ফারদীন ফেরদৌস
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি নন শুধু, আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির শরীর থেকেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই রোগে মৃত ব্যক্তিকে পরিষ্কার করা বা ধোয়া যাবে না, নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ছাড়া ছোঁয়াও যাবে না।
করোনা রোগে মৃত ব্যক্তির দাফন বা সৎকারসংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনায় এমন সতর্কতার কথা বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) প্রটোকল অনুযায়ী নির্দেশনাটি তৈরি করা হয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা, কারখানার চাকা চলবে: মন্নুজান সুফিয়ান
করোনা নিয়ে ৩৫ সেকেন্ডের গুজব ছড়ানো চিকিৎসক যুবদল নেতা
দেশের সব হাসপাতালে দর্শনার্থী নিষিদ্ধ
ইসলামী পুরাণ অনুযায়ী মৃতদেহের প্রতিও কর্তব্য আছে। গোসল, কাফনের কাপড়ে সজ্জিত করা, প্রার্থনার মাধ্যমে শেষ সম্মান জানানো। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে কবরস্ত করা। বিশ্বের সব ধর্মেই এমন রিচুয়ালগুলো পালন করা হয়।
যে মানুষটি চিরতরে চলে যায় তার প্রতি এমনতর গোছানো সম্মান জানানো হাজার বছরের মানবীয় ভব্যতা।
বিশ্বে কীর্তিমান কেউ মারা গেলে তার শবদেহের কফিন কাঁধে নিয়ে শোক শোভাযাত্রা কিংবা বাংলাদেশে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। করোনা আক্রান্তের জন্য এসব এখন কীভাবে আর হবে।
বাঙালির কিছু নিজস্ব কৃত্যও আছে। মৃতের বাড়ি দলবেঁধে যাওয়া, একে একে মুখ খুলে শেষ দেখা আর স্বজনদের শোকস্তব্ধ বিলাপ। চারদিন অথবা চল্লিশ দিন পর গরুর গোশত ও চিনিপাতা দই সহযোগে বিশাল খানাখাদ্যির আয়োজন, মৃতের বিষন্ন পরিবারকে স্বাভাবিক করবার প্রয়াস, খোদার সমীপে প্রার্থনা। নাহ, এসবের কিচ্ছু হবে না।
ভাবা যায়, একটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস আমার জন্মগত ধর্মবোধ, সামাজিক মূল্যবোধ আর ব্যক্তিগত আবেগ অভিলাষ সবটাই নিয়ন্ত্রিত করে দিচ্ছে।
১৪ শ' বছরে কত যুদ্ধ বিগ্রহ গেছে, মহামারীও কম হয়নি।
এর আগে কোনোদিন মুসলমানের ধর্মতীর্থ কাবাঘর, মসজিদে নববী কিংবা মসজিদুল হারাম বন্ধ হয়নি।
বন্দ হয়নি ভ্যাটিকান বা জগন্নাথ মন্দির আজ সবখানে খা খা প্রান্তর। কোথাও মানুষ নাই।
একটা আণুবিক্ষণিক ভাইরাস সবাইকে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনের নির্বাসন দণ্ড দিয়ে দিয়েছে। সব মানা যায়, ভাইরাসের কামড়ে মরবার পার্টটা কিছুতেই নেয়া যায় না।
এতদিন ধরে সোহাগে, আদরে, ভালোবাসায় যাকে আগলে রেখেছি, চোখহারা করিনি, সেই মৃত স্বজনকে শেষবারের মতো ধরতে পারবো না আমি, দেখতে পারবো না, কবরেও নামাতে পারবো না।
করোনা যদি ভালোবাসে আমায়, আমার প্রাণাস্পদ প্রিয়তমাও আমাকে আর ছুঁতে পারবে, চোখের দেখা দেখতে পারবে না।
আহারে জীবন, আহা জীবন
চোখে সমুদ্রের জল আর হৃদয়ে রক্তনদীর ঢল আমরা কি এমন কারুণ্যের জীবন চাইতে পারি
প্লিজ ঘরে থাকি ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলি
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন