রাজাকারের প্রকাশিত তালিকা আর তাতে জামায়াত নেতাদের নাম না থাকা নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব উচ্ছসিত নই। কারণ, বিষয়টা আমার জানা। মামলার সময়ে আমরা এই দাবির সপক্ষে অসংখ্য তথ্য ও নথি জমা দিয়েছি।
যে ৩৭ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিচার শুরু হয়েছিল, তাদের মধ্যে জামায়াতের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়া কোনো নেতাই ছিল না। পরবর্তীতে চার ধরনের অপরাধী ছাড়া সবাইকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় নিয়ে আসা হয়। যে চার ধরনের অপরাধী ব্যক্তিদের বিচার হচ্ছিল, তার মধ্যেও জামায়াতের এই নেতাদের কেউ নেই।
আমাদের মামলার একটা ঘটনা বলি। আইও তথা তদন্তকারী কর্মকর্তার জেরা চলছে। এই তদন্তকারী কর্মকর্তাই হলেন মামলার নিউক্লিয়াস। আমাদের আইনজীবী ভীষণ একটা ঝুঁকি নিলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, আপনি বলেন তো, আপনি এই যে এতদিন ধরে তদন্ত করলেন, ৭১ এর কোনো রাজাকার, আলবদর, আল শামস এর তালিকায় জনাব মুজাহিদের নাম পেয়েছেন?
আমরা তো অবাক, আইনজীবী সাহেব এত বড়ো ঝুঁকি নিলেন। আইও নিশ্চয়ই বলবেন, জ্বী পেয়েছি।
কিন্তু হলো তার উল্টো। আইও স্বীকার করলেন, আমি রাজাকার, আলবদর, আল শামস এর কোনো তালিকায় জনাব মুজাহিদের নাম পাইনি।
আমাদের আইনজীবী এবার দ্বিতীয় ঝুঁকি নিলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, বলুন তো, ৭১ পরবর্তী সময়ে শুধু ফরিদপুর নয়, বাংলাদেশের কোনো থানায় জনাব মুজাহিদের বিরুদ্ধে কোনো জিডি বা মামলা দায়ের হয়েছিল- এমন তথ্য পেয়েছিলেন কিনা?
আইও সাহেব কিছুটা সময় চুপ থেকে তারপর বললেন, না তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।
আমরা বললাম আল্লাহু আকবার। আইনজীবী বের হয়ে আমাকে বললেন, কেস তো আমরা জিতে গেলাম রে ব্যাটা। কিন্তু তার আশায় গুড়েবালি। ট্রাইবুনাল ও আপীল বিভাগে একই রায় হয়ে গেল।
আমি যে জেরার কথা বললাম, তা পাবলিক ডকুমেন্ট। কেউ সংগ্রহ করতে চাইলে করতে পারবেন।
এই ঘটনাটি বললাম এ জন্য, কার নাম এলো বা এলো না, তা ব্যাপার না। আসল কথা হলো, জামায়াত নেতাদের নাম রাজাকারের তালিকায় ছিল না। সেই তালিকা ধরে বিচার করলে এদের বিচারই হওয়ার কথা নয়।
তবে, তারপরও একটা স্বস্তি আছে। আমরা এতদিন এ কথাগুলো যখন বলেছি, তখন অনেকে বিশ্বাস করেছেন, আবার অনেকে এমনও বলেছেন, আপনারা তো এমন বলবেনই। তবে, সরকারের এই তালিকা প্রকাশ করার ফলে নতুন করে আমাদের দাবির যথার্থতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বাড়লো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন