কামরুল হাসান মামুন
৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ডেমু ট্রেন কিনেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। ৬ বছরে এ থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ২০ কোটি টাকা। মেরামত খরচ ২৭ কোটি টাকা। বর্তমানে ১৩ সেট অকেজো। বাকি ৭ সেট বেঁচে আছে কোনো মতে। টাকা কি গাঁঙে দিয়ে ভাইস্যা আসে? এইসব আমাদের ট্যাক্সের টাকা। অথচ পানির দাম, বিদ্যুতের দাম দুইদিন পরপর বাড়ছে!
কোনও বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি অথচ গত ১০ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলো প্রায় ৫১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছে। এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে সামিট গ্রুপ লাভবান হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই লাভ দিয়ে তারা এখন সিঙ্গাপুরের জায়ান্ট কোম্পানি। অর্থাৎ সিঙ্গাপুরের মতো ধনী দেশে তারা এখন সেরা ধনী। এইরকম টাকা আত্মসাৎ নিয়ে ভবিষ্যতে যেন কোনও প্রশ্ন করা না যায় তার জন্য ২০১০ সালেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে বিশেষ আইন করে দায়মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুতরাং প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হলেও লুটপাটকারী ও এইসব কোম্পানির মালিক আইনিভাবেই দায়মুক্ত। এইভাবেই এরা ফুলে ফেঁপে উঠে বিদেশে বিনিয়োগ করে কিংবা বিদেশে পাচার করে আগামী চৌদ্দগুষ্টির সুখের জীবন নিশ্চিত করেছে।
আর এই দিকে শিক্ষায় জিডিপির বাজেট বরাদ্দ মাত্র ২% এর আশেপাশে। যেখানে ইউনেস্কো বলছে ন্যূনতম জিডিপির ৬% বরাদ্দ দিতে। শিক্ষাবিহীন জাতি যে চোর গুন্ডা বদমায়েশ দুর্নীতিবাজ হবে তাতো চোখের সামনেই প্রতীয়মান। চুরি করার জন্য টাকার অভাব নাই। কিন্তু শিক্ষায় টাকা বরাদ্দের সময় অভাবের সীমা নাই। সরকারি কর্মকর্তাদের অযথা বিদেশে পাঠাতে টাকার অভাব নাই। অপেক্ষাকৃত অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে টাকার অভাব নাই কারণ এইসবে টাকা মারার অফুরন্ত সুযোগ।
বাংলাদেশ কেন দক্ষ লোকবল তৈরি করতে পারছে না? কারণ জিডিপির ২% বরাদ্দ দিয়ে এটা সম্ভব না। এই পরিমান বরাদ্দ দিয়ে আমরা কেবল কাজের লোক আর কাজের বুয়া বিদেশে পাঠাতে পারব। আর দেশে আনব দক্ষ লোকবল বা কর্মী। ১০০ জন কাজের লোক আর কাজের বুয়া বিদেশ থেকে যেই টাকা পাঠাবে একজন দক্ষ বিদেশী কর্মীই তার চেয়ে বেশি টাকা আমাদের দেশ থেকে নিয়ে যাবে এবং যাচ্ছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে অনেক কোম্পানিতেই এখন এইরকম দক্ষ বিদেশী কর্মী কাজ করে। অন্যদিকে আমার দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে যত স্বল্প মেধাবিই তৈরি করছি না কেন তারা দেশের খারাপ পরিবেশ দেখে বিদেশে চলে যাচ্ছে। তাদের ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগও নাই। তাই এই দেশের হয়ত টাকা বাড়ছে কারণ কর্মক্ষম যুবকের সংখ্যা পৃথিবীর অন্য যেকোন দেশ থেকে বেশি কিন্তু দেশটি কখনো সুন্দর ও উন্নতমানের হবে না। উন্নত হওয়া আর উন্নত মানের হওয়ার মধ্যে ফারাক আছে।
দক্ষ লোকবল বা কর্মী তৈরি করতে হলে জার্মানির মত টেকনিকাল স্কুলের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। সেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষক দিতে হবে। ওভারঅল সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ ও ভালো বেতন না দিলে এই দেশের শিক্ষার মান ভালো হবে না, হবে না, হবে না। অথচ বিদেশী নিয়োগে আমাদের আপত্তি নেই কিন্তু বিদেশী শিক্ষক নিয়োগে আমাদের চরম আপত্তি। বলদামি আর কাকে বলে।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন