্য নয়। অননুমিত কিট সংগ্রহ করার মত অনুষ্ঠানে গিয়ে নষ্ট করার মত সময় কি স্বাস্থ্য বিভাগের আছে? কিন্তু আমরা আম জনতা বুঝে না বুঝে যেভাবে হইচই করেছি, সরকারকে গালমন্দ করেছি, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছি যথাযথ ভাবে পরীক্ষা এবং অনুমোদন ছাড়া টেস্টিং কিট প্রয়োগ করে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা সরকারকে কি ভাষায় সমালোচলনা ও গালমন্দ করতাম। প্রধানমন্ত্রী ডেকে যে কাজে বিজন শীলকে কিট উৎপাদনে উৎসাহ যুগিয়েছেন বলে পত্রিকায় দেখেছি সেক্ষেত্রে এটা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করা উচিত হয়নি বলে মনে করি। বৈশ্বিক মহামারির এ সময় রাজনীতির সময় নয়। আশা করবো এ বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টিকারী জাফরউল্লাহ সাহেব নিজেই সবকিছু যথাযথভাবে উপস্থাপন করে বিতর্কের অবসান ঘটাবেন।
গণস্বাস্থ্যের কীট উৎপাদনের সংবাদে সমগ্র জাতি যেভাবে উৎফুল্ল হয়েছিলেন আমরা চাই যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে এ কিট ব্যবহার উপযোগী প্রমাণ হয়ে এ অন্ধকারের মধ্যে আলোর দিশারী হোক। আর বীকন ফার্মা এবং বেক্সিমকোর জীবনরক্ষাকারী ফ্যাভিপিরাভির (অ্যাভিগান) যেন পরীক্ষায় সফল হয়ে করোনার চিকিৎসায় আলোকবর্তিকা হয়।
লেখক: আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন