কদরুদ্দীন শিশির
জাগোনিউজ নামের অনলাইন নিউজ পোর্টালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট)। শিরোনাম, "মাইকেল জ্যাকসনের আইনজীবী মার্ক সাফারের ইসলাম গ্রহণ"।
লিংক: https://www.jagonews24.com/religion/news/521730
স্ক্রিনশট দেখুন--
শিরোনাম দেখে স্বাভাবিকভাবেই পাঠক মনে করবেন, এটি 'ইমিডিয়েট' ঘটনা। মানে, খুবই সাম্প্রতিক ঘটেছে এই ঘটনা। চলুন দেখা যাক জাগোনিউজের প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে--
প্রতিবেদনের প্রথম দুটি প্যারা হলো--
"ধনকুবের মার্ক সাফার। পেশায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন আইনজীবি। বিখ্যাত পপ সঙ্গীত তারকা প্রয়াত মাইকেল জ্যাকসনের আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সৌদি আরব ভ্রমণে গিয়ে ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হয়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসের অধিবাসী মার্ক সাফার। তিনি ২০০৯ সালে সৌদি আরবে এক সংক্ষিপ্ত সফরে আসেন। ১০ দিনের এ সংক্ষিপ্ত সফরে তার গাইড ছিলেন দাবি বিন নাসির। যিনি সৌদি গণমাধ্যম ‘সৌদি গেজেট’-এর কাছে মার্ক সাফারের ইসলাম গ্রহণের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।"
এ পর্যন্ত পড়ে বুঝার উপায় নেই যে, "মার্ক সাফার" কি ২০০৯ সালেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, নাকি সম্প্রতি করেছেন? নাকি তিনি ২০০৯ সালে ইসলাম গ্রহণ করলেও গাইড ২০১৯-এ এসে 'সৌদি গেজেট'কে সাক্ষাৎকার দিয়ে বিষয়টি জানালেন।
রিপোর্টটি দীর্ঘ হওয়ায় এখানে পুরোটা তুলে দেয়ার সুযোগ নেই। তবে পুরোটা পড়ে যা বুঝা যায় যে, ১০ দিনের সৌদি সফরের মধ্যেই কথিত "মাইক সাফার" ইসলাম গ্রহণ করে আবার নিজ দেশ আমেরিকায় ফিরে যান। কিন্তু রিপোর্টের কোথাও নেই যে, সাফারের গাইড কবে সাক্ষাৎকার দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন 'সৌদি গেজেট'কে।
সংবাদটির উৎস কী, এবং ঘটনাটা সম্পর্কে আরও জানতে প্রথমে জাগোনিউজের শিরোনামটি দিয়ে গুগল সার্চ করি। তখন অন্য একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম আসে।
দৈনিক কালের কণ্ঠের অনলাইনে সেটি প্রকাশিত হয়েছে আরও দুই দিন আগে (২০ আগস্ট, ২০১৯)। "নওমুসলিমের কথা: যেভাবে মুসলিম হন মাইকেল জ্যাকসনের আইনজীবী"।
লিংক: https://www.kalerkantho.com/online/Islamic-lifestylie/2019/08/20/804976
স্ক্রিনশট দেখুন:
কালের কণ্ঠের শিরোনামটি ফিচারাইজড। অর্থাৎ, জাগোনিউজের মতো শিরোনামের মধ্যে 'ইমিডিয়েসি' নেই। কালের কণ্ঠের শিরোনাম দেখেই বুঝা যায় যে, এটি সাম্প্রতিক ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং আগের কোনো জানা ঘটনার বিবরণ দেয়া হচ্ছে।
কালের কণ্ঠের ফিচার রিপোর্টের শুরুতে একটি 'টীকা' দেয়া হয়েছে লাল বর্ণে। নিচে এটি হুবহু তুলে ধরা হলো--
"মার্ক সাফার একজন আমেরিকান আইনজীবী ও ধনকুবের। লস আঞ্জেলেসের অধিবাসী এই আইনজীবী বিখ্যাত পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসনের পক্ষে আইনি লড়াই করে আলোচনায় আসেন। মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগেও মার্ক সাফার আদালতে তাঁর পক্ষে ওকালতি করেন। ২০০৯ সালে মার্ক সৌদি আরব ছুটি কাটাতে আসেন। ১০ দিনের সংক্ষিপ্ত সফরে ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। মার্ক সাফারের ভ্রমণ-নির্দেশক ‘দাবি বিন নাসির’ সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম ‘সৌদি গেজেটে’র কাছে তাঁর ইসলাম গ্রহণের বর্ণনা দেন।"
খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, জাগোনিউজে প্রকাশিত ২ দিন পরের রিপোর্টের প্রথম দুই প্যারা আর কালের কণ্ঠের 'টীকা' প্রায় একই। কোনো বাক্য বা শব্দ আগপিছ করা, বা ইংরেজি শব্দকে বাংলা করে দেয়া, বা কোনো বাক্য একটু নতুন করে সাজানো। কিন্তু সার্বিক বক্তব্য একই।
দুটি রিপোর্ট মিলিয়ে পড়ে দেখা গেছে, দুটির পুরো লেখাই এরকম সাদৃশ্যপূর্ণ। অর্থাৎ, জাগোনিউজ কালের কণ্ঠ থেকে কপি করেছে। এখানে কপি করার বিষয়টি প্রামাণ্যভাবে তুলে ধরছি না সংক্ষেপ করার স্বার্থে। প্রয়োজনে পরে এটা বিস্তারিত দেখানো যেতে পারে।
কালের কণ্ঠের ফিচার পড়েও এটা বুঝা যায়, ১০ দিনের সৌদি সফরের মধ্যেই কথিত "মাইক সাফার" ইসলাম গ্রহণ করে আবার নিজ দেশ আমেরিকায় ফিরে যান। কিন্তু এই রিপোর্টেরও কোথাও এই কথার উল্লেখ নেই যে, সাফারের গাইড কবে সাক্ষাৎকার দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন 'সৌদি গেজেট'কে।
এখানে উল্লেখ্য, কালের কণ্ঠ তাদের রিপোর্টের শেষে অনুবাদকের নাম দিয়েছে। রিপোর্টের শুরুতে গুরুত্বসহকারে 'টীকা' দেয়া এবং শেষে "ভাষান্তর: আতাউর রহমান খসরু" লেখা থেকে বুঝা যায়, এটি কালের কণ্ঠের নিজস্ব স্টাফ দিয়ে করানো অনুবাদ।
এবার বের করার পালা সৌদি গেজেটর রিপোর্টটি, যেখানে সাফারের গাইড পত্রিকাটিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
গুগল সার্চ করে পাওয়া গেলো সৌদি গেজেটের রিপোর্টের সন্ধান। শিরোনাম, "Journey to Islam"।
লিংক: http://saudigazette.com.sa/article/531023/Life/Faith/Journey-to-Islam
২২ মার্চ ২০১৮ সালে প্রকাশিত এই রিপোর্টের শুরুর দুটি প্যারা হল--
"Mark Shaffer, an American attorney and millionaire has declared his Islam in Saudi Arabia on Saturday, 17th October 2009. Mark was at that time on a holiday in Saudi Arabia to visit some famous cities like Riyadh, Abha, and Jeddah for 10 days.
Mark is a well-known millionaire and also a practiced lawyer in Los Angeles, specializing in cases of civil laws. The last big case he handled was the case of the famous American pop singer, Michael Jackson, a week before he passed away."
এখানে প্রথম বাক্যেই মাইক সাফারের ইসলাম গ্রহণের সময়কাল ১৭ অক্টোবর ২০০৯ বলা হলেও কালের কণ্ঠ তাদের রিপোর্টের কোথাও সরাসরি এই তথ্য জানায়নি। পুরো রিপোর্ট পড়ে শেষের দিকে গিয়ে অনুমান করা যায় এটি ২০০৯ সালে ঘটেছিল। আর জাগোনিউজ তো এমনভাবে শিরোনাম করেছে যেন, এটি সদ্য কোনো ঘটনা।
সৌদি গেজেট তাদের এই রিপোর্টের একদম শেষে লিখেছে "— Courtesy of Discovering Islam".
দেখুন স্ক্রিনশট--
অর্থাৎ, এটি সৌদি গেজেটের নিজস্ব কোনো রিপোর্ট নয়। কালের কণ্ঠ এবং জাগোনিউজ তাদের রিপোর্টে যে তথ্য দিয়েছে যে, মাইক সাফারের ভ্রমণ গাইড "সৌদি গেজেটে’র কাছে তাঁর (সাফারের) ইসলাম গ্রহণের বর্ণনা দেন"-- এই তথ্য মিথ্যা।
এবার দেখা দরকার Discovering Islam খবরটি কোথা থেকে পেয়েছে, নাকি তাদের নিজস্ব রিপোর্ট এটি?
"Mark Shaffer" শিরোনামে Discovering Islam তাদের ওয়েবসাইটে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেটিই হুবহু সৌদি গেজেট প্রকাশ করে।
লিংক: http://www.discoveringislam.org/mark_shaffer.htm
উপরে যেহেতু এই রিপোর্টের প্রথম দুটি প্যারা (সৌদি গেজেট থেকে) হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে, তাই এখন শেষের ৩টি প্যারা Discovering Islam থেকে হুবহু তুলে দেয়া হচ্ছে।
"Regarding his next step after his conversion to Islam, Mark explained: I will learn more about Islam, I will delve deeper into this religion of Allah (Islam) and come back to Saudi Arabia to perform the Hajj.
As to what impelled him into converting to Islam, Mark explained: I have already had information about Islam, but it was very limited. When I visited Saudi Arabia and personally witnessed the Muslims there, and saw how they performed the solat, I felt a very strong drive to know more about Islam. When I read true information about Islam, I became confident that Islam is a religion of haq (truth).
Sunday morning, 18th October 2009, Mark left the Airport of King Abdul Aziz Jeddah heading for America. When filling in the immigration form before leaving Jeddah, Mark wrote ISLAM as his religion."
Discovering Islam এর রিপোর্টে কিন্তু উল্লেখ নেই তারা কোথা থেকে পেয়েছে। একারণে আপাতত ধরে নেয়া যেতে পারে এটি তাদের 'মৌলিক' কন্টেন্ট।
এবার একটু যাচাই করার পালা, Discovering Islam আসলে কেমন ওয়েবসাইট, কতটা নির্ভর করা যায় তাদের ওপর। তাদের সম্পর্কে জানতে প্রথম সাহায্য নেয়া যাক তাদের ওয়েবসাইটেরই। নিজেদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু নেই সাইটটিতে। যেমনটা নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সাইটে থাকে About Us সেকশন, তেমনটা এটিতে নেই।
http://www.discoveringislam.org/contact_us.htm
'Contact us' নামে একটি ট্যাব আছে, সেটিতে গিয়ে দেখা গেল তাদেরকে 'ইমেইল পাঠানোর নীতিমালা' লিখে দেয়া আছে। তাতে বেশ লম্বা বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, তারা ইমেইলে কোনো প্রশ্ন করাকে নিরুৎসাহিত করেন। প্রশ্ন করা হলে উত্তর দেন না। এর একটি কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, "(d) Most people who ask lots of questions tend to be Christian Missionaries who not interested in Islam. They just want to engage in back and forth discussions and debates. We are not interested in engaging in such futile debates, especially by email."
কী ধরনের ইমেইল পাঠকদের কাছ থেকে আশা করেন তার বর্ণনাও আছে। লেখা আছে, "However, we appreciate positive comments and we certainly would like to hear the stories of people who convert (or revert) to Islam. For such individuals, we will reply (God Willing) and ask your permission to publish your story on our site."
অর্থাৎ, ওয়েবসাইটটি যারা পরিচালনা করেন তারা শুধু 'ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক বক্তব্য আর কে কোথাও মুসলমান হলো' এসব খবর শুনতে চান। এ থেকে তাদের একপেশে মনোভাব স্পষ্ট। এ ধরনের ব্যক্তিদেরকে কোনো তথ্যে একমাত্র উৎস হিসেবে গ্রহণ করা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাপ্ত তথ্য নিজেদের পছন্দ মতো হলে সেটি যাচাই বাছাই না করেই প্রকাশের প্রবণতা এদের মধ্যে থাকা খুবই স্বাভাবিক।
ফলে আবারও গুগলের সহায়তা নেয়া প্রয়োজন। অন্য কোনো সূত্রে Discovering Islam এর প্রকাশের তারিখের আগে এটি প্রকাশিত হয়েছিল কিনা?
Discovering Islam এ এই নিবন্ধটি প্রকাশের কোনো তারিখ দেয়া নেই। তবে গুগলের এডভান্স সার্চ প্রযুক্তির সহায়তায় বের করা সম্ভব হয়েছে, "Mark Shaffer" শিরোনামের নিবন্ধটি Discovering Islam ২০০৯ সালের ১৩ নভেম্বর প্রকাশ করে।
দেখুন স্ক্রিনশট--
কিন্তু ইন্দোনেশিয়ান একটি ওয়েবসাইটে তারও কয়েক দিন আগে (৫ নভেম্বর ২০০৯) এই একই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। eramuslim.com নামে ওয়েবসাইটটিতে ইন্দোনেশিয়ান ভাষা প্রকাশিত শিরোনাম হলো, "Milyuner AS Yang Juga Pengacara Michael Jackson Masuk Islam"
স্ক্রিনশট দেখুন--
গুগলে এর ইংরেজি অনুবাদ দাঁড়ায়, "US Millionaire Also Lawyer Michael Jackson converted to Islam"। অনুবাদে ভুলভাবে Lawyer Michael Jackson এলেও গুগলেরই অনুবাদে ভেতরে বলা হয়েছে, "Lawyer of Michael Jackson".
https://www.eramuslim.com/dakwah-mancanegara/pengacara-miliyuner-amerika-mark-shaffer-masuk-islam-di-saudi-arabia.htm
Discovering Islam এর নিবন্ধের সাথে eramuslim.com এর নিবন্ধের বেশ মিলে রয়েছে। তবে eramuslim.com এর নিবন্ধটি আরও বিস্তারিত। এবং এতে "মার্ক সাফার" এর বক্তব্যের সূত্র হিসেবে এক জায়গায় সৌদি ভিত্তিক Al-Riyadh newspaper এর কথা বলা হয়েছে। নিচে eramuslim.com এর নিবন্ধের প্রথম ২ প্যারা এবং শেষের তিন প্যারা (ইন্দোনেশিয়ান ভাষা থেকে গুগল অনুবাদে ইংরেজি) তুলে দেয়া হল--
"An American billionaire, Mark Shaffer declared his Islam in Saudi Arabia on Saturday, October 17, 2009 ago. At that time Mark was traveling to Saudi Arabia to visit several famous cities such as Riyadh, Abha and Jeddah for 10 days.
Mark is a well-known millionaire and veteran lawyer in Los Angeles, United States, especially related to civil law. The last big case he handled was related to the famous American pop singer Michel Jackson a week before he died."
শেষের তিন প্যারা--
"Regarding Mark's visit to the Haram Mosque, Ustazd Muhammad Turkistani told: after Mark obtained a temporary Islamic certificate, we immediately went to the glorious Haram Mosque. When he watched the Haram Mosque, his face was very bright and radiated great excitement. When we entered the Haram Mosque and witnessed the Kaaba first hand, his excitement was increasing. By God, I cannot verbally express this view. After buying tawaf around the glorious Kaaba, we prayed sunnah and then left the Haram Mosque. I see Mark is very difficult to part with the Haram Mosque.
After Mark announced his Islam, he briefly expressed his happiness in the Al-Riyadh newspaper, saying: I cannot express my feelings at this time. However, now I am just born again and my life has just begun ... Then he added: I am very happy. The happiness that I feel cannot express to you when I visited the Haram Mosque and the glorious Kaaba.
Regarding the question of the way forward after he converted to Islam, Mark explained: I will learn more about Islam, will explore this religion of Allah (Islam) and will return again to Saudi Arabia to perform the Hajj."
আল রিয়াদ পত্রিকাটি আরবী ভাষার। ফলে সেটি থেকে খুঁজে মূল রির্পোটি বের করা সম্ভব হয়নি। ফলে mark shaffer রহস্যের গোড়ায় পৌঁছা সম্ভব হচ্ছে না।
এবার একটু ভিন্নভাবে খুঁজে দেখার চেষ্টা করা যাক। ইন্দোনেশিয়ান ওয়েবসাইট এবং Discovering Islam এ ইসলাম গ্রহণকারীর যে পরিচয় দেয়া হয়েছে তা হলো--
--mark shaffer
--মাইকেল জ্যাকসনের আইনজীবী, জ্যাকসনের মৃত্যুর আগের সপ্তাহ পর্যন্ত তার পক্ষে আইনি লড়াই করেছেন।
--তিনি একজন নামকরা আমেরিকান আইনজীবী, যিনি লস এঞ্জেলেসে থাকতেন বা থাকেন।
-- তিনি একজন মিলিয়নেয়ার।
গুগলে "Lawyer mark shaffer", "attorney mark shaffer", "michael jackson attorney mark shaffer", "Millionaire mark shaffer",
"mark shaffer michael jackson" ইত্যাদি নানান কীওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে কথিত "মার্ক সাফার" বা "মার্ক শেফার" এর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
mark shaffer নামে একজন খ্যাতিমান ঘোড়দৌড়বিদ mark shaffer এর সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু মার্কিন আইনজীবী mark shaffer, বা লস এঞ্জেলেসে থাকা মার্কিন আইনজীবী mark shaffer, বা মাইকেল জ্যাকসনের আইনজীবী mark shaffer এরকম কারো সন্ধান দিতে পারেনি গুগল।
"mark shaffer michael jackson" লিখে সার্চ দিলে কাছাকাছি নাম হওয়ায় Marc Schaffel নামে একজনের সন্ধান আসে। তিনি অবশ্য জ্যাকসনের আইনজীবী নন। বরং জ্যাকসনের এক ব্যবসায়িক অংশীদার যিনি মৃত্যুর আগে জ্যাকসনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে মামলা করেছিলেন। এ সংক্রান্ত আরো জানতে পারেন এই লিংকে: http://www.metnews.com/articles/2009/jack022409.htm
উপরে উল্লিখিত পত্রিকাগুলোতে mark shaffer বলে যে ব্যক্তির ছবি যুক্ত করা হয়েছে সেই ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে উপরিউক্ত ওয়েবসাইটগুলোর বাইরে কয়েকটি ব্লগে এবং ইসলাম বিষয় ওয়েবসাইটেই শুধু ছবিটি পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো ছবিটি আছে asahannews.wordpress.com নামক এক ব্লগে Nov 15, 2009 তারিখে।
ইসলাম গ্রহণের আলোচ্য গল্পটির বাইরে অন্য কোথাও "আমেরিকান মিলিয়নেয়ার, জ্যাকসনের আইনজীবী" ইত্যাদি পরিচয় এই ব্যক্তির ছবি পাওয়া যায় না।
সারকথা:
অনলাইনে দীর্ঘ ঘাটাঘাটির পর এই খবরটির মূল সূত্র চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি ভাষাগত সীমাবদ্ধতার কারণে। ফলে, এটিকে এককথায় 'ভুয়া' বা 'সঠিক' বলে রায় দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অনুসন্ধান থেকে কালের কণ্ঠের এবং জাগোনিউজের প্রকাশ করা আলোচ্য খবরের বেশি কিছু অসঙ্গতি স্পষ্ট হয়েছে--
প্রথমত, ঘটনাটি সাম্প্রতিক নয়, যেমনটি জাগোনিউজের শিরোনাম দেখে মনে হতে পারে। এটি ১০ বছর আগের ঘটনা। নতুন করে এটি সংবাদ আকারে প্রচারিত হওয়ার যোগ্য নয়।
দ্বিতীয়ত, কালের কণ্ঠ ফিচার আকারে প্রকাশ করলেও ভুল সূত্রের বরাত দিয়ে 'গুরুত্ব বৃদ্ধি'র চেষ্টা করেছে; যা পাঠককে বিভ্রান্ত করবে।
তৃতীয়ত, আমেরিকা থেকে কেউ একজন ২০০৯ সালে সৌদি সফরে গিয়েছিলেন কিনা, বা গেলেও ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কিনা, বা গ্রহণ করলেও তিনি 'মার্ক সাফার' নামের কেউ কিনা- তা নির্ভর করার মতো কোনো সংবাদমাধ্যম বা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য নয়। ফলে এটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের যোগ্য নয়।
চতুর্থত, 'মার্ক সাফার' নামে কেউ ২০০৯ সালে সৌদিতে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেও তিনি 'মাইকেল জ্যাকসনের আইনজীবী' নন। তিনি আমেরিকান মিলিয়নেয়ারও নন।
খবরটির মূল সূত্রের সন্ধান না করে তা প্রকাশ করা 'হাওয়া থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে সাংবাদিকতা'র নামান্তর।
আরেকটি খবর:
দুই দিন আগের একই ধরনের আরেকটি খবরের প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। জাগোনিউজ ২০ আগস্ট ওই খবরটি প্রকাশ করেছে "রাষ্ট্রীয় সুবিধা ছাড়াই নিজ খরচে আইভরি কোস্টের রাষ্ট্রপতির হজ পালন" শিরোনামে।
প্রতিবেদনটির শেষের দুটি প্যারা হুবহু তুলে ধরা হচ্ছে--
"আহকামুল হাকিমিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে রাজা-বাদশা কিংবা সাধারণ মানুষের এভাবেই উপস্থিত হওয়াই ঈমানের দাবি। সে দাবি পূরণেই তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা না নিয়ে হজ সম্পন্ন করেছেন।
আল্লাহ তাআলা তার হজকে কবুল করুন। তার সঙ্গীদেরসহ সব মানুষের হজ কবুল করুন। তার হজ পালন থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।"
একটি সংবাদ প্রতিবেদনের শেষে রিপোর্টার দোয়া করেছেন! না, খেয়াল করে দেখুন, রিপোর্টার অন্য কারো মুখ থেকে এই দোয়া বের করাননি, নিজেই করেছেন। সংবাদ প্রতিবেদনে কোনো সাংবাদিক কারো কল্যাণ-অকল্যাণ কামনা করা শুধু সংবাদ-নীতির লঙ্ঘনই নয়, অদ্ভুতও বটে।
এবার শুরুর কয়েকটি প্যারা দেখা যাক--
"আলেসান ওয়াতারা। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট। তিনি এবার হজে গেছেন। হজ পালনকালীন সময়ে রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা ছাড়াই সাধারণ হাজিদের সঙ্গে নিজ খরচে হজ সম্পন্ন করেছেন। এমনকি সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাও তিনি গ্রহণ করেননি।
হজের মূল কাজ আরাফার ময়দানে উপস্থিত হওয়া। আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াসহ হজের রোকনগুলো আদায়ে তিনি সৌদি আরব সরকারের কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেননি। সাধারণ হাজিদের সঙ্গে রাস্তায় ও ময়দানে শুয়ে-বসেই হজ সম্পাদন করেছেন।
ছবিতে দেখা যায়, উন্মুক্ত মরু প্রান্তরে খোলা আকাশের নিচে তার দেশের সাধারণ সঙ্গী ও তার জনগণের সঙ্গে শুয়ে আছেন।"
---
এটিও হাওয়া থেকে পাওয়া:
এ খবরটি কোথা থেকে পাওয়া তার কোনো উল্লেখ নেই জাগোনিউজের রিপোর্টে। এমনকি এটাও উল্লেখ নেই তিনি কবে এমন হজ পালন করেছেন। চলতি বছর, নাকি আগে?
বাংলায় গুগল সার্চে দেখা গেছে, ১৯ আগস্ট প্রথম এটি বাংলা অখ্যাত একটি পোর্টালে প্রকাশ করা হয়। এরপর সেখান থেকেই কপি হয়েছে আরও নানান অখ্যাত পোর্টালে। জাগোনিউজের রিপোর্টের সাথেও আগেরটির অনেকাংশে মিল রয়েছে। তবে কেউই বলেনি কোন সংবাদমাধ্যম থেকে তারা আফ্রিকার এই খবরটি/ছবিটি পেয়েছে, নাকি নিজেদের কোনো রিপোর্টার ঘটনাস্থল থেকে সেগুলো কভার করেছেন। (কিছু বাংলা পোর্টাল অবশ্য লিখেছে চলতি বছরের ঘটনা এটি)।
গুগলে ইংরেজিতে সার্চ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে প্রথমবার হজ করেছিলেন আইভোরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট Alassane Ouattara. তখন তিনি সৌদি বাদশাহের আতিথ্যও গ্রহণ করে প্রাসাদে যান।
লিংক: https://aawsat.com/english/home/article/1370446/king-salman-hosts-annual-reception-heads-state-dignitaries-who-performed-hajj
লিংক: http://saudigazette.com.sa/article/541743
চলতি বছর Alassane Ouattara এর হজ পালনের কোনো খবর কোথাও পাওয়া যায়নি।
আইভোরি কোস্টের প্রেসিডেন্টের হজ পালনের ছবি দাবি করে যে ছবিটি (মাঠে শুয়ে থাকার) বাংলা পোর্টালগুলোর খবরে দেয়া হয়েছে সেটির রিভার্স ইমেজ সার্চের সূত্র ধরে আইভোরি কোস্ট, সেনেগাল ও বুরকিনা ফাসো'র কয়েকটি অনুল্লেখযোগ্য পোর্টালে ফ্রেঞ্চ ভাষায় খবরটি পাওয়া গেছে (২০১৮ সালের আগস্ট মাসের)। এগুলো ওইসব দেশের মুলধারা সংবাদমাধ্যম নয়।
এসব পোর্টালের মাত্র একটি ছাড়া বাকিরা 'ফেসবুকে পাওয়া ছবি ও ভিডিও'র বরাতে খবর প্রকাশ করেছে। প্রকৃতপক্ষে সেগুলো খবর নয়, ছবি আর ভিডিও তুলে দিয়ে একটি ক্যাপশন জুড়ে দিয়েছে মাত্র।
yeclo.com নামে একটি পোর্টাল ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে Alassane Ouattara এর হজ পালন নিয়ে। সেখানে প্রেসিডেন্টের কথিত 'রাস্তায়/মাঠে শুয়ে থাকার ছবিটি প্রকাশ করা হয়নি। বরং ফেসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও প্রকাশ করে সংবাদ পরিবেশন করেছে। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার কারণ ছিল তাতে দেখা যায়, Alassane Ouattara হুইল চেয়ার বসে তার পরিবার ও সরকারি সফরঙ্গীদের সাথে হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন করছেন। তখন আইভোরি কোস্টে প্রেসিডেন্টের শারিরীক অবস্থা না নিয়ে নানান গুঞ্জন চলছিল।
ভিডিওর লিংক: https://www.facebook.com/watch/?v=258564548312405
'হাওয়া থেকে পাওয়া' রিপোর্টে বাংলা পোর্টালগুলো যেসব তথ্য দিয়েছে-- যেমন রাষ্ট্রীয় খরচ/সুবিধা নেয়া ছাড়া হজ পালন, সৌদির রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা প্রত্যাখ্যান, সাধারণ হাজিদের সঙ্গে রাস্তায় ও ময়দানে শুয়ে-বসেই হজ সম্পাদন-- ইত্যাদির উল্টো তথ্য দিচ্ছে আইভোরি কোস্টের yeclo.com পোর্টালটির প্রতিবেদন। সেখানে বলা হয়েছে--
"Alassane Ouattara begins this pilgrimage at the invitation of the King of Saudi Arabia, Salman Ibn Abdelaziz Al Saoud. He should do certain stages of the great hajj, like that of the plain of Mina , day of Dhu-I-Hijja.
Several Ivorian personalities whose trip was financed by the State are among the pilgrims of the Hajj 2018. The head of state is there with several members of his family, including his younger brother, his sisters, the wife of the Prime Minister etc. The Ivorian star Alpha Blondy , who has moved much closer to his "big brother" Alassane Ouattara, in recent months, while his alter ego reggae Tiken Jah Fakoly away; also performs the move."
অর্থাৎ, সৌদি আরব বাদশাহের আমন্ত্রণেই তিনি হজ করতে গিয়েছেন। আমন্ত্রিত হয়ে গিয়ে তিনি 'সৌদি আরবের দেয়া রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ছাড়াই হজ' করেন কিভাবে? সৌদি ভিত্তিক পত্রিকাগুলোর লিংক উপরে দেয়া হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে হজে আমন্ত্রিত অন্যান্য রাষ্ট্রীয় অতিথিদের সাথে তিনিও ছিলেন। ফলে অন্যরা যেসব সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন তিনিও সেগলোই পেয়েছেন।
এছাড়া উপরের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, তিনি আসলে 'সাধারণ হাজিদের সাথে নয়', বরং নিজ পরিবার নিজ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গবেষ্টি হয়ে হজ পালন করেছেন। এবং তিনি অসুস্থ থাকায় তার জন্য হুইল চেয়ারসহ অন্যান্য বিশেষ সুবিধাও ছিল।
রাস্তায় শুয়ে থাকার যে ছবি বাংলা পোর্টালগুলোতে এসেছে সেটিতে দেখা যাওয়া ব্যক্তি চেহারা এতটাই অস্পষ্ট যে তাকে চিহ্নিত করা অসম্ভব প্রায়। ফলে এটি Alassane Ouattara, না কেউ বুঝার উপায় নেই। এবং এই ছবিকে Alassane Ouattara এর হজের ছবি দাবি করে যেসব নিবন্ধ গুগল সার্চে পাওয়া যায়, সেসব নিবন্ধ কোনো নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমের নয়। বরং তার প্রায় সবগুলোই wordpress বা blogspot এ পরিচালিত ব্যক্তিগত কোনো ব্লগ।
মানুষের রিয়েকশন কেমন?
মূলধারার বাংলা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত আলোচ্য রিপোর্ট স্বাভাবিকভাবে প্রচুর মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। এর মধ্যে আবার অনুল্লেখযোগ্য বহু অনলাইন পোর্টাল এসব রিপোর্ট কপি করে নিজেরা প্রকাশ করেছে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছে। নিচে দুটি স্ক্রিনশটে শুধু একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যে, কেমন সংখ্যক মানুষ এসব নিউজে রিয়েকশন দিয়েছেন বা এংগেজড হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন