মিনার রশিদ
প্রফেসর আলী রিয়াজের সঙ্গে জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র দুদিন আগে কী ঘটনা ঘটেছিল তা কম বেশি সবাই জেনে গেছেন । কেউ কেউ বলেছেন , ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে ।
জনাব রিয়াজ তার সদ্য প্রকাশিত ‘ভোটিং ইন হাইব্রিড রিজিম, এক্সপ্লেইনিং দ্য ২০১৮ বাংলাদেশি ইলেকশন' বই এর ওপর বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্য শেষ হতেই কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আয়োজকরা অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন।
ঘটনার পর অধ্যাপক আলী রিয়াজ নিজের ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ইংরেজীতে লেখা মাত্র ১০৭ পৃষ্ঠার একটা বই নিয়ে একটা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনার ও আমন্ত্রিত লেখকের প্রশ্ন-উত্তর অনুষ্ঠানে দল বেধে এসে ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে, উদ্যোক্তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে বলছেন যে ‘দেশে গণতন্ত্র আছে, ভিন্নমত প্রকাশ করার স্বাধীনতা আছে'৷ অনেক লেখালেখি করেও এতো সহজে বোঝানো যেত না কী আছে আর কী নেই’।
জনাব রিয়াজের সেই কথাকে সত্য প্রমাণের জন্যে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হলো না । দুদিনের মধ্যেই দেশ থেকে সোনার ছেলেরা সেই নমুনা দেখিয়ে দিয়েছে । নমুনা ভিডিওটি মন্তব্য কলামে দেয়া আছে ।
উল্লেখ্য , দৈনিক সংগ্রাম আব্দুল কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করে একটি সংবাদ ছাপিয়েছে । তিনি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা এবং পত্রিকাটি সেই দলের মুখপত্র । পত্রিকাটি তাদের নিজেদের আদর্শের কথাই বলবে ।
তাদের বিশ্বাস থেকেই তারা সেই শব্দটি ব্যবহার করেছে । সেই বিশ্বাসে ইহকালীন ভাবনা থেকে পরকালীন ভাবনাই বেশি প্রতিফলিত । এই শহীদ শব্দটি নিয়ে যাদেরকে বেশি সোচ্চার হতে দেখা গেছে তাদের অনেকেই পরকাল এবং শাহাদত নামের পুরো প্যাকেজটিতেই বিশ্বাস করেন না । বিশেষ করে এই ‘শহীদ’ শব্দটি নিয়ে
অঞ্জন রায় নামীয় অনেকের অতি উৎসাহ নেটিজেন জগতে দারুন কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে । আরো মজার ব্যাপার হলো আল্লাহ , কোরআন , আখেরাত নিয়ে শতভাগ অবিশ্বাসী আরিফ জেবতিকরাও এই অঞ্জন রায়দের দলে যোগ দিয়েছেন ।
অঞ্জন রায় এবং আরিফ জেবতিক গ্রুপ অব কোম্পানী কর্তৃক
আব্দুল কাদের মোল্লার জন্যে এই পরিভাষাটি ব্যবহার নাজায়েজ ঘোষণার আগে গত ছয় বছর যাবত দৈনিক সংগ্রাম এই কাজটি করে এসেছে । এত দিনে এই মুন্সীরা নিজেদের লাঠিয়াল বাহিনীর চোখগুলো খুলে দিয়েছে।
কে আল্লাহর কাছে শহীদ বলে বিবেচিত হবেন আর কে হবেন না - অঞ্জন রায়, আরিফ জেবতিক এবং সমগোত্রীয়দের কাছে এই হিসাব ও ভাবনা অনর্থক ।
তারপরেও এই শব্দ চয়ন ভুল বা অন্যায় হলে সেই কথা বলার মত টিভি চ্যানেল কিংবা লেখার মত সংবাদ পত্র তাদের হাতে প্রচুর ছিল ।
সেটি না করে এমন কিছিমে একজন সিনিয়র সম্পাদককে হিউমিলিয়েট করা , তাকে আঙুল উচিয়ে চিৎকার করে
ক্ষমা চাওয়ানো , পত্রিকা অফিস ভাঙচুর সকল মুক্ত বিবেককে স্তব্ধ করে দিয়েছে !!!
এই আক্রমণের পর দেশের অপরাপর গণমাধ্যম ও ব্যক্তিত্বগণ
আশ্চর্যজনক নীরবতা পালন করে যাচ্ছেন ! টিভি মিডিয়ার গ্ল্যামারাস আপুরা এই অ-গ্ল্যামারাস ব্যাপারটি নিয়ে কোন টকশো বা কোনো আলোচনা করবেন না , সেটিই প্রত্যাশিত । যে মুন্নী সাহারা মানুষের
তাৎক্ষণিক
প্রতিক্রিয়া জানার জন্যে পারলে মানুষের কবরে ঢুকে পড়েন , বিপন্ন এই বাক স্বাধীনতা নিয়ে জনগণের প্রতিক্রিয়া জানা বা জানানোর সামান্য তাগিদ
দেখা যাচ্ছে না ।
নূরুল হক নূরুর ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নিয়ে এই আপুরা কেমন উচ্ছসিত ছিলেন এদেশের দর্শকরা তা দেখেছেন ।
ভিপি নূরুর জনৈকা আত্মীয়ার ব্যাংক গ্যারান্টির মত একটি নেহায়েত মামুলি / স্বাভাবিক বিষয় নিয়ে এই আপুরা যেভাবে নুরুর উপর ঝাপিয়ে পড়লেন তাতে ভয় পেয়ে গেলাম যে ইনারা আর্কিমিডিসের মত ইউরেকা ইউরেকা বলে দৌড় মারেন কি না ।
“ আমি তোমার সাথে ভিন্নমত পোষণ করতে পারি কিন্তু সেই মত প্রকাশের স্বাধীনতার
জন্যে প্রয়োজনে আমি নিজের জীবন উৎসর্গ করতে রাজি আছি ।” গণতন্ত্রের এই আপ্ত বাক্যগুলি এই আপুদের সুসজ্জিত/সুবিন্যশিত কেশের ভেতরের মগজে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে না । তেমনি এক সম্পাদকের এই করুণ পরিস্থিতিতে অন্য বাঘা বাঘা সম্পাদকরাও এগিয়ে আসবেন না এটা নিশ্চিত । ইনারা একটি সম্পাদক পরিষদ গঠণ করেছিলেন । সেখান থেকে এখনো সামান্য বিবৃতিও আসে নি । তাদের টিকিটিও এখন দেখা যাচ্ছে না ।
সত্যিই ভীষণ বিপদে দেশ , আপদে গণমাধ্যম ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন